হয়তোবা
- মৃণাল কানতি দাস - সওদাপাতি ১৯-০৫-২০২৪

হয়তো একদিন
গিন্নীর হাত থেকে কড়াই,মসলা এবং সরঞ্জামাদি নিয়ে
রান্না করে নেব এমন এক সুস্বাদু তরকারি
খেয়ে,সকলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে বলবে,আহা!
খেলাম বড় আনন্দে,সানন্দে কেমন করে পারো
তুমি,কবিতা বাঁধতে এবং সমান দক্ষতায় তরকারি রাঁধতে?

হরেন বাবু গানের মাষ্টার।
আমার মেয়েটিকে,মৃন্ময়ী নাম,রোজ শুক্রবার হারমনিয়াম
বাজানো শিখাতে আসেন কিম্বা শিখতে নিয়ম মেনেই,কি কারনে যেন
একদিন দৈবাৎ আসতে পারেননি,অসুবিধেই হবে
একা একা মেয়েটির সুর মিলছে না,বাদ্যধ্বনির সাথে
আমার তেমন সংযোগ নেই সুরে,তবু বসে যাবো সাথে
হারমনিয়াম নিয়ে, বেশ চললো বাপ বেটীর সঙ্গীতে
সুর ও লয়ের মেলবন্ধন,চিনিয়ে দিলাম, ভালোইতো-
চড়ো তুমি কেমনে, সঙ্গীতের রন্ধ্রে এবং কবিতার ছন্দে স্বকীয়
আনন্দে,গিন্নীর উৎফুল্ল প্রশংসা,হয়তো একদিন।

হয়তো একদিন আহসান ভাই,
বাংলার কবিতা প্রকাশনের প্রকাশক,হন্য হয়ে
আমাকে, ফোনের ও প্রান্তে উত্তেজিত স্বর, বলবেন কই
ধুম করে হারিয়ে যাও?খবর রেখেছো কিছু,বইয়ের
বাজারতো দারুন লুপে নিচ্ছে,নতুন মুদ্রণ চায় লাইব্রেরী
কেবল তোমার বই খোঁজে প্রজন্ম, অস্তির
আমি, স্বস্তিবাচন দিয়ে বলি, আহসান ভাই
সে আপনার যা ইচ্ছে হয়, করুন,আমি কি জানি
আমি তো লেখছি শুধু,বিকছি না কদাপি...
হয়তো একদিন।

নাজমুল ভাই,"ভালো থাকা হয় যেন" হাঁসমার্কা
গন্ধরাজ নারিকেল তেল থেকে হৃদ্য স্বরে
আবৃতি করে যাবেন আমার সদ্য ভূমিষ্ট কবিতা
শুনে হেড স্যার,হেড ফোন খুলে বলবেন,কি করে
কবিতার লাইনে,তোর গোষ্টিতে কাউকে তো পাইনে।
হয়তো একদিন।

পাড়ার যতীন বাবুর সবচে সুন্দরী মেয়েটা
মনে মনে সতীন ভেবে আমার বউকে,রাতভর
অবিশাপ দিতে দিতে অবিলাশে,জেগে থাকবে
আমার পূর্বের প্রেমীকা,স্বামীর ঘুমন্ত লাশ
পাশে থেকে,আমার মগজের মৃত্যু চাইবে
কিম্বা পূনর্জন্ম চাইবে,হয়তোবা।

আজাদ,হালকা শরীরের লিকলিকে ছেলেটা
কবিতা কিন্তু স্বাস্থ্যকর,নাদুস নুদুস লিখে
আমার ঠিকানায়, চলে আসবে স্বয়ং চমকে দিয়ে
বলবে,তুমি দাদা পারো বটে,হাওর ঘাটে বসে
কি করে ,নিজেকে এবং জেনিকে মাতিয়ে দিতে,
আপন কবিত্বের ধারে বিঁধতে এবং বাঁধাতে
প্রকাশন থেকে প্রশাসন এক সাথে,উচ্চারণ করে।
হয়তোবা।

মৃন্ময়ী আমার মেয়েটি, নিজের মত করে,গড়গড় করে পড়ে চলে
কবু ভাবি, মাছ হয়ে কাঁটিবো সাঁতার,
কবু ভাবি, ঘোড়া হয়ে ছোটি দুর্বার।
কবু ভাবি পাখি হয়ে উড়িবো গগনে
জানি কবু হবেনা তা ভাবি যাহা মনে।

বর্ণালী,অামার বউ,ধমক দিয়ে বলে, ঘরে কেরোসিন নেই
জানোইতো,সন্ধ্যে বেলা শুতে থাকলে,বাতি জ্বলবে না রাতে, বলেছিলাম বারবার মনে নেই?

অক্ষম লজ্জায়,আমি তাকে বলতে পারিনা
আমার স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্নের ভেতর ক্রমেই প্রকট হচ্ছে
কেরোসিনের অভাবে নিভে যাওয়া মশাল মিছিল ।



১০/০৯/১৬

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।