নগরায়ন
- শেখ ফরহাদ হোসেন ১৯-০৫-২০২৪

চোখ খুলেই দেখলাম একচিলতে আলো
জানালার পর্দা চুয়ে কোনমতে ঘর আলোকিত করছে।
মোবাইলের স্কিনে তাকালাম সাড়ে ছ'টা বাজে।
নিতান্ত অবহেলায় জানালার দিকে তাকালাম।
এই জানালার আড়াই ফুট দূরত্বে আরেকটা দেয়াল।
দেয়ালের ওপারে জীবন।
দু'বছর আগে এই জানালায় দাড়িয়ে ভোরের সূর্য দেখতাম।
কুসুম বর্নের সূর্যটা প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙ্গাতো।
সকালের দুষণমুক্ত বাতাসটা বিনামূল্যে পেয়ে যেতাম ঘরে বসে।
ধীরে ধীরে দালানটা বেড়ে উঠতে থাকলো
আমিও রুম পরিবর্তন করে উপরে উঠতে থাকলাম।
একদিন এ বাড়ির চিলেকোঁঠা ছাড়িয়ে গলা বাড়িয়ে দিলো দালানটা।
এরপর কিছুদিন নিয়মিত ছাঁদে যেতাম।
সেই পথটাও বন্ধ করে দিলো বাড়িওয়ালা।
জগতের সব অপকর্মের দাবিদার অবিবাহিত ছেলেরা।
এই অবিবাহিত ছেলে গুলোই একদিন দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলো।
রাজ পথে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই অবিবাহিত ছেলেরা সবার আগে ঝাপিয়ে পড়ে।
এখনো জাতির রক্তের দাবী অবিবাহিত ছেলেদের হাতেই বেশি।
স্বাধীন দেশের স্বাধীন সূর্য দেখার সৌভাগ্য তবু অবিবাহিত ছেলেটার নেই।
দেয়ালের ওপারের শব্দ শোনা যায় না
ঐ দালানটার এমুখো কোন জানালাও নেই।
খুব জানতে ইচ্ছে করে ওরা কি সূর্যটা দেখতে পায়!
ভোরের সূর্যের রংটা কি আগের মতোই আছে?
কোমল রোদটা কি এখনো ঘুমের ক্লান্তি দূর করতে পারে?
প্রশ্নগুলো প্রশ্নই থেকে গেলো।
শুনেছি ঐদালানের পূর্ব দিকে আরেকটা দালান নির্মাণ হচ্ছে।
ঐ দালানের বাসিন্দাদের কাছ থেকেও সূর্যটা চুরি হয়ে যাবে।
হায় নগরায়ন!
ঘর থেকে বেরুলেই ঘামের গন্ধ।
রাস্তায় বাস, অটো, প্রাইভেট কার, সিএনজি, রিক্সার চাকার ঘর্ষনে পতঙ্গের মতো স্বাধীন ধুলো উড়ছে।
কেবল মানুষের ধুলোর সমান স্বাধীনতাও নেই।
মোড়ে মোড়ে সূর্যের উত্তাপে আবর্জনার বোটকা গন্ধ।
ঠেলা ওয়ালার দেহ যুদ্ধ ঘোষনা করেছে পিচঢালা পথের সাথে।
মানবের দেহ থেকে লহিত কণিকা শুষে নিয়ে শেষ বিকেলের রক্তিম সূর্যটা লজ্জায় বিশাল অট্টালিকার আড়ালে মুখ লুকায়।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।