বুড়ী
- আমিনুল ইসলাম ১৮-০৫-২০২৪

"বুড়ী"
--আমিনুল ইসলাম
.
বুড়ী,
আমার মৃত্যুর ক্ষণিক বাদেই আচমকা খেয়াল হলো শেষ বিদায়ে তোর কপালে চুমু খাওয়া হয়নি!
তোকে দুই বিড়া পান কিনে দেওয়া হয়নি;
বাঁশের কঞ্চি কেটে চল্লিশটা খিলাল
বানিয়ে দেওয়া হয়নি!
পোদ্দারের দোকান থেকে তোর নাকের নথটাও ঘরে আনা হয়নি!
.
সেই সাতষট্টি বছর আগে তোর সাথে সংসার পেতেছি,
এর মধ্যে কতশত বার তোকে অপেক্ষায় রেখে গঙ্গার হাটে গিয়েছি,
ইচ্ছে হলেই নাতিপুতির পথ ধরেছি,
তাবলীগের বিছানাপত্তর বগলে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছি দুরের কোন গাঁয়ে।
মনে করে দেখতো বুড়ী,
কোন্ বিদায়ে তোর কপালে চুমু পড়েনি?
তোর ছোটখাটো আবদার অপূর্ণ রেখে আমি কোন্ বার বিদায় নিয়েছি বল?
মৃত্যুর আগে তোর বুড়োটা এতো ভুলোমনা হয়ে যাবে কে জানতো?
.
বুড়ী,
খুব মান করেছিস, তাইনা?
বুড়ো বয়সে এভাবে গাল ফুলিয়ে
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেউ কাঁদে?
তোর থেকে কত কোটি মাইল দূরে আমি,
ইচ্ছে হলেই কি গাল
ফোলানো মিষ্টি বুড়ীটার প্রেমে পড়তে পারবো আবার?
ইচ্ছে হলেই কি তোর বোঁচা নাকের ডগায় হ্যাঁচকা টান দিয়ে আরেকটু রাগিয়ে দিতে পারবো তোকে?
এই বুড়ী! তোর নাকফুল কই?
হাতে দেখি চুড়িও পড়িসনি,
পায়ের গলায় গঙ্গার হাট থেকে কিনে
আনা আমার নূপুর জোড়াও দেখছিনা!
এইতো অল্প ক'দিন হলো আমি দূরবাসী হলাম আর এর মধ্যেই এতো অনিয়ম?
তোকে কতবার বলেছি জোনাকিদের দুপুর গড়ালেই তুই আমার সেই লক্ষ্মী সোনা বুড়ী হয়ে ঘুমাতি যাবি,
আমি প্রতিরাতে এক বৈয়াম জোনাকি নিয়ে তোকে দেখতে আসবো!
সেই কিশোরী বয়সে এক বৈয়াম জোনাক পোকার বায়না ধরেছিলি,
এরপর কতবার তোর খোঁপায় জোনাক বাতি গেঁথে দিয়েছি কিন্তু আজ অব্দি জোনাক দিয়ে বৈয়াম ভরা হয়নি!
ভুলে গেছিস সব?
ভুলে যাওয়ারই কথা,
তোর বয়সও তো কম হয়নি,
শিরদাঁড়াতে বাঁক পড়েছে সেই কবে,ভরের লাঠি ছাড়া এক-দু পা এগুতে পাড়িস না,
মেহেদি লাগানো সোনালি চুলগুলোও
শেষের পথ ধরেছে!
বাম গালের সেই মিষ্টি তিলটা চামড়ার ভাজে ধেবে যাওয়ার অপেক্ষায়!
এই অবস্থায় তোকে একা ফেলে চলে
এসে বড্ড অন্যায় করে ফেলেছি রে।
.
বুড়ী,
আমাকে শুকনো মুখেই বিদায় দিবি?
গত সত্তর বছরে হাজার বার অভিমানে গাল ফুলেছে তোর!
তোর মান ভাঙাতে এসে আজ অব্দি একবারও পরাজিত হয়েছি বল?
বরং তোর নাক ফোলা আহ্লাদে
হাসিটার জন্যেই আমি তোর অভিমানের কারণ হতাম!
রাতে মুখে কিছু দেসনি, তাইনা বুড়ী?
ইনহেলারটাও অযত্নে পড়ে আছে,
তুইতো জানিস, তোর শ্বাসকষ্ট হলে আমার হৃদপিন্ড খসে পড়তে চায়,
তবুও কেন নিজেকে একটু যত্নে রাখিস না?
আসার সময় দেখলাম কলপাড়টা শেওলায় স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে,
তোর ওজুর বদনাটা ভরে দেওয়ার জন্য হলেও রোজ পাঁচবেলা তোর বারান্দায় ছুটে আসতে মন চায়!
.
আমি অনেক ভাল আছি বুড়ী।
এখানে তুই ছাড়া সবই আছে,
ইচ্ছে হলেই গাইতে পারি,নাইতে পারি,
পাখির মতন উড়তেও পারি!
এখানে চোখ বুজলেই অমৃতের স্বাদ পাওয়া যায়!
তবে আমি সবই তোর জন্য আগলে রেখেছি,তুই সময়মত চলে আসিস,
আমি একশো বিড়া পান নিয়ে তোর অপেক্ষায় থাকবো!
.
শনিবার, ২৭-০৮-২০১৬
কলেজ মসজিদ রোড,ময়মনসিংহ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।