আপনি ছুঁয়ে দিলেন অত:পর...
- আমিনুল ইসলাম ১৮-০৫-২০২৪

আপনি ছুঁয়ে দিলেন অত:পর. ...
--আমিনুল ইসলাম
.
তখন আমি একটা তৃষাতুর দাঁড়কাক;
আমার পৃথিবীতে কোন জল নেই,
পথ-ঘাট, মাঠ ফেটে চৌচির, নদীর বুক ছিঁড়ে বয়ে গেছে দুর্ভিক্ষের মানচিত্র!
দেবদারু মরে গ্যাছে বহুকাল আগে।
চারপাশ হাহাকার,আকাশের পেট ছিঁড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে ক্ষুধার্ত শকুন!
আমি জারুলের ডালে বসে রোদের অভিশাপে পুড়ে যাচ্ছি।
.
হঠাৎ আপনি চৈত্রিক মেঘ হয়ে আমায় ভাসিয়ে নিলেন।
আমার পৃথিবীতে শ্রাবণ এলো,
নক্ষত্রের রাত এলো।
আমার হৃদপিন্ড আপনাকে লিখে দিলাম,
যকৃতে এঁকে নিলাম আপনার চাঁদমুখ।
আপনি ছুঁয়ে দিলেন বলেই অভিশপ্ত থেকে আজ আমি আপনার প্রেমিক!
.
আমি তখন এক উদাসীন যুবক;
রাস্তার কংক্রিটের মতোই বেখেয়ালি।
সবেমাত্র একটা যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে আধমরা হয়ে গ্যাছি,
চোখেমুখে রাজ্যের শোক,
প্রশ্নফাঁসের আন্দোলনে রাজপথ কাঁপানো সৈনিক;
নিজেকে মনে হয় একটা বিশাল ধ্বংসস্তূপ!
আরব বেদুঈনদের মতো ঘরহীন আমি।
.
তখনি আপনি আমার কাঁধে ভরসার হাত রাখলেন,
আপনার দু'চোখ উপচে পড়া ঢেউ!
আঁধারে ছিটকে পড়া আমি আলোর জলরাশির সন্ধান পেলাম,
আপনি ছুঁয়ে দেওয়ার পর থেকেই আমি আঁধারে বিকর্ষীত হই!
আমার উঠোন ভরা ভালবাসা, শালিকের ঝাঁক, পৌষের রোদ সব আপনার জন্যই।
.
তখন আমি একজন বদ্ধ মাতাল,উন্মাদ;
রোজ তিনবেলা এলকোহলের বোতলে
নিজের প্রতিবিম্ব আঁকি।
অমাবস্যার ধর্ষিত চাঁদের মতন ডুব গ্যাছি আঁধারের পেটে।
আমার নেশাতুর চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি নামে,
নিকোটিনের দখলে চলে গ্যাছে ফুসফুসের ঘরদোর, পরিপাকতন্ত্র তখন দৈনিক দু'বেলা
ছুটি কাটায়!
.
আপনি গাঙচিলের মতন ছুঁ মেরে নিয়ে গেলেন আমাকে!
একটা পৃথিবী উপহার দিলেন।
বেগুনী রঙের ছোট্ট একটা পৃথিবী!
এখানে এলকোহলের গন্ধ নেই, নিকোটিনের ধোঁয়া নেই।
এখানে আমি কবি,আপনি কবিতার মা।
এখানে আমি শব্দ শ্রমিক, একজন বর্গাচাষি!
আপনার পবিত্র মুখ, নাকফোলা হাসি,
বাদামি তিল, আহ্লাদে স্বর,
চোখের পাতা আমার আমার শস্যক্ষেত্র!
সন্ধ্যাবালা, আপনি ছুঁয়ে দিলেন বলেই আজ আমি একজন কবি,একজন প্রেমিক, একজন মানুষ।
হিংস্র কেউ নয়!

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।