আমার মেয়ে (ছোট গল্প)
- আমিনুল ইসলাম ১৮-০৫-২০২৪

"আঙ্কেল আঙ্কেল তুমি এখানে বসো!" নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি পরীর মতো একটা পিচ্চি মেয়ে আমার হাত ধরে টানছে!
জয়নুল আবেদীন পার্কের বৈশাখী মঞ্চে কনসার্ট হচ্ছে।দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই।মাঠে বেশকিছু চেয়ার পাতা।চারপাশে মানুষের ঢল!এত ভিড়ের মধ্যে এতো সহজে বসার জায়গা পেয়ে যাব তা কল্পনাতীত ছিল।
আমি টুপ করে চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। পিচ্চি টা আমার কোলে বসলো। পাশের চেয়ারেই ওর মা।আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভদ্রতার হাসি দিলাম! মঞ্চে ধুম তাড়াক্কা গান বাজছে। সবার চোখ লাল-নীল আলোর মঞ্চের দিকে।কয়েকজন বাবরী চুলওয়ালা মানুষ মৃগী রুগীর মতো লাফাচ্ছে,একজন আরেকজনকে ব্যাঙ্গাচ্ছে,চিৎকার করছে!
উৎসুক জনতা বারবার হাততালি দিচ্ছে।
.
আমার পুরোটা মনোযোগ এই পিচ্চি পরীটার দিকে আটকে গেছে! দুদিক বেণী করা কুচকুচে কালো চুল।পুরো মাথায় রঙবেরঙের ব্যান্ট, ক্লিপ ছড়িয়ে আছে। লালচে-ফর্সা ত্বক।মনে হলো চামড়ায় ছুপছুপ রক্ত জমাট বেঁধে আছে!স্বাভাবিকের চেয়ে গাল দুটা একটু বেশিই ফোলা! ডান গালে পতপত করে লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে! সাদা গোল মরিচের মতো মিষ্টি নাকটা এই শীতের মাঝেও ঘেমে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে!
চোখেরপাতা ভারী, ঘন কালো।কিঞ্চিত কাজল পড়েছে বোধহয়!কপালে তিলের মত ছোট একফোঁটা টিপ।
ও মঞ্চের দিকে নিষ্পাপ হয়ে তাকিয়ে আছে।একজন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ তাকে কোলে নিয়ে বসে আছে এ নিয়ে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই। একটু পরপর ও যখন মিটমিট চোখের পাতা ফেলে তখন মনের অজান্তেই ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে "সুবহানআল্লাহ" বেরিয়ে আসে!
.
আমি একটা জীবন্ত পুতুলকে কোলে নিয়ে বসে আছি। ওর কাঁধে মুখ রেখে ওর শ্বাসপ্রশ্বাসের সংখ্যা গুনছি! হাতের ছোটছোট আঙুলগুলা ফুটিয়ে দিচ্চি।
এমন গানবাজনা, হট্টগোলের মাঝেও আমার অনুভূতিটা অনেক বেশি পবিত্র। আমি মুখে হাসি ধরে পিচ্চিকে জিজ্ঞেস করলাম "আম্মু তোমার নাম কি?"
ও লজ্জামাখা হাসি দিয়ে ছোট্ট করে উত্তর দিলো "তুশি"!
-কোন ক্লাসে পড়ো?
--নার্সারি তে।
আমি তুশিকে গাল টেনে আদর করে দিলাম।হকারের ঝোলা থেকে চিপস কিনে খাইয়ে দিলাম।মাথার ক্লিপ খোলে বেণীতে গেঁথে দিলাম।
ওর মা ভদ্রতা দেখাতে গিয়ে বারবার তুশিকে কোলে নিতে চাচ্ছে কিন্তু ও যাবেনা! পার্কে আসার আগে আমার প্রচণ্ড মন খারাপ ছিল।এই পুতুলটা কোলে বসার সাথে সাথেই মন ভাল হয়ে গিয়েছিলো। এখন যখন পুতুলটা আমাকে আপন করে নিলো তখন আর ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছেনা।একটা অদ্ভুত রকমের মায়া জন্মে গেছে! মনে হচ্ছে তুশি আমার মেয়ে,এইযে মাথার দুপাশে বেণী করা তা আমি করে দিয়েছি। আমিই চুলে ক্লিপ গেঁথে দিয়েছি, চোখে কাজল মেখে আমিই সাজিয়ে দিয়েছি! এইযে গায়ে কাঁচা হলদ রঙের জামা,গোলাপি জ্যাকেট এইসব আমার গত মাসের বেতনের টাকা দিয়ে কেনা!পায়ের মখমলে জুতা জোড়া গত কোরবানির ঈদের কেনা! নতুন জুতো পেয়ে ও আমার নাকে মুখে গালে পাঁচটা চুমু খেয়েছিল! আজ ওর আবদার রক্ষা করতেই ওকে নিয়ে পার্কে এসেছি।মাগরিবের নামাজ মিস হয়ে যাবে বলে ওর আম্মু আসেনি।
.
ভাবতে ভাবতে কখন যে তুশিকে বুকের সাথে চেপে ধরেছিলাম খেয়ালই করিনি।হঠাৎ একটা শক্ত হাতের স্পর্শ পেলাম! একটা মোটা করে কালো লোক বলছেন "ভাই আমার মেয়েকে দেন।আমরা চলে যাব!"
আমি অবাক হলাম।একি বলে লোকটা!!উনার মেয়ে মানে? আমার মেয়েকে উনার মেয়ে বলে দাবী করছেন।আমি আরও শক্ত করে চেপে ধরলাম। পাশের ভদ্র মহিলাটি হাসছেন।আমার মুখটা শুকনো হয়ে গেলো।আমি যথাসম্ভব ঠোঁটে হাসি টানার চেষ্টা করে একজন অপরিচিত মহিলার হাতে আমার মেয়েটা তুলে দিলাম!আমার মেয়েটা ভীরের মাঝে হারিয়ে গেলো। আমি মাথা নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় চলে এলাম!
.
ছোট গল্প : আমার মেয়ে
(১০০% সত্যি)
--আমিনুল ইসলাম
জয়নুল আবেদীন পার্ক,ময়মনসিংহ।
তাং 01-01-17
সময়: 5:35 pm
.
আজকাল সবাই নাকি ছেলে সন্তান আশা করে। প্রথম সন্তান মেয়ে হলে অনেক বাবা মায়ের মুখ বেলুনের মতো চুপসে যায়!
আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করবো আমার ছোট্ট জান্নাতে প্রথমে মেয়েই আসুক! এরপর মেয়ে আসলেও আলহামদুলিল্লাহ্‌। মেয়েরা ঘরের শোভা। ফুলদানির মতো,পুতুলের মতো সাজিয়ে রাখা যায়,চুলে ফিতে বেঁধে দেয়া যায়,পরীর মতো করে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া যায়। আর তিনটা মেয়ে হলে ত জান্নাত ই পাওয়া যায় :)

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।