রাসু
- কবির মুক্তাদির ১৯-০৫-২০২৪

রাসু আমার বাল্যসখা,
আমার ইয়ারের দোস্ত,
আমার ভাই বেরাদর।

আমার চে' বছর চারেকের বড় সে,
কিন্তু মতি গতিতে আমার সমান,
আর আমোদ ফূর্তিতে আমি ও সে অভিন্ন।

বছর আটেক হলো রাসুর সাথে
দু দন্ড ভালো করে কথা বলতে পারি নি,
এতো দীর্ঘ অথচ এতো দ্রুততর সময়ে
আমি ওকে বলার সুযোগ পাই নি,
"রাসু,তুই কেমন আছিস?
তোর কী খবর সবর?"
সেও এতোদিন আমাকে জিজ্ঞেস করে নি,
"আনিস,তুই কেমন আছিস?
কেমন তোর খবর সমাচার?"

ওকে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করা
উচিত ছিল আমার,
ওরও উচিত ছিল
আমার ভালো-মন্দ সম্পর্কে
খোঁজ খবর নেয়া।

অথচ সারাটা বাল্যকাল
আমরা একসাথে কাটিয়েছি,
আমের কঁচি চারা থেকে ডাল সরিয়ে
আটির কাঁচা শাঁস ইটে ঘঁষে ঘঁষে
কতোদিন দুজনে পাকুড় তলায় বসে
মোটা সুরের ভেঁপু বাজিয়েছি।
জৈষ্ঠ মাসে মাঠে গরু চরাতে গিয়ে
হাসু-আমি আর অন্য ছেলেরা মিলে
রুদ্ধশ্বাসে কতো দুপুর বিকালে
খেলেছি আগুন তারার খেলা।

মারুতি বল কেনার টাকা ছিল না আমাদের,
টেনিস বলও কিনতে পারি নি যখন তখন,
দুজনের জমানো টাকা দিয়ে কেনা
ডিউজ বলে দিনমান ক্রিকেট খেলেছি
বানানো কাঠের ব্যাট দিয়ে,
হাসু যাচ্ছেতাই ছক্কা পিটাতো
আর ডিউজ বল হয়ে যেত লাপাত্তা,
তবু ক্রিকেট সরে যায় নি
আমাদের কাছ থেকে,
বড়দের ফাঁটা মারুতি কিংবা
কখনো সখনো বাঁশের মুঁড়ো দিয়ে
গোল করে বানানো তথাস্তুু কাঠের বলে
আচ্ছামতন চার ছয় পিটিয়েছি দুজনে।

পলিথিনের কাগজ দলা পাকিয়ে
আমরা কতো বল বানিয়েছি!
বোম বাস্টিং খেলেছি,
ফুটবল খেলেছি।

অনেক ফূর্তি পান্টি খেলেছি আমরা,
চারপ্যাঁত ছয়প্যাঁত আটপ্যাঁত খেলেছি,
বাঘ বকরির প্যাঁতে ওকে
আটকাতে পারি নি কোনদিন,
সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে তাস বানিয়ে
কতোদিন কড়ি খেলেছি দুজনে,
পুকুরে সাঁতরাতে নেমে বোলহরি খেলেছি,
গুটি খেলায়ও ওকে হারাতে পারি নি কখনো,
আর গাদল খেলায় ওর হাতের তল দিয়ে
বের হয় এমন সাধ্য ছিল কার!

সেই রাসুর সাথে এখন দেখা হয় না,
বছরে দু একবারের দেখায়
কথাও হয় না তেমন,
দেখা হলে সে হয়তো জিজ্ঞেস করে,
"কবে এসছিস?"
আমি ফেরার সময় হয়তো ওকে বলি,
"থাক্,চলে যাচ্ছি।"
ব্যস!এটুকুই!

তাহলে ওর সাথে দিল খোলা হয়ে
দু চারটা ভালো-মন্দ কথা বলব কবে?
ওর সাথে কি নরকের গর্তে বসে
হুকায় লম্বা টান দিয়ে
নুন তেলের কথা পাড়ব?
সে তেজ থাকবে তো!
নাকি সগ্গের আরাম কেদারায় আধশোয়া হয়ে
এক পাশে হুরপরীকে
আরেক পাশে রাসুকে বসিয়ে
ওর সাথে খোঁশগল্পে মশগুল হব?
সে খেয়াল থাকবে তো!

ওর জন্য যে এই শেষ রাতে
মাথার ভিতর অসংখ্য শুয়োপোকা
কটকট করে কাঠ কেটে যাচ্ছে-
তা কি ওকে কখনো জানাব না?

২৫/০৭/১৬

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।