এক মুঠো শৈশব
- মুহাম্মদ তানজিন সাফায়েত ওরফে মো. তানজিন সরকার ২০-০৫-২০২৪

আমাদের ঘুম ভাঙতো তখন পাখির ডাকে
সূর্যমামা উঠি উঠি ভাব নিয়ে যখন উঠে;
কচি হাতে কালো ছাইয়ের মাজন নিয়ে
হাটতে হাটতে যেতাম মক্তবের পাশে গাঙে
অজু শেষে হৈ চৈ রবে আরবি পড়া
ছুটি শেষে আনন্দ যেন মহাদেশ জয় করা।

কখনো বাবার কাধে চড়ে চক বাজারে যাওয়া
মুড়ির মোয়া, চা বিস্কুট আরো কত কী খাওয়া।
মায়ের হাতে রাধা সদ্য গরম ভাতের স্বাদ,
সাথে লজেন্স আইস্ক্রিমের দুই টাকা আবদার;
কাঁধে-কাখে বই লয়ে দল বেঁধে স্কুলের পথে
কত হাসাহাসি আর কত কথা তার সাথে!

দুপুর গড়ালেই দলে দলে অবগাহন,
মায়ের মিষ্টি বকুনি আর সামান্য বারণ।
আমাদের শৈশবে বিকেল আসত স্বর্গের থেকে
গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা আর বৌ-ছির সাথে।
আমাদের শৈশবে সন্ধ্যা নামতো স্নিগ্ধতা নিয়ে,
কিছু পড়ালেখা হত ভাইবোন সবে মিলে,
মাঝে তার উনুনে পোড়া মিষ্টি আলু খাওয়া,
পাখির ছানার মত মায়ের কোলে নিদ্রা যাওয়া।

আমাদের শৈশব ছিল ষড় ঋতুর মত রঙিন,
ছোট মাছ ধরি, ধরি শালিকের ঘাস ফড়িং।
বর্ষায় ভেলায় চড়া, ঢেউয়ের উপর ঝাপাঝাপি
দলবেধে কত শত খেলা আর ডুবাডুবি।
আমাদের গ্রীষ্ম আসত পাকা ধানের আনন্দে,
ঝরের মাঝে আম কুড়ানো, আরো কত রঙ্গে।
বৈশাখের চাঁদনী রাতে, খড়ের গাদায় বসে
বাহারি কত খেলায় থাকতাম আমরা মেতে।
শিশির স্নাত, কুয়াশার চাদরে ঘেরা,
আমাদের এক মুঠো শীতের শৈশব,
সুযোগ পেলে, খালেবিলে কাদায় লেটেপুটে,
মাছ ধরতাম সবে মিলে কতনা উল্লাসে!

কখনো মিলে মিশে চড়ুই ভাতি রন্ধন,
কৃষকের সাথে আলে বসে মধ্যাহ্ন ভোজন।
শৈশব আসে বাঁশের সাকুর ভয় দিধা দ্বন্দ্বে,
কখনো চাদের বুড়ির কাটা সুতোর মুকুটে,
পৃথিবী রাজত্বের অনাবিল আনন্দে।
মায়া মাখা, যতনে তুলে রাখা স্মৃতি সব,
স্বর্গ সুখের আনন্দে কাটত আমাদের শৈশব,
‎মমতায় ভরা এক মুঠো শৈশব।

আনন্দপল্লী মেস, সিলেট।
১৬/০২/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 2টি মন্তব্য এসেছে।

artlesstanzim
০৬-০১-২০১৯ ২২:৫১ মিঃ

অনেক ধন্যবাদ মোঃ ইসরাইল হোসেন ভাই। দোয়া করবেন।

israil_hossain
০৪-০১-২০১৯ ১৭:২৪ মিঃ

আমি হারিয়ে গেছিলাম আমার শৈশবে। শৈশবের মনে হয় আলাদা কোন রঙ হয় না। তোমার, আমার, আমাদের সকলের শৈশব বুঝি একই সুতোয় বাধা। ভালো থাকুন কবি।