আমি এ নগরীর কেউ নই
- কবির মুক্তাদির ১৯-০৫-২০২৪

আমি এ নগরীর কেউ নই,
তবু এ নগর আমাকে
তার পেটের ভিতর পুরে রেখেছে
দ্বিধাহীনভাবে,
এবং দ্ব্যর্থহীন ঔদাসীন্যে
(জানি স্নেহের ধার সে ধারে না);
যেমন করে সে তার জরায়ুতে
লালন করে চলছে
শত শতাব্দীর ইতিহাস
(অথচ কত নির্লপ্ত সে!);
এর অন্তর্নিহিত যাপন
ঘুড়ির সুতার মতন টানটান
করে ভাসিয়ে রাখে স্নায়ুকে,
তাই ব্যাথা জাগে বুকে
কান্না পায়
ভালো লাগে
সুখও জাগে কখনো সখনো।

ইউক্যালিপটাস গাছের মতন
গ্রীষ্ম প্রলম্বিত এখানে,
বেখাপ্পা এবং হ্যাঙলা;
দরদরে ঘাম ছোটে
দালান কোঠার গায়ে গতরে,
হেসেলের ভাপ বেরোয়
ব্যালকনি আর বারান্দা থেকে,
রোজ বিকেলে ছাদে বসানো
বাগানের নকল ছাঁচে
পানি ঢালেন গৃহিনী,
বর্ষা নামলে কালো পানিতে
ভেসে যায় প্রতিটি অলিগলি,
ড্রেনগুলো হয় ভেনিস
(নৌকাও নামে রাস্তায়!);
কিছুদিনেই নির্দয় ডেঙিতে
ছেঁয়ে যায় পুরোটা নগর,
বেওকুফের দল শ্লোগান ধরে
গজব আর গুজব বলে,
নড়েচড়ে বসেন নগরপাল
মশকের ডিম ছাঁকেন তেউড়ি জালে,
হাসপাতাল সয়লাব হয় রোগী তে
(কী হাহাকার!কী প্রাণান্ত যুদ্ধ!)।

তবু এ নগর ঠিক এগোয়
তার নিদারুণ গতিতে,
বৃষ্টি নামলে আগের মতনই
ছাদে ভিজতে ছোটে কিশোরী,
রাত জেগে চাকরির বইয়ে বুঁদ
হয়ে থাকে করুণ যুবক,
চোখে চকচকে স্বপ্ন নিয়ে
বাসা খোঁজে নবদম্পতি,
নতুন পানির খুশবু পাওয়া
শোল মাছের মতন
লাফাতে লাফাতে
সাপের মতন হিসহিস শব্দে
ছুটে চলে মারণ বাস,
বিচিত্র গতিতে এবং বিচিত্র রেখাচিত্রে;
ছাত্রকে হলের রুমে ডেকে নিয়ে
পিটিয়ে হত্যা করে তারই সহপাঠী, নৃশংসতায়,অকারণে;
বিচার হয় না কিছুরই।

আর এখানে--
শরৎ লুকিয়ে থাকে কোথা বা যেন,
হেমন্ত উঁকি দিতে ভয় পায়,
নতুন বউয়ের মতন
লাজুক লাজুক চাহনী নিয়ে
শীত দ্রুত পার হয়ে যায়
এ নগরীর বারান্দা,
বসন্ত খানিকটা কর্কশ হইচই করে
দেয়াল লেখনীতে
আর সম্মিলিত কোরাসে,
তারপর চলে যায় দূরে বা কোথাও।

আমি এ নগরীর কেউ নই,
আশ্চর্য এ নগর ছেড়ে আমিও
চলে যাব দূরে বা কোথাও,
এ নগর তবু ছাড়বে না আমাকে।

৭/১০/১৯
কল্যাণপুর ঢাকা।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

Kajal
০৬-০১-২০২৪ ২১:৩৬ মিঃ

অনবদ্য রচনা।