জীবনের ‍সংলাপ
- রফিকুল আলম - ভালোবাসার নিঃশব্দ কথন ২০-০৫-২০২৪

তুমি এতো মিথ্যে কথা বলো কেন দিনেশ
সত্যি কি পারবে তড়পানো তরঙ্গ পেরিয়ে
লাল শাপলাটা তুলে এনে আমাকে দিতে?
সত্যি কি তুমি পারবে
উপড়ে দিতে হৃদপিন্ড প্রয়োজনে ?
শশী তুমিতো জানো আমি মিথ্যে বলিনা
শুধু লাল শাপলা কেন, তুমি চাইলে
এনে দিতে পারি পারিজাত।
তুমি এতো মিথ্যে কথা বল কেন দিনেশ
তুমি কি পারবে সব করতে আমার জন্যে
তোমার সমস্ত স্বত্বা দিয়ে?
শশী, তুমিতো জানো আমি মিথ্যে বলিনা
পারবো মাঠে যেয়ে লাঙলের মুঠি ধরতে
পূর্ণ বয়স্ক সুতপার খর ভালবাসায়
ভরা ভাদরের দুপুরে জবজবে ঘামে ভিজে
চালাতে পারবো নিড়ানি।
তুমি এতো মিথ্যে কথা বল কেন দিনেশ,
অহরহ তোমকে বলতে শুনি
’আমাকে ছাড়া তুমি বাঁচবে না’
ধরনীতল তোমার কাছে হয়ে যাবে
বিতৃষ্নায় ভরা অসহ্য আবাস।
শশী, তুমিতো জানো আমি মিথ্যে বলিনা
তুমি শশী বলেইতো আমি দিনেশ।
তোমার জন্য আমার মোঠ বইতেও লজ্জা নেই
চোরা বালিতে তলিয়ে যাওয়া শশীকে
টেনে তুলতেও আমার সব শক্তি দেব অকাতরে।
তুমি এতো মিথ্যে কথা বল কেন দিনেশ
চারদিকে আগুনের লেলিহান শিখা
মাঝখানে আমি, তুমি কি জীবন বাজি রেখে
আমাকে করবে উদ্ধার ?
শশী তুমিতো জানো আমি মিথ্যে বলিনা,
আগুন কেন! যদি কোন অনাকাঙ্খিত কালবোশেখী
ছোঁ মেরে নিয়ে যেতে চায়
সেখানেও প্রতিরোধ গড়ে তুলে
ছিনিয়ে নিয়ে আনবো আমার বুকের ডিঙিতে।
এসব কথা অনেকেই বলে
জানো দিনেশ, এসব প্রেমতো নয়
শরীরের কাছাকাছি হওয়ার চটুল বাক্য।
তাই বলছি-------
দিনেশ তুমি এত মিথ্যে কথা বলো কেন ?
শশী তুমিতো জানো আমি মিথ্যা বলিনা।
মনে পড়ে প্রথম দিনের কথা
চৈতী দুপুরে কলেজ থেকে ফিরতে
স্বাতির মত জবজবে ঘামে ভিজে
আম গাছের নীচে দাঁড়িয়েছিলে ক্লান্তিতে
একটু ঠান্ডা হতে সাজাচ্ছিলে বিশ্রামের বাসর।
এমনি একক্ষণে এক গন্ডা পুরুষের থাবায়
আর্ত চীৎকারে উঠেছিলে কোঁকিয়ে
আমিই সেদিন গতরের খুন ঝরিয়ে
উদ্ধার করেছিলাম তোমাকে।
তুমি মুক হয়ে দাঁড়িয়েছিলে ব্রীড়াবতীর মত।
সেদিন তুমি বলেছিলে নিঃসংকোচে
এমন করেই আগলে রেখ আজীবন।
শশী কতিদিন কতবার বলেছিলে
দিনেশ, তুমি আমার জীবন, আমার মরন,
মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে
অপেক্ষা করবো তোমার জন্য
বছরের পর বছর ধরে।
তুমি অনিকেত হলে
খোলা আকাশের তলে
বৃক্ষের ছাদের নীচে কাটাবো জীবন।
নিরন্ন বিষন্নতাতেও পাবোনা দুঃখ
যদি তুমি থাকো আমার পাশে।
শশী তোমার সুখের জন্য
মাত্র চব্বিশটি মাস ছিলাম বিদেশে
কমপক্ষে ষাট গন্ডা চিঠি দিয়েছো
যার ছত্রে ছত্রে ঐ কথারই প্রতিধ্বনি
প্রবাস জীবনে যা দিয়েছে আমাকে
তোমাকে কাছে পাবার সুখানুভূতি।
শশী তোমাকে বরণ করার জন্য
কত দোকান ঘুরে ঘুরে কিনেছি
গলার হার, হাতের আমলেট
সীমন্তের টায়রা, কটিদেশের বিছা
আঙুলের আংটি, কর্ণলতিকার কান ফুল
আর প্রিয় দয়িতের এওতি, নাকের নাকছাবি।
শশী, বিমান বন্দরে নেমে
চোখ অপারেশন করা রুগীর মত
ব্যান্ডজ খুলে প্রথমেই দেখতে চেয়েছিলাম তোমাকে
একগোছা রজনী গন্ধা হাতে
অধীর অপেক্ষায় আছো শুধু আমার জন্য।
শশী এখন বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা
কেন পাইনি উত্তর শেষ চিঠি গুলির
কারণ আজীবন অপেক্ষার মঙ্গল প্রদীপ যে
এখন অন্য ঘর আলো করে আছে।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।