উপেক্ষার যে কষ্ট জানে
- দজিয়েব ২০-০৫-২০২৪

আজ যখন ফজরের আজান দেয়
তখন আমি জেগে ছিলাম।
সূর্য তখনো ওঠেনি,
ঘুমোতে ঘুমোতে ক্লান্ত হয়ে গেছে রাত;
মোয়াজ্জিনের কণ্ঠে অবশ্য ক্লান্তির ছাপ নেই,
আমি ভাবি সে কি সারারাত ঘুমিয়েছিল?
মনে পড়ে কোনো এক কালে মোয়াজ্জিনের কণ্ঠ
আমার কাছে কৃষ্ণের বাঁশির মতো মনে হতো
যার তীব্র আহ্বানে আমি ছুটে যেতাম মসজিদ পানে
স্রষ্টার সাথে মিলিত হব বলে।
মনে পড়ে কৈশোরের কোনো এক তীব্র শীতের রাতে,
আমার গায়ে তখন প্রচণ্ড জ্বর;
তবু যখন শুনলাম আমি ভোরের আজান
আমি আটকে রাখতে পারিনি নিজেকেঃ
হিমশীতল পানি দিয়ে ওযু করেছি,
মসজিদে যাওয়ার শক্তি নেই বলে
জায়নামাজ ফেলে নামাজ পড়েছি ঘরে;
কি এক তীব্র আহ্বানে আমি
মিলিত হয়েছে বারবার স্রষ্টার সাথে...

অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে তারপর;
আমি এখন ভাবতে শিখেছি।
প্রশ্ন করতে করতে আমি এখন
প্রশ্ন করে ফেলেছি স্রষ্টাকেও;
তবু মোয়াজ্জিনের কণ্ঠ আমাকে এখনো ডাকে,
সেই তীব্র আহ্বান আমি এখনো অনুভব করি।
তবু আমার যুক্তি
আমাকে মসজিদের পথে ভিড়তে দেইনা,
আমাকে জায়নামাজ ফেলতে দেয়না ঘরে।
কারণ আমি জানি,
আমার স্রষ্টা যার সাথে মিলিত হওয়ার
আমার এতো তীব্র বাসনা ছিলো,
তিনি হয়তো আছেন অনন্ত অম্বরে;
কিন্তু তিনি আমি
কিংবা আমাদের মতো ক্ষুদ্র মানবজাতির
থোড়াই পরোয়া করেন...
আমরা অসুখে মরি কিংবা যুদ্ধে
তাতে তাঁর কিচ্ছু যেয়ে আসেনা।
তাঁর পয়গম্বররা অবশ্য আমাদের বলেনঃ
তিনি বিভেদ দিয়েছেন বৈচিত্র‍্যের জন্য,
মহামারী কিংবা মহাপ্রলয় দিয়ে থাকেন পাপী বিনাশে
আর দুঃসময় দিয়েছেন পরীক্ষার জন্য।
কিন্তু আমি জানি বৈচিত্র্য যে রক্তপাত দেয়,
পাপী বিনাশ যে নিষ্পাপের প্রাণ কেড়ে নেয়,
আর দুঃসময় যে যন্ত্রণা দেয় আমাদের
তাতে তাঁর কিচ্ছু যেয়ে আসেনা।
হয়তো তিনি উপভোগে এতোটাই মত্ত
যে আমাদের দিকে নজর দেয়ার সময় তাঁর নেই,
অথবা হতে পারে তিনি আমাদের নিয়ে খেলছেন,
কিংবা তিনি তাঁর সৃষ্টি মানুষের কাঁছেই ক্ষমতাহীন।

আমি তাই মসজিদে যাইনা, নামাজ পড়িনা ঘরে।
আমার যুক্তি আমাকে বলে তাই মোয়াজ্জিনের তীব্র আহ্বান উপেক্ষা করে আমাকে থাকতে হয়;
আমি জানি উপেক্ষার কষ্ট কাকে বলে।


--২৮.০৩.২০২০, চুকনগর।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।