জুবায়েরুল ইসলাম থেকে তন্ময়তার জুবায়েরুল ইসলাম
- মো: জুবায়েরুল ইসলাম - আমার বন্ধু তন্ময় ১৯-০৫-২০২৪

সত্য ঘটনা অবলম্বনে " জুবায়েরুল ইসলাম থেকে তন্ময়তা'র জুবায়েরুল ইসলাম হওয়ার গল্প!।

আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবন নদীর স্রোতোর মতো বহমান। হয়তো সেই স্রোতের বহমানতার কারণে'ই আমি জুবায়েরুল ইসলাম আজ তন্ময়তা'র জুবায়েরুল।

এই গল্প টা এক মাস বা এক বছর দুই বছরের গল্প না, গল্পটা পুরো আট বছরের। তাই গল্পটা কোথায় থেকে শুরু করবো বুঝে উঠতে পারতেছি না! তবে শুরু করা যেতে পারে ক্লাস নবম শ্রেণি থেকে যখন JSC পরীক্ষায় সফতার সাথে পাশ করে নবম শ্রেণিতে কোন গ্রুপে ভর্তি হবো তখন থেকে। বন্ধু নাজমুল, জুয়েল, শাকিলের সাথে অনেক ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো বন্ধুত্বের তাই ওদের সাথে আমি বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হই বন্ধুত্বের টানে। তবে পুরো সিদ্ধান্ত বন্ধুত্বের টানেই যে নিয়েছিলাম ঘটনাটা ঠিক তা না ,আমার নিজেরও বিজ্ঞান অনেক ভালো লাগতো এবং লাগে সময় পেলেই বিজ্ঞানের বিষয়ে পড়ালেখা করি। যাই হোক এ-সব কথা থাক। মূল কথায় ফিরে যাই, বিজ্ঞান শাখায় এক সপ্তাহ ক্লাস করার পর হঠাৎ করে তন্ময় আমাকে বলতেছে ব্যবসায় শাখায় চলে আসো তুমি, ব্যবসায় শাখায় অনেক সুবিধা অথাৎ আমাকে ব্যবসায় শাখায় নেওয়ার জন্য যতটুকু বোঝানোর দরকার ঠিক ততটুকুই বোঝায়, আমিও তন্ময়ের কথায় রাজি হয়ে যাই হয়তো তন্ময়ের কথায় আমি রাজি হইতাম না যদি আমার প্রিয় হাফিজুর স্যার আমাকে সাপোট না করতো, ও তন্ময়ের কথা বলা হয়নি তন্ময় কে? তন্ময় হইলো নাজমুল, জুয়েল, শাকিল, রবিন, বাঁধনে মতোই আমার খুব ভালো একজন বন্ধু ছিলো। তবে আমি তন্ময়ের সাথে কখনোই খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশতাম না। Just লেখাপড়ার জন্য যতটুকু মেশা দরকার ছিলো ঠিক ততটুকুই মেশতাম। আস্তে আস্তে ব্যবসায় শিক্ষায় শাখায় আমি আর তন্ময় হয়ে উঠি ব্যবসায় শিক্ষা শাখার প্রধান প্রিয় হাফিজুর স্যারের প্রিয় পাএ। এখান থেকে এতটুকু অনুমান করা যায় আমার আর তন্ময়ের বন্ধুত্বে'র বীজ মূলত ক্লাস নবম শ্রেণিতেই বপন করা হয়েছিলো। কিন্তু আমি আর তন্ময় কখনোই বুঝতে পারিনি। তারপর অনেক ইতিহাস! কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সফলতার সাথেই বিদায় নিতে হলো স্মৃতিবিজড়িত প্রিয় গাবসারা হাই স্কুল থেকে। একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের
কারণে তন্ময় আর আমি ইন্টারমিডিয়েটে একই সাথে একই সাবজেক্টে ভর্তি হওয়ার যুদ্ধে লড়াই করি শেষ পযন্ত দুজন বিজয় হই। দুজনেই ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলাম। ভর্তি সিট নিলাম আমি আগে আমার পরেই তন্ময়। শুরু হলো ইন্টারমিডিয়েটের জীবন। দুজন নিয়মিত ক্লাস করেছি, প্রাইভিট পড়েছি, ঘোরাঘুরি করেছি মন যে দিকে ছুটে যাইতে চাইছে ছুটে গিয়েছি দুজন। এত কিছুর মধ্যে তন্ময় কখন যে আমাকে ওর Best Friend হিসাবে হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছিলো আমি সঠিক জানি না। কিন্তু আমি তন্ময়ের ভালোবাসা বা বন্ধুত্বের মূল্য দিতে পারিনি। নানা ভাবে তন্ময় কে কষ্ট দিয়েছি কখনো বুঝে কখনো বা না বুঝে। তন্ময় যতই আমার কাছে আসতে চাইতো আমি ততই তন্ময় কে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। কারণ আমি আমার বন্ধু ফারুকের মাঝে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলাম। না থাক এ দিকে যাবো না আমি। মান অভিমানের মধ্যে দিয়েই শেষ হয়ে যায় ইন্টারমিডিয়েটের সময়। দুজনেই সফলতার সাথে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করি। তবে এর মধ্যে তন্ময়ের কোন একটা কাজের কারণে আমি ওর প্রতি ক্ষুদ্ধ ছিলাম তাই পরীক্ষার পরে ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। চলে যাই ঢাকা চাকরিতে। সময়ও এসে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদনের৷ ভর্তি
আবেদনের ঠিক একদিন আগে তন্ময় আমাকে নক করে আমি কেন জানি তখন ওর নকের উওর দিলাম। হয়তো এটা প্রকৃতির কারসাজি। বিদ্র: পরীক্ষার পরে তন্ময় নানা ভাবে আমাকে নক করেছে কিন্তু আমি কোন উওর দেইনি। জানি এটা আমার ভুল ছিলো আমার উচিত ছিলো তন্ময়ের সাথে যোগাযোগ করা। আবেদনের আগে তন্ময় আমাকে বলতেছ তুমি আমার সাথে না থাকলে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো না। এই কথাটা শুনার পর আমার হৃদয়ের অনুভূতি কেমন যেন নড়েচড়ে উঠলো। অন্য দিকে আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছি। কোন কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আমি তন্ময় অনেক বোঝাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করার জন্য কিন্তু আমি কিছুতেই ওরে রাজি করাতে পারলাম না। সেই দিন প্রথম তন্ময়ের জন্য আমার হৃদয় কেঁদে ছিলো। আমার মন এতোটাই বেশি ব্যাকুল হয়ে ছিলো শুধু তন্ময়ের হাত টা স্পর্শ করার + বন্ধু বলে ডেকে বুকে জড়িয়ে নেওয়ার সেটা বলে বোঝাতে পারবো না আমি! একটা মানুষ অন্য একটা মানুষ কে কতটা ভালোবাসলে এমন করতে পারে? এর উওর আমার জানা নেই। ভর্তি আবেদনের তৃতীয় দিন মনে হয় ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসি আমি, তন্ময় কে ভর্তি আবেদন করানোর জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি আবেদন না করলে তন্ময় আবেদন করবে না তাই আমিও আবেদন করি তন্ময়ের সাথে ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে। যদিও আমার ইচ্ছে ছিলো ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন করার। কিন্তু তন্ময়ের রেজাল্ট একটু খারাপ হওয়ার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। নিজের ইচ্ছেটা কে মনের মাঝে ই কবর দেই তন্ময়ের জন্য। আবেদন শেষ করে ঢাকায় ফিরে যাই চাকরিতে তারপর সময় এলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার। আমি পরীক্ষা দিলাম সেখানে সফলতার সাথে পাশ করতে না পারলেও ছিলাম ওয়েটিং লিষ্টে। ওয়েটিং লিষ্টে থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথে ভর্তি সুযোগ পেলাম। কিন্তু তন্ময় আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না হয়তো লেখাপড়া টা বন্ধ করে দেবে তন্ময়, এইসব ভেবে আমি আমার ক্যারিয়ার, স্বপ্ন কে বির্সজন দিয়ে দেই। বাতিল করে দেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ। আর পরিবার + বন্ধু বান্ধবদের কাছে মিথ্যা বলতে হইছে কঠিন সাবজেক্ট পাওয়ার কারণে আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইনি। আর করবোই না বা কেন? যে তন্ময় বিগত দিনের প্রতিটা সুখ দুঃখের সাথি ছিলো, তাকে ছাড়া আমি'ই বা কেমন করে থাকতাম? তাই বন্ধুত্বের মূল্য দিতে গিয়ে আমি তন্ময়ের সাথে ভতি হয়ে যাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা শাখায়। কারণ আমি বিশ্বাস করি লেখাপড়া যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই করা যায় এবং ভালো কিছু করে দেখানো সম্ভব। আর সবথেকে বড় কথা হইলো আমিও আমার হৃদয়ে স্থান দিয়েছি তন্ময় কে, কিন্তু তন্ময় কে কোনোদিন মুখ ফুটে বলতে পারিনি তন্ময় তুই আমার Best friend। তন্ময় কে বন্ধুত্বের উপহার হিসাবে দেওয়ার মতো আমার কাছেই কিছুই অবশিষ্ট ছিলো না! কারণ আমার সবকিছু আমার অন্য বন্ধু কে দিয়ে ফেলেছি। তাই আমি ঠিক করলাম তন্ময় কে আমি এমন কিছু উপহার দেব যে আমার আপনজন আমার বন্ধু তন্ময় আমার মাঝে বেঁচে থাকবে জন্মজন্মান্তর। তাই আমার নামের আগে যোগ করে দেই তন্ময়তা'র অথাৎ তন্ময়তা'র জুবায়েরুল ইসলাম। তন্ময় অর্থ = শান্ত আর জুবায়ের অর্থ = পরিশ্রমি, আত্নবিশ্বাসী।

#তন্ময়তার জুবায়েরুল ইসলাম

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।