নিঃসঙ্গ রাত নিরব পায়চারী
- ইকবাল হোসেন বাল্মীকি - অদ্য পুরাণ (অপ্রকাশিত কাব্য) ১৯-০৫-২০২৪

নিঃসঙ্গ রাত নিরব পায়চারী
---------------------
১।
মাতৃ গর্ভের পানি ভাঙ্গার শব্দ শুনে
স্টিয়ারিং ঘোরিয়েছে যেই ভুবন ডাঙ্গার পথে
বিরক্তিকর পোকা গুলো প্রথম দরশন মায়াময় মনে হয়
কিন্ত খলিফার দোকানে আমার ছামড়া সেলাইয়ের আয়োজন দেখে
আমি প্রথম দিনেই ওদের তালাক দিয়েছি, শালারা, মানুষ বানাতে চাও?

২।
নর সুন্দর- চুল কাট, মুখ ছাট, বগল কামাও
নোখ ভাংগ পাথর কাঁচিতে
আমার জন্য কিনো প্লাটিকের পুতুল, কাটের ঘোড়া
পশমের মতো ডানা থাকার কথা ছিল আমার জন্ম চুক্তিতে।
তোমাদের এসব 'পরিবার পরিকল্পনা' থেকে
আমি বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সাথে বাদ দিয়েছি
মনিহারি দোকান, বানানো বাগিছা, দ্রব্য সম্ভোগ, চশমা ও সিঁড়ী।

আম ভীষণ বিরক্ত, মোটেও বিপ্লবী নই। ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন উঠেনা।

৩।
আজিব সব গ্রহ্ন গুলো পাঠে লালা ঝরে
অক্ষর গুলো অন্ধকারের জননীর মতো মুর্খ।

পঁচে যাওয়ার জন্য এই অন্ধকার আয়োজন দেখে
আমি নিরাপত্তার ভয়ে শঙ্কিত
টান টান উত্তেজনা পেষিতে ও মশিতে
ঘুমের মধ্যে বারবার কেঁপে উঠি।

উড়ন্ত রকেট আমায় অধগতির দিকে নিয়ে চলে
পায়ের নিচে স্যাঁতসেঁতে জলাভুমি পতিত প্লেনের রানওয়ে।
খাদ্য দ্রব্যে কাঁটাচামচের আন্দোলন , বুদ্ধিতে বিশাল ওয়ার হাউস।
এসব প্রাত্যহিক গেড়াকল, আমাকে হররোজ হজম করে নিতে হয়।
৪।
আমি মোটেই বিপ্লবী নই
যে কাটা পদ্ম দিয়ে কেরানী কে ভয় দেখাব
অথবা যৌন কর্মিদের বেতন জাতীয় করণ করি।

অথচ একটা সবুজ চাকু আমার কমরেতে বাঁধা সারাক্ষণ।
একটা সামগ্রিক দিগন্তি বিহারি চিৎকার গলা দিয়ে নামে।
শ্লোগান বলো না, এটা আমার এক ধরনের মৃত্যু সমন।

৫।
আমি বিরক্ত আমার ক্লিন শেভ গালের উপর
নিমালিশ নখের উপর এবং কাজল চোখের উপর
আমার কুচকুচে কালো চুলের উপর এবং চুলের ছায়ায়।

পাখিদের গান আসে না ছায়ার আলোক তরঙ্গে।
পাখি গুলো বানর এখন
চুলের জ্যালে ওঠা নামা করছে যেন তৈলাক্ত বাঁশ।
আমার আধুনিক চুল তৈলাক্ত কাঁটাময় বাঁশের জঙ্গল। বানর অধ্যুষিত।
৬।
আত্মরক্ষার নামে ফ্রিজারে রেখেছি দেহ।
বাসী গন্ধে দুঃখ গুলো মমি হতে হতে স্বচ্ছ পাথর।

হে ভিষন্নতা তুমি কাম্য ছিলেনা
প্লাস্টার খসা মন্দিরের মতো একা একা রাত পার করো
এবং দেবে যাও মাটির গভীরে , নিঃসঙ্গ বৃক্ষের জড়
বরফ শীতল , স্থাণু এবং বেদনার শুষ্ক সিমেন্টের আস্তর।

৭।
সাপ্তা'র প্রথম দিনটা আমায় দেখে চমকে উঠে
আমার দায়গ্রস্ত ঠোঁট ও দোষী অবয়ব, পেট্রলে পোড়া
রাস্তায় জবড়জং বাসের চাক্কার মতো গড়িয়ে হাটছে, মোনালিসা মোনালিসা বলে।
তখন শরীর যেন রক্তে ভর্তি ট্রাক, যদিও উষ্ণ তবে মেঘের দূষণ কনিকা দেয়ালে।

আমার রক্ত কনিকার দেয়াল ছয় তল সমেত
ছাদ ও মেজ হীন এক প্রকার সুড়ঙ্গ যেন। কিন্ত পুরুদস্তুর গৃহ।
কারা হাসপাতাল বসিয়েছে তাতে, হাড়ের মাছি উড়ছে জানালায়
চামড়ার জুতো সেলায়ের কল বসিয়েছে নবিন চামার
এবং চা বাগানের কড়া মদের গন্ধে ভেসে যায় চায়ের দোকান।

আমার রাস্তা গুলিও আতঙ্কে আত্ম বিলোপ্ত
ফাটলের চিহ্ন ধরে এগিয়ে গেলে, রাস্তা গিরিখাদে সমাপ্তি টানে।
তবুও ছাল উঠা সড়কের প্রতি স্বমেহনের মতো দুর্বলতা নাড়িতে আগুন জ্বালে।

৮।

প্রতিটা মানুষের দরোজায় সিলিকন রঙের পাখি টাঙ্গানো দেখ
পাখিদের গোপন তন্তু গুলিও কাঁচের জারকে স্পষ্ট ঘৃণা নিয়ে উকি মারে।

এবং দাঁতাল পাখি যেন মানুষের অন্তর
ভোল করে যদি নিতান্ত গরম কফিতে চুমক দেয় কদাচিৎ
ভোলে ফেলে আসে দাঁত, কাপ ভর্তি কেবল কফি রাঙা পাখির হীম রক্তজল।

অথচ প্রতিটা পাখির ঘরে আয়না রাখা
এখানে প্রতিবিম্বিত হওয়ার কথা ছিল মানবিক লজ্জা ও সন্ত্রাস
কিন্ত পাখিরা আয়নার ব্যবহার ভুলে ছাতা খুঁজে দিন রাত
কিন্ত পালকের নিচে ক্রিমি ও বিষাক্ত অণুজীব সংসার পাতে।
পাখিদের 'অভ্যন্তর' মানুষের সুখাদ্য বলে এমন নি-রঙ্গা আমার পৃথিবী।

৯।
তারপরে দেহ বহন করে চোখ জুতো অগ্নি ও প্রেম
ভুলে যাওয়া যতসব মরচে ধরা থান কাপড় , রেশমের সুতো
ব্যথা উপশম কারি দোকান গুলি পাশ কাটিয়ে আমি হেটে যাই
কিছু লোকের লোকারণ্য মেলার উচু উচু ভবনের পাশ দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারি-

মনোরথে স্বপ্নে ফিরিয়ে আনার অসফল প্রচেষ্টা চলেছে আর চলবে
কারণ স্বপন ভিত্তিহীন যেন লাল ঘোড়ার যক্ষারোগ
এ কারনেই আমি আমার জাঙ্গিয়া, তোয়ালে এবং কবিতার পাঞ্জাবী জলে ভেজা রাখি
এখানে থেকে ঝরে পড়া ময়লা জল আমার কান্নার পান্না ।

আবর্জনা স্তুপে মানুষের নুংরা কান্না , বিষয় প্রেম, আমার গন্তব্য নয়
যদিও ইহাই ঘটছে। এবং আমি আমার অস্তিত্বের মর্মমুলে এ রোগের দহন অনুভব করি।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।