ফের সেই লোহাকুচির বন
- মারুফুল আনাম রঙ্গন ১৯-০৫-২০২৪

পৌষের হাড়কাঁপা শীতল কুয়াশা ছাড়িয়ে নীল আকাশ
ভূলুণ্ঠিত যেন কাঁদামাখা ভগ্নপ্রায় কুটিরের দোরগোড়ায়,
যার আতিথেয়তায় বেঁচে আমি আজো;
চার কুড়ি আর দশটি বছর পেরোনো ক্ষীণকায় এক বৃদ্ধা।

প্রগাঢ় কুয়াশাচ্ছন্ন মায়াবী তেপান্তর আর
মেঘের তানে দোলায়মান ফসলের বুক চিড়ে
নেচে যাওয়া খেয়ালী পবনের বান পেরিয়ে
ফের দাড়িয়ে সে লোহাকুচি বনের নীল চাদরের পাড়ে।

হায়রে লোহাকুচির বন!
কত শ্রাবণের অঝোর বৃষ্টিমাখা আর
ফাগুনের ধুলোট উন্মাদনা জাগা মেঠোপথের বুক বেয়ে
কত বৈশাখের তারার আলোয় সন্তর্পনে
তাকিয়ে দেখেছি তার মোহিনী রূপ,
নিজের অজান্তে বিলিয়েছি শোকার্ত জীবন গাঁথা;
তার বুকের কাজল দিঘীতে এঁকেছি আমার
আদ্যিকালের রঙিন স্বপ্নগুলি- বাস্তবতা ভুলে।

লক্ষ্যাধিক অমানিশা পেরিয়ে ফের তিন পায়ে
ভূমি আঁকড়ে আমি; শেষবারের মত হয়ত
তাকিয়ে দেখছি কালচে জলে এক রুগ্ন বৃদ্ধা কে-
সময়ের ভেল্কি তে যার খোলসে সেই পুরোনো আমি।

নিজের কত অতৃপ্তি আর অক্ষমতা নিয়ে
টিকে আছি আমি; জরাগ্রস্থ পৃথিবীর ছোঁয়াচে
এ জরা কাঁধে বয়ে ক্লান্ত আমি আজ।
শ্যাওলার সুচারু জাল ভেদ করে,
নিমগ্ন চোখের তারা দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে খুঁজছি;
খুঁজছি যেন আমার শৈশব-কৈশোরের
প্রিয় মুহূর্তগুলি।

বিদায় হে লোহাকুচির বন!
হয়ত তোমার সাথে এটিই আমার শেষ দেখা।
আমি রইবনা, কিন্তু তুমি তো আছো!
বিষন্ন আকাশের নীলে ছড়িয়ে দেবে
আমার তুচ্ছ জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র
কিছু মুল্যহীন স্বপ্ন।

লেখার এ কাগজ টি ঝরা পাতার মত
হয়ত উড়ে যাবে অজানায়-
আর বেশিক্ষণ নেই, যখন আমিও হারাবো,
হারিয়ে যাব এ লোহাকুচি বনের অসংখ্য স্মৃতির আড়ালে।
১০/১০/২০১০

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।