১৭নং তৈলচিত্র
- মারুফুল আনাম রঙ্গন ১৯-০৫-২০২৪

কোনো এক হেমন্তের বিকেলে নরম রোদে
পায়ে পায়ে হেঁটে এলাম
এক আর্ট গ্যালারীতে।
শিল্পী অখ্যাত- শ্রাবণ মজুমদার।
ভেবেছিলাম, দেখে নেই একবার,
ভদ্রলোকের রঙিন ভুবন।

দেয়ালে দেয়ালে রং-তুলি-
কোথাও আকাশের ছোপ,
কোথাও বা আঁকা রুপসী বসুন্ধরা,
ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ, মায়াবী গ্রাম,
কখনো বা abstract আর্ট-
সবেতেই ছড়িয়ে শিল্পীর হস্তনৈপূণ্য।

এমনি করে দেখতে দেখতে
হঠাৎ সামনে পড়ল এক তৈলচিত্র-
এলোমেলো ধানখেত, মাঝে
এক চঞ্চলা নারী, হাতে স্টেনগান
তীব্র শাণিত চোখে তাকিয়ে দূর সীমান্তে;
শিরোনাম- 'একাত্তরের বীরাঙ্গনা'।

নির্বাক আমি হঠাৎই
শুধু তাকিয়ে রয়েছি জনম জনমের
এক পরিছিত মুখায়বের পানে-
এ যে আমার মায়ের প্রতিবিম্ব!
৭১ এ মরেছিল যে মা-
শত্রুর গুলিতে- শ্রাবণের অশ্রু ঝরেছিল যেদিন।

বাতাসের কোলাহল যেন হঠাৎই থেমে গেছে,
মাথার উপরে কাল আকাশ রোদ হীন
কাল কাল মেঘের ছোপে
ঝরে পড়ছে বিষণনতা।
ভুবন যেন বিষাদে বিষাদময়,
রুদ্ধ ভুবনের সব ব্যঞ্জনা।

অজান্তেই চোখের কোণ ভিজে উঠেছে-
মনে পড়ছে সেসব পুরোনো কথা-
তখন সবে কিশোর আমি,
মা হাতে স্টেনগান তুলে নিলেন, বললেন
'তোর বাপের মরণের বদলা নিতে গেলাম!'
মা'র সেই কঠোর তীব্র সজল চোখ
আজো স্মৃতির মণিকোঠায় প্রজ্জ্বল।
তারপর আর দেখা পাইনি তার,
না না পেয়েছি, তার মরণের দিনে
যেদিন বাকরুদ্ধ আকাশ তাকে
ডেকে দিয়েছিল মরণের চাদরে,
সেই দেখাই ছিল শেষ দেখা।

পাশে কখন এসে দাড়িয়েছেন আরেকজন
টের পাইনি, সম্বিত ফিরল যখন তিনি
শুধালেন, 'সুন্দর নয় চিত্রটি?'

সুন্দর নয়! যে চিত্রটি আমার মনের
সব স্মৃতিকে করে তুলেছে তাজা
সেটি তো অতুলনীয়!

ফিরবার আগে শেষবার চাইলাম
১৭ নং তৈলচিত্রটির দিকে।
ভিজে চোখ মুছলাম,
আজ সারাদিন তা ভিজে থাকবে।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।