ড্রপবিট
- শামীম এএ কবীর - পৃথিবীর বিশ্রী সব কবিতা-২ ২০-০৫-২০২৪

অশ্রুকে আড়াল করেছি কখন
চোখের উজ্জ্বলতায় লুকিয়ে ফেলেছি
নিভৃতে ভিজে যাওয়া চোখে এখন
আরোপিত আলো
কুয়াসার নিস্তব্ধতায় বহুদূর নির্জন পথে
একাকী হেটে হেটে মুছে ফেলেছি
কান্নাকে রেখে এসেছি নি:শব্দের আড়ালে
কেউ দ্যাখেনি শুকনো পানির রেখা

যন্ত্রনা চেপে রেখেছি
মহাকাল ধরে
নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি মুখ নীচু করে
শংকিত সান্তনা ছিলো শুধু একাকী প্রার্থনা
কাজ আর সময়ের অন্ধকারে।
শীতের ভোরে হঠাৎ হড়মড় করে ভেঙেপড়া
শুকনো পেয়ারা গাছটা এক অজানা
আশংকার কাপন লাগায় বুকে
শীতের বিকেলে ঝড়েপড়া পাতার শব্দ
বাড়িয়েছে উৎকন্ঠা শুধু

বাবা অসুস্থ্য পালস্ রেইট আপ ডাউন করছে
অজানা আশংকার কথা বলছে ডাক্তার
বাবার হার্ট বিট রিদমলেস, মাঝে মাঝে ড্রপবিট
থেমে থেমে চলছে
বাবার পাশে গভীর রাত জেগে
কতটুকু সেবা আর কতটুকুই বা মানসিক শক্তি যুগিয়েছি
শুধু প্রতি সকালে বলেছি, ''বাবা আজ দুপুরেই
সব্বাইকে অবাক করেদিয়ে তুমি উঠে বসবে’’
বাবা উঠে বসেনি,
চোখের সামনে থেকে একটু একটু করে
বিলীন হতে থাকে পুত্রের মুখের ছবি
যদিও তা চোখের খুউব কাছে তার পরো তা দূরে যেতে থাকে
চোখও ধীরে ধীরে হারাতে থাকে আলো
পার্থিব কোনো রঙ আর আর মনে ধরেনি
পৃথিবীর কোনো গান আর ধরে রাখেনি গান পাগল বাবাকে
পুত্রের মুখ আর প্রতি সকালের উদ্দীপ্ত আলো দেখে বাবা উঠে বসেনি
বাবাকে আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখতে বলেছিলাম আর
প্রার্থনা করেছিলাম অনন্তকাল যদি বাবাকে ধরে রাখতে পারতাম
বাবা আমার হাত ধরে রাখতে পারেনি

প্রতি বার একটু একটু করে খুইয়েছি আত্মবিশ্বাস
তার পরো সব্বাইকে সান্তনা দিয়েছি চোখ মুছে হেসেছি
বলেছি আজ দুপুরেই বাবা উঠে বসবে
নির্জনতাকে সাথী করে কেদেছি শুধু
আমি ব্যর্থ হয়েছি, মিথ্যে হয়েছে আমার সব
হাইপার ব্রেথ নিতে নিতে
বাবা চলে গেলেন একা
ধুসর সন্ধ্যাকে আরো বিষন্ন করে আমাকে কাদিয়েছে খুব
বাবার হাত ধরে দেখা পৃথিবীর প্রথম রূপ রঙ
প্রথম স্কুল, প্রথম রেলগাড়ী
গল্প করতে করতে বাবার সাথে রাতের ঘুম
অথবা জেগে ওঠা সূর্য্যেরও আগে সকালে
আমি স্মৃতিদের ভিজিয়ে দিয়েছি বিন্দু বিন্দু অশ্রূ দিয়ে

আমার হাজার বছরের বিশাল বৃক্ষছায়া সরেগেলো মাথার উপর থেকে
সন্ধ্যার আকাশে যেনো তারাদের পতন হয়ে গেলো একসাথে
নিভে গেলো সব আলো, গাঢ় অন্ধকারে ডুবে গেলাম আমি হতাশায়
মূল্যহীন হয়ে পড়লো পিতৃহীন জীবনের ঐশ্বর্য্য
অন্তত এক জন মানুষ তো ছিলো বৃক্ষ ছায়া
অনন্ত অসীম প্রেমময় গান ছিলো তার মুখে
অন্তত এক জন মানুষ তো ছিলো চোখে মুখে মায়া
প্রাচুর্যের মাঝে দৈনতা এখন নিত্য সঙ্গী
অপূরনীয় এক শুণ্যতায় ডুবে যাচ্ছি ক্রমাগত
বিশাল এক বিন্দু হয়ে ঝড়ে পরে অন্ত সলিলা নদী
সারাক্ষণ ভিজে দেয় ভেতর বাহির এখন
সম্পূর্ণ একা আমি, সকল বিশ্বাস ভেঙ্গে
ঝড়া পাতার মতো এক অন্তহীন বিষন্নতা এখন সঙ্গী সারাক্ষণ।
------------- ২৫/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।