কৃষক
- শামীম এএ কবীর - নতুন কবিতা ২১-০৫-২০২৪

কৃষি কাজের প্রতি খুব আগ্রহ ছিলো আমার, তবে
দুঃখ, বাবার একখন্ড জমি ও ছিলো না, আর
আমার ডাক্তার পিতা,
কৃষি কাজের প্রতি ছিলো মারাত্মক অনাগ্রহ-
তা ছাড়া শিক্ষিত পিতার ছেলে, আমি কি করি,
কেউ জিগেস করলে কি বলবেন বাবা?
বরং অন্তরে অহং
আছেনা সনাতনী চিন্তা, ছেলে বড় হবে
ডাক্তার কি ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিকাজ, ছি !
নিকৃষ্ট আদিম পেশা,
আমি বলেছিলাম তবে বাবা
এই পেশার হাত ধরেই
মানুষের প্রথম সভ্যতা, সমাজ, স্থিতি,
জীবনের উন্মেষ, নগর, সমাবেশ, রাষ্ট্র
সে এক গৌরবান্বিত পেশা -
শিক্ষা লাভকরে আমি কৃষক হবো একথা শুনে
বাবা মা, সেকি আক্ষেপ, ভয়াবহ দঃখ,হতাশা
মাঝে মাঝে ভাবতাম
যদি ১খন্ড জমি হতাম
কতো কি ফলাতাম আমার উপর
আর হা হুতাশ করতাম,
থাকতো না হয়
১খন্ড জমি আমার তাতে
কিই বা ক্ষতি হতো কার?
না থাকলে না থাকুক জমি
তবে আগ্রহ তো থেমে থাকে নি,
আর ভাবি নি, কি হবে কাল কিংবা আজ
বরং যখন যেখানে পেয়েছি
রপেছি বীজ, লতা, ডাল, চারা, আস্ত গাছ
অনেক সময় মা বিরক্ত হয়ে যেতো,
আর আমার এই কর্মকান্ড ছিলো
বাবারও ভীষণ অপছন্দ
এখানে এ গাছ তো ওখানে ও গাছ
সকাল হলেই শুরুহয় নব ফিরিস্তি, নতুন কাজ
কোন গাছের পাতা পড়ে, জঞ্জালে ভরে গেছে
আঙ্গিনা, উঠোন
কোন গাছের ছায়া, ঢেকে দেয় সূর্য্য, সকাল
কখনো অভিযোগ ১০ বছর হয়ে গেলো
গাছটাতে ফল ধরলো না, রেখে কি লাভ
কেটে ফেলো, আমি বলতাম, নাই বা ধরলো
ফল থাকুকনা বেঁচে তবে, বিরল সে বৃক্ষ-
আর উৎসাহ দিতো সাইখ সিরাজ, কৃষিকাজ
বাংলাদেশ টেলিভিশন,
উদ্দীপ্ত প্রতিদিন, সূর্য্যের আলোয় বেড়ে ওঠা চারা গাছ
বলা চলে কৃষি নিয়ে এ এক ধরণের বিক্ষিপ্ত গৃহ যুদ্ধ,
আর বলা যেতে পারে ,আমার মতো ভূমি হীন কৃষকের
বর্ণালী দিবা স্বপ্ন
যাক ওসব, যার কৃষি জমি নেই তার জন্য
কৃষক হওয়া একটু কঠিন বটে, তাছাড়া,
না খেয়ে খেয়ে একসময় খাদ্যের প্রতি যেমন
মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, ঠিক তেমনি এক সময়
আমি ও কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি
তবে না থাকুক ১খন্ড কৃষি ভূমি,
আছে ৮ইঞ্চি বাই ১১ ইঞ্চি ক্ষেত্রের সামান্য কাগজ,
কখনো কাগজের টুকরো খন্ডিতাংশ
সেখানেই দিবানিশি শব্দের কৃষিকাজ,
এখন পুরোদমে কৃষক আমি-
রাত দিন চষে যাই এভূমি ওভূমি
রপে চলি শব্দের চারা গাছ
এখন আমি শব্দ কৃষক,
সারাদিন চষে বেড়াই,
শব্দের জন্য জমি তৈরী করি,
উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য
জৈব রসায়ন প্রয়োগ করি
আগাছা উপড়ে ফেলি, মাটিগুলো আলগা করেদিই
একসময় কর্ষিত হয়ে গেলে
শব্দের বীজ বুনি, সকালে বিকেলে পানি সেচ দেই,
এক সময় চারা জন্মায়,
বেড়ে তোলার জন্য নিবির পরিচর্যা করি
শব্দের চাঁরাগাছ বৃদ্ধি পেতে পেতে এক সময়
বেড়ে ওঠে পূর্ণাঙ্গ কাব্যের শরীর,বিজ্ঞরা বলেন কবিতা
আর সারা দিন কবিতার শরীরে আমার নিবির পরিচর্যা
কতো কি আঁকা আঁকি-
প্রতিদিন আমার কৃষিকাজের একটু একটু সফলতা যখন
বাবাকে ব্যাখ্যা করি বাবা তখন কী’যে খুশী
বাবার খুশী আমার কর্ম স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়
আর আমার এই অক্লান্ত কৃষি প্রচেষ্টা দেখে
বাবা আমার নাম দিয়েদেয় শব্দ কৃষক,
আদর করে বলে শব্দ পোকা, Word Worm
রোজ সকালো নামজ শেষে বাবা ডাকদেয়
শব্দ পোকা, শব্দ কৃষক ঘুম ভাঙ্গ
লেগে পড় শব্দ কর্মে
এখন আমার বসবাস কবিতার জমিতে
কবিতার শরীরে, আমার সারাদিন কৃষিকাজ
এখন সেই ভূমিতেই আমার বাড়ীঘর
শব্দ রোপি, যত্ন করি, শব্দ বুনি, আবার কখনো মনে হলে শব্দ নিয়ে খেলি
কখনো মধ্যরাতে জেগে উঠে শব্দ নিয়ে বসে পড়ি
মোটকথা এখন আমার প্রতিদিনের কর্মযজ্ঞ
হলো শব্দ কৃষি,
আর আমি সেই গৌরবান্বিত পেশার
আদিম কৃষক -


-------------------------- ১৭ /১১ /২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।