কবি রাফিয়া আক্তার এর "একবার বলা ভালোবাসা"
- রফিকুল ইসলাম রফিক ১৫-০৫-২০২৪

কোমলমতি কিশেরী মনে অংকিত প্রথম প্রেম আজীবন চির ভাস্বর হয়ে থাকে তার মনের ক্যানভাসে। সে প্রেমের সফলতা পেলেও, না পেলেও। ভালোবাসার চরম ও পরম ধারক ও বাহক আমাদের নারী জাতির মনবাগানে যুগে যুগে, কালে কালে বেশি বেশি করে ফুল ফোটে ভালোবাসার, আত্মিক বন্ধনের। কারণ ওরা তো নদীর মতো নরম। আর পুরুষ - ওরা তো পাহাড়ের মতো নিষ্প্রাণ খটখটি প্রেমিক। তাই আত্মার সাথে আত্মার যে অপার প্রেমের বন্ধন তা পুরুষের চেয়ে অনেক অনেক বেশি মাত্রায় সৃষ্টি হয় নারী হৃদয়ে। পুরুষ তার জীবনের প্রথম প্রেম পরশ যতটা সহজে ভুলে যায়- নারী কিন্তু তা পারে না। সে সেই স্পর্শ ভুলতে পারে না কোনোদিন। আজীবন সেই প্রেমকে ধারণ, বহন ও লালন করে তার মনের ভেতর। তাই বিরহ বেদনায় আজীবন প্রজ্জ্বলিত হয় নারীমনই বেশি বেশি করে। এমনি এক অনবদ্য জীবন চেতনার অনুপম কাব্যগাঁথা কবি রাফিয়া আক্তারের কবিতা "একবার বলা ভালোবাসা"।
নারী তার মন যদি একবার কাউকে বিলিয়ে দেয়- তা আর সে ফেরত নিতে পারে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনটিই পরিলক্ষিত হয়। তাই পুরুষ যদি একবার কোনো নারীকে বলে বসে ভালোবাসি - সে নারী তা নিয়ে নেয় আজীবনের জন্যে। পুরুষ হয়তো তা বলে ফেলেছিলো সময়ের আবেদনে। নারী কিন্তু তা ভাবে না, ভাবতে চায় না। সে আজীবন অপেক্ষা করে ভালোবাসার মানুষটির জন্য। সে নিজেকে সংরক্ষণ করে রাখে প্রেমিকের নিকট উপস্হাপনের জন্য। তাই সময়ের ডাকে সাড়া দেয় না এই নারী। জীবনের উত্তপ্ত বেলায় - ভালোবাসার চরম তৃষাতুর বেলায়ও নারী তাই নিজেকে সংরক্ষণ করে। কবির ভাষায়-
তোমার একবার বলা "ভালবাসি "কে আমি হাজারবার ভালবেসেছি।
হাস্নাহেনার চোরা চাহনী আর ধুতরার বিষ মিশিয়ে
রাতের শেফালীর বুকে কিশোরী প্রেম আগলে রেখেছি
চেয়েছি কেবল ঘাসফড়িঙের চঞ্চলতা।
একটা মেঘহীন আকাশ,।
কিন্তু সময় হেসেছে মুখ টিপে। ভালোবাসার মানুষটিও ফিরে তাকায়নি তার দিকে। চরম দুঃসময় পার করে নিজেকে টিকিয়ে রাখা, সে তো ঐ প্রিয়জনের কাছে আশ্রয় প্রাপ্তির জন্যই। তা কিন্তু শেষমেষ হয়নি। এমনি এক জীবন যন্ত্রনায় কেঁদে উঠেছে কবি মন। তিনি হয়ে উঠেছেন দুনিয়ার সকল নারী জাতির প্রতিনিধি। তাই তো কবির আর্তনাদ-
তোমাকে আকাশ করে সারারাত জেগে একটি মধুর
ভোরে ডুব দেব তাই বসে আছি রাতের পরের রাত
কত যে বয়ে গেল ঝড় ঝরে পড়ল নক্ষত্ররা বয়সের ছোঁয়ায়,
ধ্রুবতারাও বুড়িয়ে গেল, কালপুরুষ ও দিক বদলালো
তুমি আশ্রয়হীনাকে একটা ভোর দিলেনা।
এ আর্তনাদ কবির একার নয়। তিনি আপন অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন ঠিকই। কিন্তু তার অনুভূতি ভাবের গভীরতায়, প্রকাশের কাব্যিক কৌশলে তা আর তার একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি হয়ে থাকেনি। হয়ে গেছে সার্বজনীন জীবনানুভূতিতে রূপান্তরিত। আর এখানেই একজন জীবন শিল্পীর সার্থকতা। যখন উচ্চারিত হয়-
"ধ্রুবতারাও বুড়িয়ে গেল, কালপুরুষ ও দিক বদলালো
তুমি আশ্রয়হীনাকে একটা ভোর দিলেনা।" অথবা-
"কিশোরী ঘুঙুর আলতা পায়ে মেখে
তোমার ঐ একবার বলা " ভালবাসি " কে হাজারবার ভালবাসি বলতে রাতের শেষ প্রান্তে এসেও তোমাকেই ডেকেছি।।"
তখন মনে হয়- এ কথা কবির একার নয়। পুরো মানব জাতির। আশ্রয়হীনা প্রেম বিরহ কাতর সমগ্র নারী জাতির। এ কাব্য নির্মাণে কবি মৌলিক। এমন অনবদ্য সুন্দর একটি জীবন গাঁথা উপহার দেবার জন্য কবিকে জানাই হৃদয়ের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং অভিনন্দন। প্রিয় পাঠক নিচে কবির পুরো কবিতাটি তুলে ধরলাম।

একবার বলা ভালবাসা
রাফিয়া আক্তার
--------------------------
শৈশবের অবুঝ দস্যিপনা ছেড়েই কিশোরী বেলার
শিউলী কুড়ানো ভোর গায়ে মেখে যখন মধ্যাকাশের সূর্যের উতপ্ত আগুনে পথ চলেছি
তখন ছাতি ফাটা তৃষ্ণায়
মরুদ্যানের খোঁজে তোমার বুকে আশ্রয় চেয়েছি।
বিশাল আকাশের গায়ে যেন কাঁটার মসৃণ আঘাত
ছেঁড়া খোঁড়া হৃদয় নিরাপদ আশ্রম চায়।
তোমাকে আকাশ করে সারারাত জেগে একটি মধুর
ভোরে ডুব দেব তাই বসে আছি রাতের পরের রাত
কত যে বয়ে গেল ঝড় ঝরে পড়ল নক্ষত্ররা বয়সের ছোঁয়ায়,
ধ্রুবতারাও বুড়িয়ে গেল, কালপুরুষ ও দিক বদলালো
তুমি আশ্রয়হীনাকে একটা ভোর দিলেনা।
ধার করে শব্দ চেয়ে এনে কত যে কবিতা সৃষ্টি হলো,
চুরি করে এনেছি মাধবীলতার সুবাস দিয়েছি তোমাকে
তোমার একবার বলা "ভালবাসি "কে আমি হাজারবার ভালবেসেছি।
হাস্নাহেনার চোরা চাহনী আর ধুতরার বিষ মিশিয়ে
রাতের শেফালীর বুকে কিশোরী প্রেম আগলে রেখেছি
চেয়েছি কেবল ঘাসফড়িঙের চঞ্চলতা।
একটা মেঘহীন আকাশ, অঙ্কুরিত সবুজে আছড়ে পড়া
ঢেউ,রাত, নদী, নক্ষত্র, কিশোরী ঘুঙুর আলতা পায়ে মেখে
তোমার ঐ একবার বলা " ভালবাসি " কে হাজারবার ভালবাসি বলতে
রাতের শেষ প্রান্তে এসেও তোমাকেই ডেকেছি।।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।