কোন এক শীতের রজনীতে
- কামরুজ্জামান সোহেল ১৭-০৫-২০২৪

শীতের এই রাত্রিতে আকাশটা ভীষণ ভারী
নিস্তব্ধ রজনীতে নেই প্রাণের কোন অস্তিত্ব
ব্যস্ত নগরীর কোলাহলও থেমে গেছে
আলোর ঝলকানি কমে আসছে ক্রমান্বয়ে,
চারিদিকে শুধু শূন্যতার হাহাকার।

আজ আমি এক যাযাবর পথিক
গন্তব্য ভুলে হাঁটছি পথের বাঁকে
নিয়ম মেনে আর ঘরে ফেরার তাড়া নেই,
দু'চোখ যেদিকে ছুটে আমি তার অনুসরণে
কোন প্রকার ব্যস্ততা নেই প্রতিদিনকার চক্রযানের যাত্রী হবার,
দুচোখে যেখানে নামবে রাজ্যের ঘুম
সেখানেই হবে অভাগা পথিকের রাত্রিযাপন।

শুরু হলো একাকী পথচলা
শীতের তীব্রতা বেড়ে চলেছে ক্রমাগত,
পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছি আগামী পথে
প্রতিটি পদে পদে বেড়ে চলেছে রাতের গভীরতা
অদূরে অপেক্ষায় সোনালি ভোরের বরণ ঢালা।

কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হতেই নিজেকে আবিষ্কার করি
কোন এক অচেনা গলির মোড়ে,
শরীরে ক্লান্তি ঘিরে ধরেছে প্রবলভাবে
ঠান্ডায় হাত পা জমে গেল ভীষণ
উষ্ণতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম খুব।

একটু দূরত্বে আগুনের অস্তিত্ব চোখে পড়ল
হেঁটে গেলাম তার খুব কাছাকাছি
তিনজন পথশিশুর উষ্ণতার আশায় এই আয়োজন
গায়ে শীতবস্ত্র নেই বললেই চলে।
হঠাৎ আমার অনুভতি জাগলো
আমার এত কিছু থাকা স্বত্ত্বেও শীতে কাবু
আর ওরা...???
কোন প্রকার চিন্তা ছাড়া আমিও তাদের সঙ্গী হলাম
মুহূর্তেই ভুলে গেলাম আমি কে? কি আমার পরিচয়?

ধীরে ধীরে আগুনের তেজ কমে আসছে
কিন্তু শীতের তীব্রতা গুণিতক হারে বাড়ছে।
তাদের কাছে জানতে চাইলাম
কি করবে এখন,
কোন প্রকার উত্তর না দিয়েই
চলে গেল ফুটপাথে পাতানো বিছানায়
গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়ল পরস্পর জড়াজড়ি করে।
আমার কোথাও যাওয়ার নেই
তাই নিজেকে ঠাঁই দিলাম তাদের পাশে
গায়ের চাদর বিলিয়ে দিলাম তাদের উপর।

দুচোখে ঘুমের অস্তিত্ব নেই
ফুটপাথে শুয়ে রাতের আকাশ দেখছি নিশ্চিন্তে,
পাশের তিনজনের দিকে দৃষ্টি গেল
ওরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে,
এখন শুধুই ভোরের প্রতীক্ষা।

প্রভু তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ
এমন একটি রাত্রির জন্য
জীবনে নতুন এক অনুভূতি সংযোজনের জন্য।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।