সহজ মন
- গোরাচাঁদ বসুনিয়া - গোরাচাঁদ বসুনিয়া ১৫-০৫-২০২৪

> ভাই ২টাকার বাদাম দেন তো। বাদাম ওয়ালা লোকটির দিকে তাকিয়ে বললো, ..>> স্যার ৫টাকার দিয়া দেই? ভালো বাদাম খাই মজা পাইবেন।.>>লোকটি হেঁসে বলল, আমার থেকে যে শুধু২টা টাকাই আছে?.কিন্তু বাদাম ওয়ালা জানেনা এই ২টাকার বাদাম আর ১গ্লাস পানিই ভদ্রলোকটির আজকের দুপুরের খাবার।.>> বাদাম ওয়ালা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো, ভাই আপনি কি করেন?.>> লোকটি বললো, আমি একজন ছাত্র। লেখাপড়া করি।.>> ও, তাহলে স্যার টাকা লাগবেনা। অন্যদিন টাকা দিয়েন। নিজেতো পড়ালেহা করতে পারিনাই, তাই আপনেরে সম্মান কইরা এই বাদাম দিলাম। টাকা লাগবনা স্যার।.লোকটি আর কিছুই বল্লনা, তার দেয়া ৫টাকার বাদাম নিয়ে হাঁটা শুরু করলো, আর একটা একটা বাদাম খেতেলাগলো।- ২টা টাকা দেন স্যার, সকাল থেকেকিছু খাইনাই।.লোকটি দেখলো ৭/৮ বছরের একটা ছেলে। তার পরনে ১টা ছিঁড়া শার্ট আর ছিড়া পেন্ট, অগোছালো চুল, খালি পা।>> কি নাম তোমার?.>> জ্বি মেহেদী, স্যার।.>> বাহ্, সুন্দর নাম। তোমার বাসায় কেকে আছেন মেহেদী?.>> কেউ নাই স্যার, আমি এতিম, সামনের বস্তিতে থাকি।.লোকটি আর কিছু বললো না, তার পকেটে থাকা শেষ সম্বল ২টাকা আর কিছু বাদাম ছেলেটি কে দিল।.ছেলেটি ২টাকা আর বাদাম নিয়ে চলে গেলো।.লোকটি তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়েআছে আর ভাবছে, সে যে ছেলেটিকে প্রাইভেট পড়ায়, মাসের শেষ, ওইখান থেকে আজ টাকা পাবে সে।.টাকা টা পেলেই সে মেহেদীর জন্য নতুন শার্ট পেন্ট কিনবে। ৩প্যাকেট বিরিয়ানী কিনবে। একটা নিজের জন্য, একটা সেই বাদাম ওয়ালা জন্য আর আরেকটা মেহেদীর জন্য।.তারপর বস্তিতে গিয়ে মেহেদীকে নিয়ে আসবে। তার পর তাকে নতুন শার্ট পেন্ট পরিয়ে দিয়ে ৩জনে মিলে এক সাথে খেতে বসবে।.এইসব ভাবতেই অনাবিল এক সুখ অনুভব করলো লোকটি।.বিকাল ৫টা।..লোকটি তার ছাত্র কে পড়াচ্ছে।>> স্যার একটা কথা বলি? ..>> বলো সায়েম। যদি উত্তর জানা থাকে দিবো, আর যদি না জানি, আমাকে মাফ করে দিও।.>> আপনি অনেক ভালো স্যার। আপনার মত কেউকে আমি দেখিনি। আচ্ছা স্যার, নীল রং কি আপনার প্রিয় রং?.>> হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন সায়েম? ..>> না মানে, সেই প্রথম দিন থেকে দেখছি আপনি নীল রং এর শার্ট পড়ে আসছেন। তাই বললাম আর কি।.>> না সায়েম, আসলে আমার একটাই শার্ট তো, প্রতিদিন রাতে ধুয়ে শুকাতে দেই, রাতে শুকিয়ে যায়, দিনে আবার পড়ে বের হই, আমার প্রিয় কোনো কালার নাই সায়েম। আর নেই বলেই ধরে নাও এটাই আমার প্রিয় কালার।.সায়েম নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি।বসা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায় আর খুব কান্না করতে থাকে। নিজেকে খুব অপরাধী ভাবতে থাকে। কেন সে স্যার কে এই কথা টা জিজ্ঞেস করলো। সে তার মাকে ডেকে বললো, আজ সে তার পড়বেনা।.সায়েম এর মা এসে লোকটিকে বললো, স্যার সায়েম তো আজ আর পড়বেনা। আপনি কাল আসেন আর এই নেন এই মাসের বেতন।.টাকা টা নিয়ে সে বের হয়ে আসে, নিজেকে খুব সুখি ভাবতে থাকে সে। সায়েম এর বাসা থেকে বের হয়ে সে মার্কেট এর দিকে গেলো মেহেদী নাম এর সেই এতিম ছেলেটির জন্য শার্ট পেন্ট কিনতে।.আর এইদিকে তার ছাত্র সায়েম, তার জমানো কিছু টাকা আর মা থেকে কিছু টাকা নিয়ে বের হল বাসা থেকে। সায়েম ভাবছে সে তার স্যার জন্য সুন্দর একটা জামা কিনবে। কিনার পর স্যার এর বাসায় যেয়ে দিয়ে আসবে। কথাটা ভাবতেই সায়েম এক অনাবিল সুখ অনুভব করতে শুরু করলো।.বেশ কিছুক্ষণ পর।..স্যার এবং ছাত্র ২জনেই রাস্তায়। ২জনেরি ভাবনা এক। তারা একি কথাই ভাবতে থাকে। কথাটা হচ্ছে,.মাঝে মাঝে অন্যকে কিছু দেয়ার মাঝেওপ্রকৃত সুখ জিনিসটা খুব ভালভাবেই উপভোগ করা যায়।.মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্যার সেই মেহেদী নাম এর এতিম ছেলেটির জন্য নীল রং এর শার্ট এবং নীল রঙ্গেরি পেন্ট কিনেছে।.আবার স্যার এর ছাত্র সায়েম ও স্যার এর জন্য নীল রং এর শার্ট কিনেছে।.স্যার এবং ছাত্র ২জনেই ভাবতে থাকে, আচ্ছা, নীল রং এর নিলাম কেন? কষ্টের রং তো নীল?.আবার ২জনেরি ভাবনার জগতে মনে হল, মাঝে মাঝে সুখের রং ও নীল হওয়া উচিত। এতে দোষের কিছু নেই। ।।.

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।