রক্তাক্ত আগষ্ট ও বঙ্গবন্ধু
- কামরুল হাসান তুহিন ১৫-০৫-২০২৪

পঁচাত্তরের আগষ্ট দেখিনি,
দেখিনি সেই রক্তাক্ত প্রভাত! শুনেছি,
তোমার লোমশ বুকটা বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করতে
নৃশংস দক্ষতায় এতটুকু কাঁপেনি
আততায়ীর কালো হাত।
সেই একটি ঘাতক রাত স্তব্ধতায় ঢেকে দিয়েছিল-
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির বুকের আলোড়ন।
আর সেই সাথে, কালো কফিনের আঁধারে
সেলাই হয়ে গিয়েছিলে
তুমি-বঙ্গবন্ধু!
এই বাংলার মাটিতে থেমে গিয়েছিল,
তোমার অসম্পূর্ন জীবনের হাসি-কান্নার ইতিহাস।

সত্যিই কি থেমে গিয়েছিল?
না, থামেনি! ঘটনারা থেমে থাকে না-
ইতিহাস হয়ে, পায়ে পায়ে এগিয়ে চলে,
অবশ্যম্ভাবী অনন্তের পথে...!

আগষ্ট দেখেছি আমার শৈশবে,
দাদুর চশমার ঘোলা কাঁচ আরো ঘোলা হতে হতে,
বাবার দু'চোখ ঠিকরে বের হওয়া আগুনের ফুলকিতে,
মায়ের চোখের অবিরত শ্রাবণ-ধারায় বুকভেজা দুঃসহ আতঙ্কে,
দুর্ভিক্ষে, ক্ষুধা-তৃষ্ণার কাতরতায়,
সদ্যজাত মানচিত্রের পিতৃবিয়োগের নিস্তব্ধতায়....!

আগষ্ট দেখেছি আমার কৈশরে,
যেখানে অবাধে পুশইন হয়েছে দুর্নীতির এইডস, জনতার রক্তে।
যেখানে দেখেছি একাত্তরের ঘাতক, ঘৃনিত রাজাকারেরা,
ক্ষমতার ভাগ পেয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে তর্জনী উঁচিয়ে মিডিয়ায় কথা বলে,
গাড়ীবহরে পতপত ওড়ায় লাল-সবুজের পতাকা।
সেজদায় সেজদায় কপালের কালো পবিত্র ঈমানী চিহ্নের
বিকিকিনি দেখেছি লোভ আর ক্ষমতার হাট-বাজারে।

এখন আগষ্ট দেখছি, যৌবনে!
স্মরণ সভায়, সেমিনারে, সিম্পোজিয়ামে, মঞ্চে, মিছিলে,
বক্তৃতায়, ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে, টুঙ্গিপাড়ায়,
থরে থরে সাজানো ফুলের তোড়ায়,
এক মিনিট নিরবতায়...! দেশব্যাপী কাঙালী ভোজের চাঁদাবাজিতে।
চারটি দশক পেরিয়ে, অবশেষে-
ফাঁসীর মঞ্চে, বিচারালয়ে..!

আবার আগষ্ট দেখব, বার্ধক্যে!
যেখানে বাঙালিরা আর থাকবে না দ্বিধা-বিভক্ত,
বক-ধার্মিকের দৃষ্টিতে ঝরবে না লালা,
নারীরা হবে না আর তেতুঁলের লোভনীয় চাটনি,
শহীদের আত্মারা ফেরারী ঘুরবেনা বধ্যভূমিতে,
জয় বাংলার শাণিত শ্লোগানে আবার মুখরিত হবে
আগামীর সকল বাঙালি।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পলি জমা উঠোনে-
আগামীর প্রজন্ম নির্ভয়ে করবে বাহারি কবিতার চাষ।

আর এভাবেই ঘটনাগুলো ইতিহাস থেকে ইতিহাস হয়ে-
পায়ে পায়ে এগিয়ে যাবে,
অবশ্যম্ভাবী অনন্তের পথে...!

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।