সমর্পণ, এই শব্দটি কীভাবে আমার হল
- অনুপম হক ১৭-০৫-২০২৪

একটি নিবেদন করা হবে তার জন্যে প্রতীক্ষার উষ্ণতা নিয়ে
একজন, কেবলই একজন নির্লিপ্ত বাউণ্ডুলে ব’সে আছে
নির্জনতার নিঃস্তব্ধ ভাঁজে: কখন আসবে ফুল্লরী?

এই শ্মশান সেদিন ছিল না,
এই রুক্ষ কাঠের সেতু সেদিন ছিল না,
এই ঝিকিমিকি বেপরোয়া সকাল সেদিন ছিল না।
তা হ’লে কেমন ছিল সেদিনের সেই সকালবেলাটি?
তা হ’লে কেমন ছিল শ্মশানে, সেতুতে, প্রহরাল্যে, ঝরাপাতায়
ছেয়ে যাওয়া এই সীমান্তের শুষ্ক প্রান্তরটি?

জানি, সেদিনের সব ছবি বিকৃত করতে হয়েছে উন্মুখ
রংবাজ মিডিয়া। তাই দেখি এই প্রেমিকহীন ফিকে হিজলতলে আজ
প্রেমিকের বিরুদ্ধে প্রেমিক,
ঢেউয়ের বিরুদ্ধে ঢেউ,
সকালের বিরুদ্ধে সকাল,
শ্মশানের বিরুদ্ধে শ্মশান,
মাঘের বিরুদ্ধে মাঘ...।

হে অস্ফুটিত মুকুল, হে ভবিষ্যতের প্রেমিক
নদীবর্তী গেরুয়া পথে হাঁটতে-হাঁটতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
তুলে রেখে যাচ্ছি সেই অবিস্মরণীয় সকালের গল্প।
সেদিন এই সীমান্তের দৃশ্য ছিল অন্যরকম।
না পিচ না নতুন বসতি— এসবের চিহ্নও ছিল না,
শুধু দ্বীপের বিচ্ছিন্ন ঝোপঝাড় যেরকম, সেরকম ঝিম মারা
বেনামি লতাগুল্ম ছিল, মেঘের ছায়ায়।
সঙ্গপ্রিয় সতীর্থরা সেদিন আমাকে অন্তর্জালে পায় নি
পরে জানিয়েছে কেউ কেউ।
গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে সেদিন নারায়ণ আসে নি,
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিখিলেশ আসে নি,
কেননা কাউকে বলি নি।
পিঠে জাল ফেলে জেলে আসে নি, হাতে কঞ্চি নিয়ে রাখাল বেরোয় নি
কেন যেন তোমাদের মতো পাতা-কুড়ানি শিশুরাও ছিল না!
একটি বাঁধ ভাঙতে যাবে, তার জন্যে কী অস্থির
পথ-চাওয়া আমার: কখন আসবে ফুল্লরী? কখন ছুটবে লহরী?

সহস্র প্রহরের অজস্র উদগ্রীবতা শেষে
মোনা লিসার মতো নিক্বণ-পায়ে হেঁটে
অতঃপর ফুল্লরী এসে বসল ফুলের জলসায়।
তখন সহসা নামিল বরষা, মগজে ঝরিল জল
নাকে জমিল ঘামের বিন্দু, থেমে গেল
কোলাহল। এড়ানো যায় তার মর্মস্পর্শী কথা?
একরকম গ্রেফতার ক’রেই ফুল্লরী শোনাল তার অগীত সেই গান:
তুমি তো আমারই আহা মরি মরি
মিশেছি তোমাতে গহীন সুতোয়।

সেই থেকে সমর্পণ শব্দটি আমার।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।