কবি এম. সোহেল রানা সরকার এর "হাভাত"
- রফিকুল ইসলাম রফিক ১৫-০৫-২০২৪

কবি এম. সোহেল রানা সরকার এর "হাভাত"
.........................রফিকুল ইসলাম রফিক

পৃথিকীকে আপনার করে এবং আপনাকে পৃথিবীর করে দেয়াই শিল্পীর মহান দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে যিনি যতোটা সফল শিল্পী হিসেবেও তিনি ততোটা সফল। তেমনি এক সার্থক জীবনচিত্র কবি এম.সোহেল রানা সরকর এর কবিতা "হাভাত"।
শিল্পী জয়নুলের কালজয়ী চিত্রশিল্প এই দৈন্যদশা মানুষের ছিয়াত্তরের ছবি - যেমনটি তিনি এঁকেছিলেন- আজো তেমনটিই আছে। এই যে জীবনচিত্র আজো মানুষের জীবনে বর্তমান। আমাদের নিম্নবিত্তের জীবনে আজো পরিবর্তন আসেনি। জীবন যন্ত্রনায় তারা প্রতিনিয়তই দগ্ধ। এখনো অনেক মানুষ আছেন যাদের কাছে পেটের ক্ষুধা নিবৃত্তিই মুখ্য বিষয়। এখানে কবি ইমদাদ হোসেন বাপুল এর একটি কবিতার নিম্নোক্ত অংশটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য
"হুকুমের তাবেদার হাতে নেয় কাস্তে
সুখ পেতে চায় না সে চায় শুধু বাঁচতে।"
ঠিক তেমনি আমাদের কবি সোহেল রানা সরকার এর অন্তর কেঁদে ওঠে। কবি গেয়ে ওঠেন--
"সোনালী প্রভাত আসেনা নিম্নবিত্তের আকাশে,
সূর্য্যের মুখে জয়নুলের আঁকা
ছিয়াত্তরের ছবি,
ধুলো জমে না কখনো, কোন কালে।
.
চিরাচরিত, চির পরিচিত হাভাতে মুখগুলো
চেয়ে থাকে আশায়, দু মুঠো ভাতের জন্য,
দু-পয়সার জন্য নামতে হয় পথে।"
কিন্তু প্রগতির এই যুগে এই শ্রেণীর মানুষগুলোও ভাবতে চায় একটু অন্যরকম। সময়ের বাতাস এদের গায়েও না লেগে পারে না। কারণ গাঢ় অন্ধকার শেষে রংচটা হলেও সকাল কিন্তু আসে। আর জীবিকার জন্য এই সকাল থেকেই শুরু হয় তাদের জীবন যুদ্ধ। এর পরেও সময় ঘড়ির এলার্ম বেজে ওঠে অন্তরে। নিয়ে যায় মৌ বনে মধুভরা চাকের কাছে। কবির ভাষায়-
"গাঢ় অন্ধকার শেষে রঙচটা সকাল
নতুন ব্যস্ততার ফর্দ হাতে কড়া নাড়ে দরজায়,
ঘড়ির এ্যালার্ম যেন ঢিল ছোঁড়ে
মধুঘুমে পরিপূর্ণ টসটসে মৌচাকে।।"
জীবন যন্ত্রনায় দগ্ধ মানুষের হতাশা, বর্থতার কথা যেমন এই কবিতায় বলা হয়েছে- তেমনি গভীর আশাবাদও এখানে লক্ষণীয়। যা জীবন শিল্পীর নিকট থেকে হতাশ মানুষ আশা করে। তাই তো কবি বলেন-
"প্রিয় মুখ চেয়ে দ্যাখে প্রশান্ত চোখ
হতাশা লেখাই থাকে অস্থির বুকে,
ক্লান্ত হাত তবু কবিতার ছবি আঁকে কাগজের পাতায়"
সবমিলিয়ে এই কবিতাটি কবির একটি অনন্য সৃষ্টি। প্রিয় পাঠক নিচে কবির পুরো কবিতাটি আপনাদের জন্য তুলো ধরলামঃ

হাভাত
এম.সোহেল রানা সরকার
।।
গাঢ় অন্ধকার শেষে রঙচটা সকাল
নতুন ব্যস্ততার ফর্দ হাতে কড়া নাড়ে দরজায়,
ঘড়ির এ্যালার্ম যেন ঢিল ছোঁড়ে
মধুঘুমে পরিপূর্ণ টসটসে মৌচাকে।।
.
সোনালী প্রভাত আসেনা নিম্নবিত্তের আকাশে,
সূর্য্যের মুখে জয়নুলের আঁকা
ছিয়াত্তরের ছবি,
ধুলো জমে না কখনো, কোন কালে।
.
চিরাচরিত, চির পরিচিত হাভাতে মুখগুলো
চেয়ে থাকে আশায়, দু মুঠো ভাতের জন্য,
দু-পয়সার জন্য নামতে হয় পথে।
.
প্রিয় মুখ চেয়ে দ্যাখে প্রশান্ত চোখ
হতাশা লেখাই থাকে অস্থির বুকে,
ক্লান্ত হাত তবু কবিতার ছবি আঁকে কাগজের পাতায়।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।