উজানচর
- কাফাশ মুনহামাননা ২১-০৫-২০২৪

ঘুম থেকে উঠে রোজ ভোরবেলায় হাঁটতে বের হই আমি।
আমার বাড়ি চরের ডেরায়।
চরের নাম 'উজানচর'। স্থানীয়দের কাছে 'উজানের চর'।
চরের নামকরণের ইতিহাস খুবই সাধারণ।
নদীর ভরা উজানেও দূর থেকে এই চর জেগে থাকে -
আপন মহিমায়, আপন গরিমায়।

চরের পার আর নদীর তীর ঘেষে হেঁটে বেড়াই আমি।
ফুরফুরে বাতাসমেয়েদের সাথে পথ চলতে চলতে
কখন যে সমস্ত তীর চক্কর দিয়ে ফেলি বুঝতে পারি না!
অবশ্য আমাদের চরের আয়তনও খুব বড় নয়।
সর্বসাকুল্যে চার কিলোমিটার বা তার একটু বেশি হবে।

নারীর সাথে আমাদের চরের অদ্ভুত এক মিল আছে।
সেই মিলটা হলো সৌন্দর্যে, রূপলাবণ্যে, নিবিড় মায়ায়।
একবার তাকে দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য।
এই চরের প্রেমকে আলিঙন করে বেচে থাকে
আমাদের চরের অবিবাহিত আর অতিবাহিত পুরুষকুল।

আমার এখনো বিয়ে হয় নি, সম্ভাবনাও কম।
বয়সও তো অনেক হলো।
এই বয়সে বিয়ে করে শুধু শুধু একটি মেয়ের জীবন -
তার অর্ধবয়সে থামিয়ে দেয়ার মানে হয় না কোনো।
তার চেয়ে ভালো রোজ ভোরে
চরের কূল ছুঁয়ে ছুঁয়ে
চর আর নদীর মিলনোৎসব দেখি।
আর দেখি পানকৌড়ির জল নিয়ে টোকাটুকি খেলা।

এইভাবে বেশ যাচ্ছিলো।
একদিন ভোরে হাঁটতে গিয়ে দেখি একটি নৌকো দুলছে।
তীরের খুব কাছাকাছি।
নৌকোর পাল'টা ছিঁড়ে পড়ে আছে ছিন্নভিন্ন।
গতরাতে খানিক ঝড় বয়ে গেছে আশেপাশে। অবশ্য -
চরের ডেরায় ঝড় তো আমাদের প্রায়শই মেহমান থাকে।

আমি নৌকোর দিকে এগিয়ে গেলাম।
দশ পা এগোতেই হলুদ রঙের কিছু একটা চোখে পড়লো।
কলিজার গোড়ায় আচমকা কে যেনো খামচে ধরলো।
মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলাম যাতে -
অনুচিত কিছু না ঘটে।
ভয়ের রাজ্যের নাগরিক এখন আমি আর বাতাসমেয়েরা।

পৌছে গেলাম নৌকোর কাছে।
পৌছেই আমার হুশ যেনো উড়ে গেলো দূরে কোথাও।
ছিন্নভিন্ন পাল'টা যেখানে পড়ে ছিলো,
তার নিচেই একটি ধবধবে পা আমার চোখে পড়লো।
দেখেই বুঝলাম কোনো মেয়ের পা হবে।
ওই পায়ের ওপর জড়িয়ে ছিলো হলুদ শাড়ি।
হলুদ বরণ গায়ে হলুদ রঙের শাড়ি।

আমার ভেতরটা শুকিয়ে নৌকোর মতো কাঠ হয়ে গেলো।
ছিন্নভিন্ন পাল'টা সরাতে লাগলাম দ্রুত।
যখন মেয়েটার মুখ বের হয়ে এলো,
আমি তাজ্জব বনে গেলাম!
মেয়েটির রূপ একেবারে আমাদের চরের মতো।
দেহ নিথর, তবুও ভোরের সূর্যের মতো আলো ঢালছিলো।
চরের মতোই প্রথম দেখায় যার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হয়।
মেয়েটিকে কাঁধে চেপে পারে এনে তুললাম।
কিছুক্ষণ আকাশে তাকিয়ে তারপর ভাবতে লাগলাম -
আমাদের চরের এই যে নারীরূপ মায়া,
তার পেছনে এমন কোনো ঝড়ের রাতের খেল নেই তো?

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।