ফেলে আসা দিন
- কাফাশ মুনহামাননা - আমাদের পাবার কিছু নেই, হারাবারও কিছু নেই ২১-০৫-২০২৪

সেদিন তুমি দাড়িয়ে ছিলে এখানটায়।
দেয়ালের এপারের ফুটপাতের ঠিক মাঝ বরাবর।
ওপারে ছিলো নাম-না-জানা ছায়াসুন্দর একটি গাছ।
তবুও তোমার কপাল চুয়ে ঘাম ঝরছিলো বেগে।
বাতাসে ছিলো মধ্যদুপুরের প্রচণ্ড আগুন।
রাস্তায় ছিলো মানুষের তীব্র ছোটাছুটি।
আমি দিশেহারার মতো
আগুন আর শতকোটি নিঃশ্বাসের দাহে ভড়কে গেলাম।

তোমাকে গন্তব্যে পৌছে দিতে
আমদের একটা গাড়ির প্রয়োজন ছিলো।
তোমাকে দাড় করিয়ে তাই নেমে এলাম রাস্তায়।
আমার মতো বাকি লোকেরাও ছিলো গাড়ির খোঁজে।
যোগানের অপ্রতুলতায় চাহিদা গিয়ে ঠেকলো আকাশে।
গাড়ি মিলছে না তাই কারোরই।
আমার যেমন করে হোক একটা গাড়ি চাই।
কিন্তু যতোই এদিকওদিক ছুটলাম,
গাড়ি পেলাম না।
যা-ও দু'একটি পেলাম, তা ছিলো অন্য ঠিকানার।

আমি বারবার ফিরে ফিরে
তোমার মুখে দেখছিলাম।
দাড়িয়ে থাকতে তোমার কষ্ট হচ্ছে দেখে
মনের ভেতরটা হু হু করে উঠলো।
রাগে ইচ্ছে করছিলো
সব গাড়ির লাইসেন্স জব্দ করে দেই।
আর ড্রাইভার সবকটাকে চোদ্দশিকে পুরে দেই।
কিন্তু পারলাম না। কারণ আমি ম্যাজিস্ট্রেট নই,
নই কোনো উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা।
এ যাত্রায় তাই গাড়ি আর ড্রাইভার দুটোই বেচে গেলো।

একলিটার পানি কিনে আনলাম তোমার জন্যে।
যেভাবে ঘাম বেরুচ্ছিলো তোমার নাকমুখ বেয়ে,
আমার ভয় হচ্ছিলো খুব কখন যেনো পানিশূন্যতায়
অজ্ঞান হয়ে পড়ো!
না, তুমি পড়ো নি। পড়বেই বা কেনো?
সাহস-শক্তি দুটোই আছে তোমার পর্যাপ্ত।
নয়তো কি তুমি ওই মুহুর্তে বলতে, 'আপনার
কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো?'

আমি নির্বাক চোখে তাকিয়ে ছিলাম
তোমার চুলের সিঁড়িতে।
অভিরাম দোলনে সেখানে
মাঝেমাঝে খেলে যাচ্ছিলো রোদছায়া লুকোচুরি।
আনন্দে আত্মহারা মন এই দৃশ্য দেখে!
একফোটা ঘামের মতো পরিভ্রমণ করলাম
তোমার সমস্ত মুখ।
আবিষ্কার করলাম তোমার চোখদুটো
গাড়ির হেডলাইটের মতো।
গাড়ি থেকে মনে পড়লো আমাদের গাড়ি প্রয়োজন।
আবার নেমে এলাম দুর্ভোগের রাস্তায়।
গাড়ির খোঁজে।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।