বিএফএফ
- কাফাশ মুনহামাননা - গ্রুপ-ডিসকাশন: ভেতর-বাহির ২১-০৫-২০২৪

আমি একটা অকালকুষ্মাণ্ড।
মানুষকে আলোড়িত করার কোনো গুণই আমার নেই।
না-আছে ভালো সিজিপিএ,
না-আছে শারীরিক সুদর্শন,
না-আছে কারো সাথে কথা বলে মন্ত্রমুগ্ধ করার ক্ষমতা।
ক্লাব এক্টিভিটিজ, আড্ডা, ঘুরাফেরা -
থলিতে আমার কিচ্ছু নেই।
আমি আসলেই একটা অকালকুষ্মাণ্ড।

ইদানীং ভাষা শেখার চেষ্টা চালাচ্ছি। ইংরেজি ভাষা।
কর্মজীবনে ভালো পজিশন পেতে চাইলে -
এই ভাষায় দক্ষতা থাকা আবশ্যক।
আমার প্রাথমিক ধারণা আছে। ব্যস, এই পর্যন্তই।
ইশকুল-কলেজ মিলিয়ে যতোটুকু শিখেছিলাম,
ভার্সিটিতে এডমিশন নেওয়ার পর
ভুলতে ভুলতে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
কিছুদিন আগেও হারানোর একটা ভয় ছিলো।
এখন সেটাও নেই। দু'চোখে শুধু হতাশার বাতাসা ওড়ে।

হতাশা কমাতে আমি একটি ছক আঁকলাম।
যেভাবেই হোক, আমাকে প্রত্যহ কিছু না কিছু -
শেখতেই হবে। হারার আগে হেরে গেলে চলবে না।
আর এখন আমি বুঝে গেছি,
উচ্চশিক্ষা বলতে শুধু সপ্তাহে দশটি ক্লাশ করা নয়।
উচ্চশিক্ষা শুধু গুটিকয়েক বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়।
উচ্চশিক্ষা মানে হচ্ছে - পুরো পৃথিবী আমার পাঠশালা।
শিক্ষাজ্ঞানের এই অবকাঠামো-পরিকাঠামো
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আকাশে-বাতাসে-ভূগর্ভে, সবখানে।
তাই যেখানেই জ্ঞান পাবো, ঝাপিয়ে পড়বো।
এবারের সংগ্রাম, আমার জ্ঞানার্জনের সংগ্রাম।

আমার সংগ্রাম চলছেই। ইতোমধ্যে একদিন -
আমাদের গ্রুপ-লিডার সভা আহ্বান করলেন।
গ্রুপ-ডিসকাশনের জন্য।
কারণ, সামনে আমাদের প্রেজেন্টেশন আছে।
এই প্রেজেন্টেশন কীভাবে হবে,
কে কোন ম্যাটারিয়েল কালেক্ট করবে,
কোত্থেকে করবে, কে কে স্টেজে প্রেজেন্ট করবে -
সেগুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনার জন্য
মূলত এই সভার আয়োজন।
এরকম আয়োজন আমাদের প্রতি -
সেমিস্টারেই করা লাগে। প্রতি কোর্সেই করা লাগে।
নইলে আমরা যে বিজনেস'র স্টুডেন্টস -
তার আর বিশেষত্ব কি?
আমিও ডাক পেয়ে বেজায় খুশি। কারণ -
এখান থেকে অনেক নতুন কিছুই হয়তো শেখতে পাবো।

আমার ধারণা মিথ্যে ছিলো না।
আমি গ্রুপ-ডিসকাশনে যোগ দিতেই আবির আমাকে -
বললো, 'বিএফএফ মানে কি?'
তাৎক্ষণিক আমার মাথায় এলো -
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। আমিও তা-ই বললাম।
হোক আর না হোক, কিছু একটা আমাকে বলতেই হবে।
আমি এখন জ্ঞানচর্চা করি।
কিছু একটা না বললে তো আর মান থাকে না।
আমার কেনো জানি মনে হলো, উত্তরটা হয় নি।
তাই সমস্ত মুখে একগাল হাসি ঝুলিয়ে রেখেছি।
যাতে আমার অকালকুষ্মাণ্ডগিরি ধরা না-পড়ে যায়!

আবির আমাকে বললো, 'বোকা নাকি তুই?
এতো সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলি না।
বিএফএফ মানে - প্রবোধ'র ভবিষ্যৎ।'
মেজাজটা একলাফে চারশো বিশে উঠে গেলো।
না-পারার জ্বালা সইতে পারি, কিন্তু তাই বলে
মুখের ওপর সরাসরি অপমানের জ্বালা কি করে সই?
আমিও পাল্টা প্রশ্ন করলাম আবিরকে, 'কীভাবে সম্ভব?'
আবির আমাকে এইবার বোঝাতে শুরু করলো।

আবির লক্ষ্মীপুরের ছেলে।
ওর মতো ছেলের কাছে আমি সবসময় লক্ষ্মী -
আচরণ আশা করি। আসলেও সে লক্ষ্মী ছেলে।
শুধু আজকের ঘটনাটা ভিন্ন।
লক্ষ্মী ছেলের আরো একটা লক্ষ্মী গুণ আছে।
বোঝানোর ক্ষমতা। জটিল-কঠিন যে কোনো বিষয় -
এতো সহজ-সরলভাবে ও উপস্থাপন করে,
মনে হয় এর থেকে মজার জিনিস আর হতেই পারে না।

আবির আমাকে বলতে লাগলো, 'দেখ, বিএফএফ
একটি ইংরেজি এ্যব্রিভিয়েশন। এটাকে ভাঙলে দাড়ায় -
বেস্ট ফ্রেন্ড ফর ফিউচার। ' আমি বিস্মিত হলাম।
এইরকম কিছু একটা বের হয়ে আসবে -
কল্পনায়ও ছিলো না। আসলেই ও জিনিয়াস।
আবির আবার বলতে লাগলো, 'প্রবোধ এই
এ্যব্রিভিয়েশনটি ইফরা'র নামে উপহার করেছে।
আর উপহার মানুষ কখন দেয়?
যখন একজনের মনে আরেকজন বাসা বাঁধে,
তখনই কিন্তু এই
দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারটা আসে।
আর একটা জিনিস তুই লক্ষ্য করেছিস কিনা জানি না।
ইফরা-ও কিন্তু এই
উপহার সাদরে গ্রহণ করেছে।' আমি পুরোপুরি নিশ্চুপ।
তিন অক্ষরের ভেতর যে এমন এক মহাভারত থাকবে -
একমুহুর্তের জন্যও ভাবতে পারি নি।
আবিরের চিন্তাশক্তির গভীরতা দেখে
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
তৎক্ষণাৎ আমার রাগটা-ও
ওর ওপর থেকে পড়ে গেলো। ছেলে আসলেই লক্ষ্মী।
আবির এইবার শেষটা টানলো, বললো, ' ইফরা'র মনে
কি চলছে, তা বোঝা মুশকিল।
নারীর মন এতো সহজে বোঝা যায় না।
তবে প্রবোধ যে তলেতলে অতল গঙ্গায় ডুব দিয়েছে,
তা হলফ করে বলতে পারি। যদি কোনোদিন
ওদের একফ্রেমে ঠাঁই পাওয়ার খবর পাই। বিশ্বাস কর,
এরচেয়ে খুশির দিন আমার জীবনে আর হবে না।
তুই কি বলিস?' আমি ইতস্তত করতে লাগলাম।
ভুল উত্তরের কবল থেকে বাচতে বললাম, 'ইয়ে
মানে আমার একটু কাজ আছে। এক্ষুণি যেতে হবে।'
আবির হয়তো আমার অকালকুষ্মাণ্ডগিরি টের পেয়েছে।
মুখ টিপেটিপে তাই এদিক-ওদিক ফিরে
একটুকরো সান্ত্বনার হাসি হাসলো। লক্ষ্মী ছেলের মতো।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।