বিদায়
- কামরুজ্জামান সোহেল ১৭-০৫-২০২৪

অতঃপর দিনক্ষণ সব ঠিক হলো
মঞ্চও তৈরি করা হয়েছে মুহূর্তেই
শুধু কিছুটা আনুষ্ঠানিকতা বাকি!!

যাত্রা হবে, বরযাত্রা
শেষ বারের মতো মিলনমেলা।
দেখতে এলো দলে দলে
ভাই বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু প্রতিবেশী,
শেষ মুহূর্তের সাক্ষাতের আশায়।
সবার চোখেমুখে আনন্দ নয়
নেমে এলো শোকের নিস্তব্ধতা।
কিন্তু একি
যার উদ্দেশ্যে এতো আয়োজন
তার উপস্থিতি আছে কিন্তু অস্তিত্ব নেই।
নেই মুখে বুলি, নেই দুচোখে মায়াভরা দৃষ্টি
আছে শুধু নিশ্চিন্ত বিশ্রাম
দুচোখে রাজ্যের ঘুম।

বরকে সাজানো হয়েছে
বাহারি শেরওয়ানি দিয়ে নয়
সেলাইবিহীন তিন টুকরো সাদা কাপড়ে,
দামি দামি সুগন্ধিতে নয়
সুসজ্জিত করা হল আতর সুরমায়।
বাইরে দাঁড়ানো লাখ টাকার বাহন নয়
কাঠের তৈরি শেষ বাহন পালকি।
গায়ের মোড়ল এসে দাঁড়ালো উঠোনে
সাথে মহল্লার বয়োজ্যেষ্ঠ হুজুর সাহেব,
কবুল পড়ানোর উদ্দেশ্যে নয় এবার
পড়ানো হবে জানাজা।
হাঁকডাক শুরু হয়ে গেল
"জলদি করো সবে, বেলা যে নেমে এলো।"

বরকে আর ঘরে রাখা হবে না
এবার বরযাত্রা শুরুর ক্ষণ উপস্থিত
ঘরের বাকি সদস্যের কান্নার মাতম শুরু হবে
আকাশ ফেটে পরতে চাইবে সেই আত্মচিৎকারে
গাছপালা পশুপাখিরও হৃদয় ভেঙে হবে চৌচির,
তবুও কারো সাধ্য নেই আটকে রাখার
বিদায় জানাতে হবেই
অচেনা এক জগতের উদ্দেশ্যে।

চারজনের কাঁধে সওয়ারি হয়ে
বর যাবে জানাজার মাঠে,
সবার মুখে মুখে যপ হবে
আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর নাম
পড়া হবে মুখে মুখে কালেমা।

কিছুক্ষণ পর
জানাজা শেষে নেয়া হবে আসল ঘরে
যে ঘরে থাকতে সবে অনন্তকাল
থাকবে না বাবা মা, আত্মীয় পরিজন
স্ত্রী সন্তান কিংবা বন্ধু প্রতিবেশী।
একা এসে আবার সেই একাকীত্বের বরণ
পেছনে রঙ্গমঞ্চ ফেলে আসা।

শোয়ানো হবে নরম তোশক কিংবা
আরামের বিছানায় নয়,
শোয়ানো হবে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত
সাড়ে তিন হাত শক্ত মাটির বিছানায়।
এরপর দেয়া হবে বাঁশের চাটাই
তার উপরে মাটির চাপা।
যেখানে থাকবে না কোন অক্সিজেন সরবরাহ
যেটার মাধ্যমে শ্বাস প্রশ্বাস চলতো অবিরত।

অতঃপর পার্থিব সবকিছুর পরিসমাপ্তি।
শুরু হবে নতুন এক জগতের জীবনযাত্রা।
... বিদায়!!!!

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।