রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)
- ফয়জুল মহী ২৪-০৪-২০২৪

১ম পর্ব
রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)

সাধ-আহ্লাদ সবই আছে। আছে প্রবল ভালোবাসার অনুভূতি। ঘরবাঁধার স্বপ্নও দেখেন তারা। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে তাদের রয়েছে সীমাবদ্ধতা। শাররীকভাবে মিলিত হলেও সন্তানের মুখ দেখতে পান না তারা। তবু ঘর পাতেন। একসঙ্গে সংসার করেন। কিন্তু তাদের সংসার, ঘরবাঁধা ভিন্ন রকমের।

তাদের মধ্যে আছে বৈচিত্র্যতা। প্রত্যেক হিজড়াই একজন পুরুষ সঙ্গী খোঁজেন। পুরুষ সঙ্গীরা তাদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। এই বন্ধুকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে রাখতে চান তারা। হিজড়াদের কাছে এই বন্ধু ‘পারিক’ নামে পরিচিত। তাদের প্রেম, বিয়ে ও সংসার সম্পর্ক এবং জীবন হচ্ছে এক গোপন ট্র্যাজেডি। তাড়িখানায় রুপালির গান-নৃত্য মুগ্ধ করে তাকে। প্রেমে পড়ে যান আরমান।

আরমান বড় সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক নেতা।আর আরমানকে ভালোবেসে পেলেন রুপালি। রুপালি স্বপ্ন দেখেন আরমানকে নিয়ে। কিন্তু নিজের দুর্বলতার কথা ভেবে সাহস পান না। শেষ পর্যন্ত আরমান প্রস্তাব দিলে তিনি বলেন, ‘আমি তো হিজড়া’। আরমান প্রথমে বিশ্বাস করেন না। তার চির চেনা পৃথিবী যেন অচেনা মনে হয়,কিন্তু রুপালীকে ভুলে যাবে কিছুতে না।পরবর্তীতে হিজড়া জেনেই রুপালির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন। ছুটিয়ে প্রেম করেন তারা। তাদের মধ্যে একটা চুক্তি হয়। এই চুক্তিকে ‘বিয়ে’ বলেন হিজড়ারা। কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একটি চুক্তি করা হয়। আরমানের সব ভরণ পোষণও রুপালি বহন করেন।

রুপালি আরমানকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। তাকে কোনো কষ্ট করতে দেন না। তাকে নিয়ে দেশ-বিদেশে বেড়াতে গেছেন অনেকবার। তবে আরমান অন্য কোনো নারীর কাছে যাবেন তা সহ্য হয় না রুপালির। তাই ক্রমান্বয়ে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে এনেছেন তাকে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই রুপালির সঙ্গেই বসবাস করেন আরমান।আবার বাড়িতেও টাকা পাঠান আরমান,সব টাকা দেন রুপালি। আরমনাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বসবাস করেন রুপালি।

হিজড়ারা টাকা নিয়ে বাসায় ফিরে তা তুলে দেন গুরুমার হাতে। বিনিময়ে গুরুমা থাকা, খাওয়া, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। গুরুমাই অভিভাবক। তবে ঠএকজন সঙ্গী বা পারিক খোঁজেন সবাই। প্রত্যেক হিজড়াই নিজেকে নারী ভাবতে পছন্দ করেন। এজন্য একজন পুরুষ সঙ্গী খোঁজেন।রুপালীর বান্ধবী জোছনার একজন পারিক আছে। ওই পারিক অনেক ভালো,শিক্ষিত। একজন পারিকের সঙ্গে একাধিক হিজড়ার সম্পর্ক হতে পারে না। যদি কখনো এরকম হয় তাহলে কঠিন বিচার করেন গুরুমা। এ অপরাধে ওই হিজড়ার জরিমানা হয় । অন্যদিকে পারিককেও ভর্ৎসনা করা হয়। (চলবে)।

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ ( হিজড়া)
২য় পর্ব।

পৃথিবীতে নারী ও পরুষ দুই প্রকার লিঙ্গ যুক্ত মানুষ থাকলেও মানুষের জটিল দেহ গঠনে মাতৃগর্ভে বাচ্চার লিঙ্গ জেনেটিক্যালি নির্ধারিত হবার সময় লক্ষ জন মানুষের ভেতর দু‘একটা ভুলচুক হয়ে যায় মাঝে মাঝে। স্বাভাবিক ভাবে শুক্রাণু ডিম্বাণু মিলিত হলেই নতুন প্রাণের উদ্ভব ঘটে। কিন্তু পোকা মাকড়দের অনেক এমন প্রজাতি আছে (যেমন পিঁপড়া, মৌমাছি ইত্যাদি) যাদের ডিম্বাণুতে এমন একটা স্পেশাল ক্ষমতা থাকে যেটার সাহায্যে তারা শুক্রাণু ছাড়াও নিজ থেকেই বাচ্চা জন্ম দিয়ে দিতে পারে।

ডিম্বাণুর এরকম নিজ থেকেই বাচ্চা উৎপাদনের পদ্ধতিকে পার্থেনোজেনেসিস বলে আর উৎপাদিত প্রাণীকে পার্থেনোকার্পিক প্রাণী বলে। এ ধরণের পোকা মাকড়ের উভয় রকম বাচ্চা হয়। যেসব বাচ্চারা শুক্রাণু ডিম্বাণু মিলিত হয়ে তৈরি হয় তারা হয় মেয়ে পোকা আর যারা খালি ডিম্বাণু থেকেই তৈরি হয়ে যায় তারা হয় ছেলে পোকা। আমরা যেসব মৌমাছিকে ফুলে ফুলে ঘুরতে দেখি বা দেয়ালে দেয়ালে আনাচে কানাচে যত পিঁপড়া দেখি সবাই ছেলে। ছেলেদের কারো বাবা থাকেনা, শুধু মা থাকে। এদের মেয়ে হয় খুব কম এবং এরা সাইজে অনেক বড় এবং এরা তাদের তৈরি বাসার বাইরে আসে না।বাসায় বসে খালি ডিম পাড়ে। এরা হল পার্থেনোজেনেসিসের।

গ্রীক পুরাণে দেবতা হার্মিস আর দেবী আফ্রোদিতির এক বাচ্চা এরকম ছেলে মেয়ে উভয়ের লিঙ্গ নিয়ে জন্মেছিল ধারণা করা হয় বলে এদের দুইজনের নাম মিশিয়ে এই ধরণের প্রাণীকে হার্মাফ্রোডাইট বলা হয়। হার্মাফ্রোডাইটরা দুই রকমের। সিকুয়েন্সিয়াল আর সাইমোল্টানিয়াস। সিকুয়েন্সিয়ালদের প্রজননতন্ত্র বছরে কিছু সময় ছেলেদের মত ও কিছু সময় মেয়েদের মত থাকে। অর্থাৎ বছরে এরা একবার মা হতে পারে এবং আরেকবার বাবা। বহু মাছ,পাখি আর উদ্ভিদ প্রজাতি এরকম পর্যায়ক্রমিক লিঙ্গ বদল করতে পারে এবং এটা স্বাভাবিক।

সাইমোল্টানিয়াস বা সমসাময়িকরা একই সাথে দেহের দুই স্থানে দুই বিপরীত লিঙ্গ ধারণ করে। এদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল কেঁচো। এদের একই প্রাণির দেহে দুই বিপরীত লিঙ্গ থাকলেও এরা স্বপ্রজনন করে না। এরা একই সাথে বাবা এবং মা হতে পারে। এই দুই প্রকারের বাইরে আরেকটা অতিরিক্ত প্রকারভেদ আছে তাকে মিথ্যা হার্মাফ্রোডাইট বলে। এটার উদাহরণ হল হায়েনা। হায়েনাদের পুরুষাঙ্গ দেখতে স্ত্রীদের মত এবং স্ত্রী অঙ্গ দেখতে পুরুষাঙ্গের মত। দেখতে বিপরীত মনে হলেও আসলে এরা উভলিঙ্গ নয় তাই এদের সিউডো বলা হয়।

মানুষের দেহে লিঙ্গ বদল বা অসম্পুর্ণভাবে গঠিত লিঙ্গ দেখা গেলে এদের আগে “মনুষ্য হার্মাফ্রোডাইট” বলা হত। পশু পাখি এবং উদ্ভিদে এই লিঙ্গ বদল স্বাভাবিক হলেও মানুষে এটা অস্বাভাবিক।

আমরা যাদের হিজড়া বলে চিনি তারা মোটেও এই ইন্টারসেক্স না। ইন্টারসেক্স মানুষ সম্পুর্ন অন্যরকম জিনিস। যারা বিজ্ঞানের ছাত্র ছাত্রী তারা জানে যে ছেলেদের লিঙ্গ নির্ধারনের ক্রোমোজোম xy আর মেয়েদের xx । জন্মের আগে মায়ের পেটে আমাদের ক্রোমোজোম বিন্যাসের সময় হঠাৎ কিছু গোলযোগ হয়ে যায়। বিশেষ করে লিঙ্গ নির্ধারনকারী ক্রোমোজোমে এই গোলযোগ হলে xx বা xy না হয়ে xxy বা xxx বা xo বা xyy এরকম হতে পারে। বিজ্ঞানীরা ৫ ধরণের ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করেছেন এরকম ইন্টারসেক্স হবার জন্য।আবার এধরনের অনেক রোগীর দেহের বিলিয়ন বিলিয়ন কোষের অর্ধেকে xx এবং বাকি অর্ধেকে xy ক্রোমোজোম থাকে। এদের জিন বিন্যাসকে মোজাইক জেনেটিক্স বলে। এ ধরণের রোগ নিয়ে জন্মালে কিছু অদ্ভুত জিনিস দেখা যায়।

হয়তো জন্মের পরে মানুষটির দেহ দেখতে হবে মেয়ের মত কিন্তু এর যোনাঙ্গ হবে ছেলেদের মত যা ১০/১২ বছর পরে অদ্ভুত ভাবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে হতে স্ত্রী অঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে মানুষটা পুরাই মেয়ে হয়ে যাবে অথবা জন্মের সময় ছেলের মত হয়ে গঠন হয়ে যোনাঙ্গ হবে মেয়ের মত যা পরে ছেলেদের মত হয়ে যাবে অথবা এদের কোনটাই না হয়ে অদ্ভুত এক প্রকারের জননাঙ্গ নিয়ে জন্ম হয় যা পুরুষাঙ্গও না স্ত্রীঅঙ্গও না।এই যোনাঙ্গ পরবর্তিতে হয়ত পুরোপুরি ছেলেদের মত বা পুরোপুরি মেয়েদের মত হয়ে যাবে। তবে ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন এদের প্রজনন ক্ষমতাহীন হবে। কিন্তু এ ধরণের ঘটনা পশু পাখিতে বা উদ্ভিদে হলে এরা সম্পূর্ণ প্রজননক্ষম হয়। এটা মানুষের সাথে তাদের পার্থক্য। (চলবে)

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)
৩য় পর্ব।

হিজড়াদের জন্মগত ভাবেই কপাল মন্দ,আরো কপাল মন্দের ব্যাপার হল সামাজিক অবস্থান। উন্নত দেশের হিজড়ারা জনসাধারণের সাথে মিশে জনগণের মুল স্রোতের অন্তর্ভুক্ত হলেও আমাদের দেশে হিজড়াদের ভিন্ন চোখে দেখা হয়।হিজড়া শব্দটি এসেছে আরবী হিজরত বা হিজরী শব্দ হতে যার আভিধানিক অর্থ পরিবর্তন আর ইংরেজিতে হিজড়ার প্রতি শব্দ হচ্ছে ইউনাক যার অর্থ নপুংসক বা খোজা। আমরা জানি ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারনে হিজড়ার জন্ম,জন্মের পর লিঙ্গ নির্ধারণে যাদের জটিলতা দেখা দেয় তারাই হিজড়া।বৈশিষ্ট্যগত ভাবে হিজড়া তিন প্রকার হয়,শাররীকভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিকভাবে নারী তাদের অকুয়া বলে।শাররীকভাবে নারী কিন্তু মানসিকভাবে পুরুষ তাদের বলে জেনানা,আর মানুষের হাতে সৃষ্টি যারা (ক্যাসট্রেড) তাদের বলে চিন্নি।অকুয়া এবং জেননা মিলে ভয়ংকর ভাবে কখনো কখনো সৃষ্টি করে চিন্নি।

সাহিত্যের ভাষায় হিজড়ার নাম বৃহন্নলা,হিন্দি ভাষায় (KINNER) কৃন্নার,উর্দু ভাষায়(Khawaja) খাওয়াজা। এরা মানুষ হলে এদের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিতে পিছু পা হয়।কিন্তু ইতিহাস বলে মুঘল শাসন আমলে সম্রাটদের কাছে বিশ্বস্ত ভৃত্য হিসাবে পরিচিত ছিল হিজড়ারা।ছেলে আর মেয়ে উভয়ের মাঝামাঝি হওয়ার কারণে নারী পুরুষ সবার মাঝে অবাধ চলাফেরা ছিল তাদের,এই কারণে মুঘল সম্রাটদের নারীদের পাহারা এবং বাচ্চাদের দেখাশুনা করতো হিজড়ারা।আর সেই অতীত ইতিহাস হতে বের হয়ে এসে আমাদের দেশে বর্তমানে হিজড়ারা সাধারণ মানুষের মাঝে ত্রসন করে অর্থ উপার্জন করে।করে রাজনীতি,করে জবর দখল আর এসবের মূলে আরমানেরা থাকে ছায়া হয়ে।

এদের নচ্ছার চলাফেরা মানুষকে রাখে ভয়ের ভিতর।আবার কেউ কেউ পড়া লেখা শিখে ভদ্র জীবনযাপনও করে। এম.কম পাশ করা রুবেল আস্তে আস্তে বদলে রুপালী হয়ে যায়,এখন সে মডেল।সমাজবেসা অধিদপ্তরের মতে ষাট হাজার হিজড়া আছে দেশে আর ঢাকাতে আছে পনরশত,এবং প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের সাথে থাকে এখনো। তবে আমাদের সংবিধানে নারী পুরুষ এই দুয়ের স্বীকৃতি দেওয়া থাকলেও তৃতীয় জেন্ডারের কোন উল্লেখ নাই।ভোটার হতে মেয়ে বা পুরুষ লিখতে তাদের থাকে আপত্তি।কেউ যদি হিজড়া দলে ভিড়ে তাহলে গুরুমা নানা নিয়ম-কানুন ও হাতের তালির প্রশিক্ষণ দেন , দেন নানা রকম বিধিনিষেধ।

তারপরও পরিবার হতে বিছিন্ন হওয়া অসহায় নতুন হিজড়ার কাছে গুরুমাই সব।পরিবার হতে ছিঁটকে পড়া সব হিজড়ার গল্প একই রকম,হিজড়ার প্রতি পদে পদে ঘৃণা আর তিরস্কার। তাই তারা হয়ে উঠে ভয়ংকর। আর গুরুমা হয়ে উঠে গর্ভধারনী মায়ের মত,গুরুমা হিজড়াদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের দিয়ে নানা অপকর্ম করিয়ে টাকা রোজগার করে আরামের জীবন যাপন করে এবং নতুন হিজড়াদের করে বঞ্চিত। অথচ বাস্তবতা বলে চিন্তা ভাবনায় একটু দৈবজ্ঞ হলেই এমন সমস্যা প্রথমেই সমাধান করা যায়।নদী তার পরিবারের সাথেই থাকে এবং হাটে বাজারে টাকা তোলে। বহমান নদী আবার মা বাবার বুকেই রাত যাপন করে। নদীর বাবা বলে সন্তান যে নাড়ীর ধন জন্মতো আমিই দিয়েছি তাকে কি করে দুর করি।

দিনমজুর বাবা হিজড়া সন্তানকে বুকে আগলে রাখলেও অনেক পিতা মাতাই দুর দুর করে।এই নদীর সাথে আছে আরো ত্রিশজন হিজড়া,তারা বছরে একবার সমাবেশও করে। কারণ তারা থাকে ঐক্যবদ্ধ। জোটবদ্ধ হয়ে তারা কতটা ভয়ংকর ত্রাস সৃষ্টি করে যাদের বাসায় বিয়ের দিন হিজড়া গিয়েছে কিংবা কারো বাসায় বাচ্চা জন্ম হয়ছে শুনেছে তাদের বাসার মানুষ জানে কতটা দুরূহ হিজড়া হতে নিষ্কৃতি পাওয়া, ভোক্তভুগীমাত্রই জানে যন্ত্রণাটা।(চলবে)

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)।
৪র্থ পর্ব।

পৃথিবীতে হিজড়ার কবে হতে আর্বিভাব তার কোন সঠিক তথ্য নাই,তবে মনে করা হয় পৃথিবীতে যখন হতে মানুষের আর্বিভাব ঘটে তখন হতেই হিজড়ারও আর্বিভাব হয়।হিজড়াদের প্রতি ছোট বেলা থেকেই বিরূপ ধারণা বা মনোভাব নিয়ে আমরা বেড়ে উঠি। এদের সম্পর্কে কোন প্রকার সঠিক তথ্য আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষিতরা এমনকি অনেক ডাক্তার পর্যন্ত দিতে পারেন না। আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত প্রজনন এবং লিঙ্গ নির্ধারণ ভিত্তিক কথাবার্তা খুব ভীতি সহকারে এবং গোপনে আলোচনা করা হয় যার কারণে এরকম ব্যাপার গুলা খুবই স্পর্শকাতর বলে ভাবা হয়।

এসবের ফলে আমরা দ্বিধাদ্বন্ধে থাকি এরকম ব্যাপারে।স্বপ্ননীলকে নিয়ে তার মা বাপ ডাক্তারের দ্বারস্ত কারণ স্বপ্ননীল ছেলে না মেয়ে জন্মের তিন দিনেও নির্ধারন হয়নি চিকিৎসা শেষে হয়তো নির্ধারন হবে ছেলে না মেয়ে।ডাক্তার বলেন এই ধরনের বাচ্চা যদি জন্মের পর পরই হাসপাতালে নিয়ে আসে তাহলে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনের একটা নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।তাই বাচ্চার মা বাপকে সচেতন হতে হবে,আর মা বাপ সচেতন হলে পরিবারের একটা সম্পদ নষ্ট হয়ে হিজড়া হবে না।হিজড়া না হলে স্বাভাবিক সমাজের ত্রাসও বাড়ত না সাধারণ হতে চাঁদাবাজিও কম হতো।আসলে আশির দশকে হিজড়ারা এমন ছিল না,যখন হতে ভারতীয় হিজড়ার এদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করে তখন হতে তাদের সাথে মিলে এদেশের হিজড়ারা অপরাধমূলক কাজের প্রসার করে।

অস্বাভাবিক চালচলনের কারণে কুল হতে নিগৃত হওয়ার পর তাদের জীবনের তাগিদে ও সঙ্গদোষে প্রমত্ত হয়ে উঠে।তারা যেসব কাজ করে তার কারণে নিস্তেজ মানুষ শঙ্কায় পড়ে।তবে রুপালী অন্যদের চেয়ে আলাদা,সে সাধারণ মানুষের সমাজে বাস করতে চায়।কিন্তু পরিবার হতে তাড়িত হওয়ার দুঃসহ স্মৃতি ব্যাথা দেয় ক্ষনে ক্ষনে।আরমানকে অন্য হিজড়াদের সাথে মিলিত হতে তার প্রচন্ড আপত্তি থাকে তবুও আরমান শুনে না রুপালীর কথা।আরমান হিজাড়াদের সহযোগিতায় লোকের পাওনা আদায় করে কমিশন ভিত্তীতে।ঢাকাতেই হিজড়াদের বিভিন্ন গ্রুপ নানা রকম অপরাধে জড়িত।

লায়লা,হামিদা,মনু,আবুল,নাজমা,হায়দার,রাখী,পিংকি ও স্বপ্না হিজড়া পুরা ঢাকাকে ভাগ করে নিয়ন্ত্রন করে।ডেমরা,শ্যামপুর ও ফতুল্লা নিয়ন্ত্রণ করে লায়লা হিজড়া।শ্যামলী ও মোহাম্মদপুর দখলে হামিদার।সাভার ও ধামরাই শাসন মনু হিজড়ার হাতে।সায়দাবাদ ও মতিঝিল নিয়ন্ত্রণ আবুল হিজড়া।দিপালী হিজড়া নিয়ন্ত্রণ করে পুরান ঢাকা। উত্তরা দখল করে আছে নাজমা হিজড়া,এখন আবার মিরপুর রাখীর আয়াত্তে।

এবং গুলশান,ফার্মগেট ও সংসদ ভবন এলাকা দখলে রেখেছে হায়দার ও সপ্না হিজড়া।আবার এরা এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের মুখামুখিও হয়,এক দল আরেক দলের হিজড়াকে ধরে নিয়েও যায়।সুইটি হিজড়ার লোক ধরে নিয়ে যায় পিংকি হিজড়ার লোকেরা মূলত ফকিরাপোল এলাকায় টাকা উঠানো কে কেন্দ্র করে এই বিরোধ বাঁধে।পিংকি আবার বাঁধন হিজড়া সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক।হিজড়াদের কাজের বিস্তৃতি আপনার কল্পনাকেও হার মানাবে,রাত বাড়ার সাথে সাথে তাদের অপকর্ম বাড়াতে থাকে এরা নারী না হিজড়া তখন বুঝাও মুশকিল।মজার ব্যাপার হিজড়ার ভিতর আবার নকলও আছে।এরা সবাই মিলে করে অপরাধ।(চলবে)

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।