বউ ও প্রেমিকা
- জাহিদ হাসান নাদিম - সৌপ্তিক ২০-০৫-২০২৪

বউ আর প্রেমিকার পার্থক্য জানতে চেয়েছিলে, আমি বলতে পারিনি সেদিন,
নির্বাক তাকিয়ে ছিলাম শুধু, অভিযোগ এনে ছেড়েছিলে ঘর, করেছিলে পর।
আজ বহুদিন পর সেদিনের স্মৃতি ঘুমাতে দিচ্ছেনা, সে প্রশ্ন আমায় ঘুমাতে দিচ্ছেনা,
উত্তর খুঁজে ফিরছি সারারাত, মগজের ভিতর চিনচিন করছে, বাড়ছে যন্ত্রনা।
আমি সেই নির্ঘুম যন্ত্রনা দূর করতে আজ তোমাকে সেই প্রশ্নের দিতে চাই উত্তর।
বউ আর প্রেমিকার পার্থক্য জানতে চেয়েছিলে, আমি বলতে পারিনি সেদিন।

আজ আমি উত্তর দিতে চাই, হয়তো আপত্তি জানাবে উত্তরের,
তবু আমি উত্তর দিতে চাই, শেষ করতে চাই সব রাত যতরাত ছিল বিষাদের।
প্রেমিকা হলো শ্রেণির পাঠ্য বই, যা লোভ দেখায় আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের,
যা নির্দিষ্ট দিনের জন্য, যাকে জানার জন্য অগাধ সময় থাকেনা আমাদের,
তবু সে কদিনেই তাকে জানার জন্য থাকে কতটা চেস্টা, কখনও আসে সামান্য বিরক্তি,
তবে তবুও আমাদের তাতে মুগ্ধ হতে হয়, তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখি সুন্দর ভবিষ্যতের,
তার শরীরের প্রতিটি কনা আয়ত্বে আনতে চাই, হজম করি তার সব উত্ত্যক্তি,
যদিও পরে বুঝি তা ভ্রম, শুধুই মরিচিকা, তাতে যতই গুরুত্ব দাওনা কেন সে ক্ষনিকের।
পরে যখন প্রেমিকা রূপি বই আমাদের চাকুরী দিতে পারেনা তখন ভ্রম ভেঙে যায়,
মনে হয় এ বই তো আমায় ভদ্রতার বা বাস্তবিক শিক্ষা দেয়নি, শুধু নষ্ট করেছে সময়।
তার সাথে কাটানো সময় হয়তো আমার ভবিষ্যতে কিছুটা কাজে দেবে তবে খুবই সামান্য,
প্রেমিকা বা পাঠ্য বই কোনটিই আমাদের জীবনে হতে পারেনা অনন্য।
এ বইয়ে নতুনত্বের গন্ধ লেগে থাকে বলে তাতে আমরা সহজেই বিশ্বাসী হই,
এই বই ঘন ঘন বদলায় বলে তার নতুন শরীরে আমরা সহজেই মুগ্ধ হই।
হয়তো এসব মুগ্ধতা কিছু প্রাপ্তির লোভে আমাদের মাঝে আসে, মনে ঘটায় রণ,
বউ আর প্রেমিকার পার্থক্য জানতে চেয়েছিলে, আমি বলতে পারিনি সেদিন।

আজ আমি উত্তর দিতে চাই, হয়তো আপত্তি জানাবে উত্তরের,
তবু আমি উত্তর দিতে চাই, শেষ করতে চাই সব রাত যতরাত ছিল বিষাদের।
বউ হলো বাবার পছন্দে কিনে হাত ধরে বাসায় আনা গীতাঞ্জলি,
বাবা হয়তো আগেই বুঝেছিল এ সমাজ ঘুনে ধরে গেছে।
এ সমাজ স্বনির্ভর হতে শেখায় না, শেখায় মুখস্ত করে কাগজ নিতে,
আর শত পরিশ্রমে পাওয়া আদর্শ আর অর্থের বস্তার বিনিময়ে চাকুরী নিতে।
তাই বাবা গীতাঞ্জলির মত বউ এনে দিয়েছিল, সাথে এনেছিল শত ছন্দের সৌন্দর্য,
এতদিন আমি বুঝিনি, বুঝিনি সে বইয়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা মাধুর্য।
এ বই বাসায় আসে অনন্তকালের মত, ধুলো ধরে যায়, হয় জীর্ণ, ক্লান্ত,
তবু এ বইয়ের মূল্য সেই প্রথম দিনের মতই থাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
সে ডেকেছিল আমায়, সজল ঘন, বাদল-বরিষনে বিপুল তব শ্যামল স্নেহে,
সে ডাক আজ বার্ধক্যে বুঝেছি, যৌবনে সে ডাক শুনিনি পাঠ্য বইয়ের মোহে।
আজ এ মন হারাতে চাই সে গীতাঞ্জলির পাতায়, তার হৃদয়ের যত ছন্দে,
আমি আজ প্রেমিকার মোহ থেকে মুক্ত, মাততে চাই তার সুরে, আনন্দে।
পাঠ্য বই তো আমায় লোভ দেখিয়েছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যতের, গ্রাস করেছিল মোহে,
গীতাঞ্জলি আমায় বাস্তবতা বুঝিয়েছে, ভালবেসেছে সারাজীবন আত্মার সাথে রহে।
বউ সারাজীবন তাকে বোঝার সময় দিয়েছে, দানে বাড়িয়েছে ঋণ,
বউ আর প্রেমিকার পার্থক্য জানতে চেয়েছিলে, আমি বলতে পারিনি সেদিন।

আজ বয়সে হয়েছি বৃদ্ধ, তাই গীতাঞ্জলির সিগ্ধতা খুব প্রয়োজন এ দেহের,
আজ তো আমি উত্তর দিয়েছি তোমায়, তবে কি এবার শেষ হবে বিরহের?
নাকি এ মনে সারাক্ষন রাতই হয়ে রবে, কখনও কি আর হবেনা গো দিন!
বউ আর প্রেমিকার পার্থক্য জানতে চেয়েছিলে, আমি বলতে পারিনি সেদিন।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।