শিশুতে শিক্ষা
- প্রবীর রায় - ছোট গল্প ২০-০৫-২০২৪

পাড়াতে এক বড়লোক বাড়ির অনুষ্ঠান মানে বিয়ের সমাগম।সম্পূর্ণ পাড়াজুড়ে বিভিন্ন কৃত্রিম লাইটিং-এর কারুকাজ।শুরু থেকে শেষ প্রান্ত স্বর্গের মতো ফুটে উঠেছে।গোটা পাড়াতে সকলেই নিমন্ত্রিত,ধনী-গরীব সকলেই, কেউ বাদ পরেনি।বিয়েটি ছিল গ্রামের-ই এক বড়লোকের ছেলের,তাছাড়া মেয়ের বাড়ি থেকে পণও পেয়েছে অনেক,সাথে প্রচুর সোনা-গাড়ি,ঘরের আসবাবপত্রতো রয়েছেই।তাই ছেলের বাবা ধূমধামে বিয়েটা দিচ্ছে।খবরটা আস্তে আস্তে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামেও ছড়িয়েছে,সকলের মুখেমুখে একটাই কথা,নেমন্তন্ন নেইতো কি হয়েছে-খেতে নয়,সাজসজ্জা দেখতে যাবো।দশহাত পরপর একটি করে দারোয়ান,কারণ বাইরে থেকে মস্তবড় গায়ক ও এনেছে সাথে আছে মনোরঞ্জন দেবার জন্য পাঁচ-ছটি নতর্কী।বাচ্চাদের আনন্দের জন্য এনেছে একটি জোকারের গ্রুপ,হাসানোর জন্য।সবমিলে হই হুল্লোর মাখা পরিবেশ।মেয়ের কেউ নেই শুধু সে আর তার বাবা,তাই তারা সব সামলে উঠতে পারবেনা ভেবে মেয়েকে উঠিয়ে বিয়ে দিচ্ছে তার বাবা।সারাটা দিন-ই মানুষের আনাগোনা।এবার রাত্রে খাবারের পালা,বউ-বর দেখার তাড়াহুড়ো।মানুষের জায়গা দিতে পারছেনা,এতটাই ভিড় হয়েছে।খাবার জন্য চারটি প্যান্ডেল বানিয়েছে,যেন কোনো অসুবিধা না হয়।পাশে আছে ফুচকা-নস্যি-পকোরা-কফি সাথে আরো অনেক,বলতে গেলে এলাহি ব্যাপার।মনে হচ্ছে মোগল যুগের -কোনো রাজপুত্রের বিয়ে।কিন্তু পাড়াতেই একটা পাগল ছিল,তাকে অবশ্য বলেনি সে পাগল বলে। যদি সে উল্টোপাল্টা কিছু করে বসে তাহলে সবটাই ব্যর্থ যাবে সেই ভয়ে তাকে নজর আন্দাজ করেছে।কিন্তু সেই পাগলটা সকলের আড়ালে,দারোয়ানকেউ ফাঁকি দিয়ে খাবার প্যান্ডেলে ঢুকে পরেছে,নতুন-নতুন খাবার খাবে বলে।সে পথে-পথে ঘোরে, কি খায় না খায়,কিভাবে বাঁচে তার খবর কেউ রাখেনা।দয়া দেখিয়ে একদল ক্যাটারার তাকে প্যান্ডেলে বসতে দিয়েছিল খাওয়ার জন্য।অবশ্য সে যে টেবিলে বসেছিল সেখানে কেউ বসেনি ঘৃণা করে।সে কেবল খাবারটা মুখে দেবে তখনি একভদ্রলোক চেঁচিয়ে উঠলো,আমরা কি পাগলের খাবার খেতে এসেছি,যে পাগলের সাথে খাবো।বলতেই সকলে একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো,খাবোনা আমরা বেরিয়ে যাচ্ছি।তখন পাগলটি কাঁদতে কাঁদতে খাবার ছেড়ে বেরিয়ে পরে,কারণ সে পাগল হলেও তারও মন খারাপ হয়,কিছুটা আভাস বুঝতে পারে।সে দেখে একটি ছোট শিশুর দয়া হলো,ভিড়ের মাঝে মা-বাবাকে ছেড়ে তার খাবারের পাতাটা নিয়ে গিয়ে পাগলটিকে খাইয়ে দেয় আর চোখের জলও মুছে দেয়।তখন পাগলটি শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে অনেক আদর-আর আশীর্বাদ দেয়।ছেলেটি ফিরে যাবার পথে তার গলা থেকে একটি যুবক সোনার মালাটি খুলে নেয়,পাগলটি সব দেখে ও লোকটির পিছু করে।এদিকে ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে মা-বাবাকে ঘটনাটি বলে,তখন লোকটির খোঁজাখুঁজি আরম্ভ হয়।ইতিমধ্যেই পাগলটি লোকটিকে ধরে নিয়েছে,তখনি শিশুটির বাবা লোকটিকে দেখতে পায়।সেখানে গিয়ে লোকটির থেকে মালাটি নিয়ে নেয় আর পাগলটির কাছে ক্ষমা চায়।যারা চেঁচিয়ে উঠেছিল তারা সকলেই নিজেদের ভুল বুঝতে পারে এবং পাগলটিকে নিয়ে গিয়ে সকলে একসাথে আবার খেতে বসে প্যান্ডেলে।ঘটনাটা সকলেই জানতে পারলো, শুনে সকলেই হতবাক,তারপর থেকে পাগলটিকে আর কোনো অনুষ্ঠানেই ছাড়লোনা কেউই।এদিকে বিয়ের শেষে বহু আতসবাজি ফাটালো,যার সবি ছিলো বিদেশ থেকে আনা।।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।