মুনিবরের পোষা ইঁদুর (লোকশ্রুতি অবলম্বনে রচিত)
- শেখ মাফিজুল ইসলাম ১৮-০৪-২০২৪
গা ছমছম ঘন জঙ্গল
মাঝে মুনির বাসা
ছিমছাম আর পরিপাটিতে
কুঞ্জখানি খাসা।
ছোট্ট একটি ইঁদুর ছানা
পোষ মেনেছে ঘরে
পায়ে পায়ে ঘোরে মুনির
আনন্দ-না ধরে।
সিদ্ধি লাভের আশায় মুনি
ইষ্ট দেবে জপেন
ধ্যান মগ্ন হবেন তিনি
দেহ ও মন সঁপেন।
ধ্যান ভগ্ন হলো হঠাৎ
ইঁদুরের চিৎকারে
চক্ষু খুলে দ্যাখেন তিনি
হুলো বিড়াল দ্বারে।
চিন্তান্বিত মুনি ভাবেন
তপস্যায় যে ক্ষতি
হুলোর ভয়ে কাঁপছে ইঁদুর
ভীষণ তো দুর্গতি।
মনে মনে ভাবেন তিনি
ইঁদুর, বিড়াল হ’লে
দুর্ভাবনা থাকবে না আর
শঙ্কা যাবে চলে।
মন্ত্র পড়ে জল পড়া দেন
ইঁদুর ছানার গা’য়
এক লহমায় ছোট্ট ইঁদুর
বিড়াল বনে যায়।
নিশ্চিন্তে এবার মুনি
সাধনায় দেন মন
দিব্য জ্ঞানে সিদ্ধ হবেন
ভাবেন সর্বক্ষণ।
ওম শান্তি ওম শান্তি
সাধনায় দিন কাটে
কুকুরের চিৎকারে হঠাৎ
আসন কেঁপে ওঠে।
চক্ষু মেলে দ্যাখেন মুনি
হুলো বিড়াল পালায়
পেছন পেছন ছুটছে কুকুর
একি নতুন বালাই!
মুনি ভাবেন একি হলো
সাধন হবে পণ্ড
কুকুরের উৎপাতে এবার
সব যে লণ্ডভন্ড।
মন্ত্র পড়ে জল পড়া দেন
বিড়ার ছানার গা’য়
এক লহমায় বিড়ার ছানা
কুকুর বনে যায়।
তপস্যাতে আবার মুনি
ঢেলে দিলেন মন
জপমালা হাতের মধ্যে
ঘুরছে সর্বক্ষণ।
সূর্য যখন ডুবুডুবু
সন্ধ্যা ঘনায় বনে
ধ্যান-মগ্ন মুনি হঠাৎ
বাঘের গর্জন শোনে।
তাকিয়ে দ্যাখেন কুকুর পালায়
পিছে ছোটে বাঘ
হালুম হুলুম আওয়াজ ওঠে
সেকি ভীষণ রাগ।
মুনিবরের মন ভালো নেই
এখন করবেন কী
সাধন-ভজন পণ্ড হবে
ভষ্মে দেবেন ঘি?
মন্ত্র পড়ে জল পড়া দেন
কুকুর ছানার গা’য়
এক নিমেষে কুকুর আবার
ব্যাঘ্র বনে যায়।
মুনি ভাবেন শান্তি পেলাম
আবার ধ্যানে যান
বাঘ তো এবার পোষ মেনেছে
মনে স্বস্তি পান।
বাঘের পেটে ক্ষুধার জ্বালা
হালুম হুলুম ডাকে
লোলুপ দৃষ্টি মুনির দিকে
অবাক চেয়ে থাকে।
মুনি যতই নিষেধ করেন
ততোই বাড়ে রাগ
রক্তে যে তার বন্য নেশা
সে যে বনের বাঘ।
ইঁদুর থেকে বাঘ করেছি
আমার মন্ত্র বলে
আমার দিকে লোলুপ দৃষ্টি?
যাবি রসাতলে।
ক্ষোভে-রোষে জল পড়া দেন
বন্য বাঘের গা’য়
এক লহমায় বাঘটি আবার
ইঁদুর বনে যায়।
মন্তব্যসমূহ
এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।
মন্তব্য যোগ করুন
কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।