পুতুলের বিয়ে
- এস.এম. আরিফ ২০-০৫-২০২৪

তখন আমি অনেক ছোটো!
এই ধরো-
আধো আধো কথা বলি
গুটি গুটি পায়ে হাঁটি!
ওতোটুকুই!
ওতোটুকুই হবো মনে হয়।

জানো তখন আমার চারটি পুতুল ছিলো।
না ঠিক চারটি না
পুতুল ছিলো দুটি আর দুটি ছিলো পুতুলের আব্বু আম্মু
আম্মু আব্বু তো আর পুতুল হয় না!
পুতুল হয় ছোট্ট
লাল ফিতে কালো চুল মিষ্টি মুখী।

যখন আমি পুতুল খেলি
সেই তখনকার কথা
একবার আমার চাচাতো বোন ঝিনুক
গরমের ছুটিতে বেড়াতে এলো আমাদের বাড়িতে।
আমি আর ঝিনুক মিলে খুব মজা করেছিলাম সে বার
ওর পুতুল আমার পুতুল রদবদল করে
সারা ড্রয়িং রুম তছনছ করে খেলতাম সারাদিন।
হঠাৎ
ঝিনুক জেদ করে বসলো
আমার রেণু নামের যে হলুদ পুতুলটি ছিলো
সেটি নাকি ওর চায়ি-চাই!
আমি কিছু বললাম না
একটু মন খারাপ হলো!
ঘুমোনোর আগে আম্মুর বুকে শুয়ে বললাম
আম্মু ঝিনুক কী সত্যি আমার রেণু কে নিয়ে যাবে!
আম্মু একটু থেমে রইলো!
তারপর বললো -
ঝিনুকের যে ছেলে পুতুলটা আছে গোপী
ওর সাথে কাল তোমার রেণুর বিয়ে!
কাল আমরা পোলাও খাবো সেমাই খাবো
দধি খাবো আ-র..
আমি বললাম আর আইসক্রিম খাবো!
আম্মু বললো আচ্ছা ঠিক আছে মা আইসক্রিমও খাবো।
পরেরদিন বিকেলে
আমি পোলাও খেয়েছিলাম কিনা জানি না
কিন্তু আমি আর ঝিনুক খুব আইসক্রিম খেয়েছিলাম সেদিন।
তারপর বিয়ে হলো!
গোপীর সাথে শশুর বাড়ি গেলো আমার রেণু!
সেদিন মনে হলো
বিয়ে মানে কারও জেদ হলে দধি পোলাও আইসক্রিম খেয়ে
তার সাথে শশুর বাড়ি যাওয়া।

একদিন আমিও রেণু হলাম
আমার ঘন কালো কেশের আড়ালে ঢাকা পরতে শুরু করলো পূর্ণিমা
উত্তাল সমুদ্রে দিশেহারা নাবিক
হাল ছাড়লো না আমাকে পাওয়ার আশায়!
তারপর
আমার সমস্ত হাতে মুখে পায়ে
বহুবছরের পুরোনো কারুকার্য এঁকে দিলো নতুন করে সাঁজাতে।
তারপর আমি দধি খেলাম না
পোলাও খেলাম না
তবুও আমার বিয়ে হলো।
কিছুদিন পর
আমি এক অচিনপুরে অচিন সভ্যতায় ডুবে গেলাম
আনমনে আমার সেই মিস্টি মুখী রেণুকে খুঁজে লাগলাম!
চার দেওয়ালের বন্দি জীবন যে এতো দুর্বিষহ
জানলে
রেণুর বিয়ে দিতাম না অন্তত!
ভাবতে ভাবতে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসলো
সেই শনিবার ভোরে আমি স্বপ্নে দেখলাম
বিয়ে হয় পুতুলের
বিয়ে হয় রেণুদের
বিয়ে হয় নির্বাক চাহনি তে তাকিয়ে থাকা
মূর্খ বাঙালি মেয়েদের।
মানুষের কখনো বিয়ে হয় না
মানুষে মানুষে হয় ভালোবাসা
প্রেম।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

SSDIPU
২৩-১০-২০১৯ ১২:২৯ মিঃ

ভালো লাগলো