জোড়াতালির কবিতা
- শোয়েব আহম্মেদ বাধন ১৭-০৫-২০২৪

গ্রামের দুরন্তপনায় শিকল পড়িয়ে আমায় শহরে নিয়ে গেলো,
প্রায়ই আমার চোখের জলে বালিশ ভিজতো।
যেনো শ্রাবণের দিনে বাদলের ধারা
অবিরাম ঝরে যেত কোন রকম সান্ত্বনা ছাড়া।ঘুমের আগে কল্পনার রাজ্যে স্মৃতির আসর জমত।

পৌষের সকালে,বাড়ির উঠানে
কুয়াশা ভেজা চাইল্যা খড়ি নাড়া থাকে
রান্ধা ঘরের খেড়কির ফাঁক গলে ধোঁয়া ছুটে
রোদ উঠে;চাইল্যার উপর পিচ্চি-প্রৌঢ়ের আনাগোনা বাড়ে।
কেউ বসে ভাত খায়,কেউবা রোদ পোহায়।
ঘড়ির কাঁটা দৌড়ে এসে দশটার ঘরে আটকে থাকে-
স্কুলে যাওয়ার জন্য চিল্লাইয়া মায়ের গলা ফাটে।
গেলে বেশ ভালো;না গেলে সন্ধ্যারাতে কাঁচা বউল্লার আঘাতে চামড়া লাল হলো।
স্কুল শেষে হক স্যারের টিউশন
মাইরের ভয়ে মন যোগাতাম স্যারের;
দিয়ে অগ্রীম তার পঞ্চাশ টাকা বেতন।

সারাদিন অকাজের ব্যস্ততা-
বৈশাখ শেষে হাইজদার হাওরে পানি ঢুকে,মনে আনন্দের ঢেউ লাগে।
ইস্কুলের জানালা দিয়ে ব্যাগ ফেলে
গন্তব্য সোজা ক্ষেতের আইলে।
দেড় হাত সুতা-বরশি আর বাঁশের কুট
মাটিতে লুকানো উতরুংগা পোকায় হয় বরশির টোপ।
ডুবা ক্ষেতের ভাসা আইলো
শালিকের আনাগোনা বাড়লো।
আহ! কি আনন্দ।

আধাছেঁড়া বইয়ের কাঁটাছেড়া লাইন-
ক্ষ্যাতের আইলে পুঁতা বরশির মাইন।
ও বগী তুই বড় হ
বরশিতে গাঁথা পুঁটির টোপ
বড় হয়ে গিলবি ত!

ভরা বর্ষায় বুকের নিচে কলসি দিয়ে
মাঝ নদীতে আড্ডা জমত
এই বুঝি পায়ে শুশুক কামড় দিল!
এই ভয়ে ধনু পার হওয়ার স্বাদ আমার অপূর্ণই রয়ে গলো।
ধনুর পাড়ে বরশির বাইল্যারা-টেংড়া
লইরা জালের ছিকড়া-চান্দা
জীভে জলে এনে পেট পূজায় প্রশান্তি দিত।

সমবয়সী সব মিলে
দুই টাকা করে চাঁদা তুলে
ঝাল-মিষ্টি চকলেট জেতার লড়াইয়ে
কাদা মাঠে ফুটবল নিয়ে তুমুল যুদ্ধ চলে।
বুঁদ হয়ে থাকত সবাই বরফপানি,দাড়িয়াবান্ধা আর গোল্লাছুটে।

তুফানের দিনে উত্তাল ডিঙ্গিপুতা হাওরে;
প্রতিটা ঢেউ যেন নৌকার গায়ে কষিয়ে থাপ্পর মারে,
নৌকার ছাদে বসা দক্ষ মাঝিরও ভয়ে অন্তর কাঁপে,
প্রাণভয়ে ভীত মানুষ ছইয়ার নিচে জমা হয়ে
দোয়া দুরুদ আর আল্লাহর নাম জপ করে।

স্মৃতিপটে আজও পুরনো দিনের ছবি ভাসে,
মনের জানালা খোলে ফেলে আসা দিনগুলোতে;ফিরতে বড় ইচ্ছে করে।

শোয়েব আহম্মেদ বাধন
১৬/০৬/২০২০ ইং

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 2টি মন্তব্য এসেছে।

Shoaib
১৬-০৬-২০২০ ১৫:১৯ মিঃ

ধন্যবাদ আপনাকে

M2_mohi
১৬-০৬-২০২০ ১৪:২৬ মিঃ

Fantastic