এক ঘুমন্ত বাবা
- সীমান্ত শিপন ২০-০৫-২০২৪

ব্যস্ত পথ
ভ্যান, রিক্সা, সিএনজির অবিরাম আনাগোনা
কর্মময়, কর্মহীন মানুষের নিত্য আসা যাওয়া
সে পথের নিয়মিত পথিক আমি
আগমন প্রস্থান হয় খুব নিয়ম করে
যেমনটি করে থাকে সকল কর্মজীবী।

সেদিন বাসায় ফেরার সময়
সহসাই পড়ল চোখে করুণ দৃশ্যখানি
পথের বা পাশে বিরাট মেহগনির নিচে
ঘুমিয়ে আছে এক বাবা তার
ঘুমন্ত মেয়েকে নিয়ে বুকের পরে
একবাহুতে মায়ার বাঁধনে বেঁধে।
পরনে তার রংচটা জিন্স গায়েতে মলিন জামা
জবুথুবু চুলে সদ্য সেভ করা ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি
চেহারায় ক্লান্তির ছাপ।
পিঠের নিচে তোষকহীন ময়লা চটের বিছানা
নগ্ন পা দুটোর হয়নি'ক ঠাঁই সেখানে।
শিথানে তার পলিথিন মোড়ানো চটি স্যান্ডেলের বালিশ
ঘাম আর ধূলোয় মাখা কোকড়ানো রুক্ষ কেশ।

হারিয়ে গেছে সে বাবা বড়ই করুণ ঘুমে
শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে আরো একটি ব্যর্থ দিন শেষে।
ঘুমে তার চাকরি দেবতা স্বপ্নে দেয় দেখা
রাগত স্বরে হুংকার ছেড়ে দিয়ে যায় শুধু বকা
"ঠিকমত কাজ যদি না কর তবে দূর হও তুমি বোকা।"
অতঃপর মিথ্যে ধমকে ঘুম ভেঙ্গে গেলে
বাস্তবতার মাঝে ফিরে এলে
নিজেকে আবার ফিরে পাবে সেই মেহগনির নিচে
বুকেতে তার আদরের দুলালী তখনো রয়েছে ঘুমিয়ে।

বেলা শেষে ঘুম থেকে উঠে
তারপর কন্যাকে কোলে নিয়ে
চলতে হবে আরো অনেকটা পথ
যেতে হবে তার জীর্ণ মলিন ঘর।

পরদিন আবার সেই নিরন্তর পথচলা
সকাল থেকে নিয়ম করে সন্ধ্যা অবধি
রাস্তার ধারে বেড়ে উঠা বিরাট গাছের ছায়ায়
সামান্য বিশ্রাম শেষে আবার ঘরেতে ফেরা।
এ ধারায় চলবে ধরণী তার
জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে
আপন সন্তানকে একটু ভালো রাখার প্রয়াসে।

তারপর সময় গড়িয়ে গেলে
পদ্মা মেঘনা বহুবার মিলিত হয়ে
সাগরে হারিয়ে গেলে
প্রিয় সন্তানটি তার বড় হয়ে একদিন
রঙিন চশমা চোখে ঠোঁটটা বাঁকা করে
যদি বলে ওঠে অকপটে
"আমার জন্য তুমি কিছুই কর নি বাবা।"

সহসাই হয়তো তখন কেঁপে উঠবে বাবার হৃদয়
ভূমিকম্পের ন্যায় কম্পিত হবে তার চারপাশ
দুচোখের লোনা জলে ভিজবে দু গাল
আবেগের স্রোতে ভেসে হয়তো ভুলবে বাস্তবতা
বাকরুদ্ধ কণ্ঠে বোবা ভাষায় বলবে অস্ফুট স্বরে
"সারা জীবন যে চোখ দিয়ে কভু ঝরেনি একটু পানি
আজি জীবন সায়াহ্নে এসে
তাও দেখা হলো অবশেষে
কত লোনাজল ছিল দু'চোখের মাঝে।"

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।