=জীবন গদ্য...........(একজন মায়ের জন্য সন্তানদের আকূতি)
- কাজী ফাতেমা ছবি ২০-০৫-২০২৪

©কাজী ফাতেমা ছবি

ফণী তো ওদের বুকের বাড়ি আঘাত হানছে প্রতিনিয়ত। যেদিন থেকে মা শুয়ে আছেন হাসপাতালের বেডে। নাওয়া খাওয়া ভুলে কী দিন কী রাত পালাক্রমে শিয়রে বসে থাকা সন্তানেরা সামলাচ্ছেন সন্তর্পণে বুকের বাড়ি আগত শত সুনামী টর্নেডো সিডর অথবা ফণী। অশীতিপর বয়স, হাজার রোগ ব্যাধী বাসা বেঁধেছে তার দেহে, কখনো কিডনি আঁড়ি কাটে কখনও রক্তরা করে বিদ্রোহ, কখনো বা রক্তচাপ হয়ে যায় বৈশাখী খরা অথবা দেহের সোডিয়াম পটাশিয়াম রেখে ফেলে অনায়াসে রোজা, ঘাটতি পড়ে যায় এসব উনার। চোখের ঝাপসা আলোয় আত্মজদের বড় কার্পণ্য উনার। নাকের নলে থিরথির করে রিযিকের দানায় উদর ফুর্তি সে কী আর মিটে অথৈ ক্ষিধে!

অপেক্ষার বুকে মাথা রেখে কখনো চোখ লেগে যায় চেয়ারে বসে বসে, মায়ের নড়াচড়ায় চকিতে ফিরে আসে চেতন, ঘুমকে ছুটি দিয়ে দিন শেষে রাত যায় নিদ্রাহীন সহস্র ঘন্টা। ফিরে না দেহের শক্তি, ফিরে না চেতন, কেবল নড়াচড়া করলে ভুমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠে পুরো দেহ উনার। জিভের আগায় আটকে থাকে না বলা হাজার কথা। বলা হয়ে উঠে না আর।

সটান শুয়ে মা, নাক ডাকার নিঃশ্বাসে ভারী হয়ে উঠে পরিচ্ছন্ন কেবিন। সফেদ কাপড়ে ঢাকা কেবিন, জানালায় সফেদ পর্দা, বিছানার চাদরখানাও পবিত্রতার ছুঁয়া মিশে আছে। অথচ এই শুদ্ধতার রঙ পোষাকেই উনাকে আমাকে সবাইকে ছাড়তে হবে এই মোহ দুনিয়া। সব অহংকার সব ক্ষমতা মিশে যাবে ধূলায়।

যে মা পেটে রেখেছেন দীর্ঘ নয় মাস নয়দিন অথবা তারও বেশি, তারপর একদিন পেট ব্যথায় দুনিয়া কাঁপিয়ে নিয়ে এসেছিলেন পর পর আটটি সন্তান। লালন পালন শিক্ষা দীক্ষায় কেটে গেলো তার মনোহারী প্রজাপতি দিন। কেটে গেলো যৌবন, কেটে গেলো দোয়েল সময়। সন্তানদের সাফল্য এখন তুঙ্গে, তিনি সুখি মানুষ, স্বস্তি বুকে নিয়ে বেঁচে থাকবেন সে আশায় কেবল সুখ দিনাতিপাত শুরু। ঠিক তখনি যৌবনের সেই হাঁড় ভাঙ্গা খাটুনির দেহে বাসা বাঁধে দুঃস্বপ্ন। মনে শান্তি আর দেহ জুড়ে রাজ্যের ব্যথা বেদনা নিয়ে তার শুরু দিন যাপন।

সন্তান হলো মানুষ, তিনি হলেন বুড়ো, মা মা বলে পাগল ছেলেরা মা চলে যাবেন মানতে নারাজ। নাওয়া খাওয়া ভুলে মায়ের সেবায় নিয়োজিত দিনরাত। আশা না ছাড়া সন্তানদের আকূতি যেনো ছুঁয়ে যায় আরশ, তিনি যেনো প্রাণ ফিরে পান দেহে। আবারও যেনো কথা বলেন তার সন্তানদের সাথ। হাসিমুখে ওরা ফিরে আসুক হাসপাতাল ছেড়ে,আপন নীড়ে। আল্লাহ যেনো প্রার্থনা করেন কবুল ওদের।

সন্তান যেনো এমনি হয়, উনার সন্তানের মত। দুনিয়াকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা সময়গুলো যেনো সকল মায়ের নসীবেই হয়। মানুষকে ভালোবেসে মানুষ ঠকে যায়, মাকে ভালোবেসে ঠকে যায়নি কোনো সন্তান। মাকে ভালোবাসুন, তার চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করুন অনায়াসে। তার মন পড়ুন, তাকে রাখুন শ্রদ্ধায় সম্মানে ভালোবেসে মাথার টোপর করে। জগতের সকল মা সুখি হোন এ কামনায় আমি বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ, ফি আমানিল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০১

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।