একজনের রোদ ভাল লাগে। অনেকদিন কফিনে আটক থাকার পর ভুসভুসে সাদা পলিথিন ত্বকের শরীর, এক সকালে উঠে এসে ঘাসের লনে, সূর্যকামুকতায় যতটা থরথরিয়ে কাঁপে ততটা__! আরেকটা লোক রোদ না, ভালবাসে মধ্যরাতে মৃদু বৃষ্টি। এতোটা গোপন যে বর্ষণের পায়ের দাগ থাকে না সকালবেলার রাস্তায়। তবুও কোথায় যেন হাঁটতে থাকে অশরীরী। ট্রাফিক জ্যামে থকথকে বসে থেকে হঠাৎ যার ছেড়া নূপুর কুড়িয়ে পাওয়া যায় নিছক চারিত স্মৃতিতে, গত রাতে দেখে ফেলা স্বপ্নের ভেজা পিচে!_ সেরকম প্রচ্ছন্ন অতনু বৃষ্টি তার ভাল লাগে। অন্য আরেকটা লোক ও'রকম বৃষ্টি আশা করে না। অসংখ্য রাত চোখ না বুজে সে বিচ্যুত ফলের ঘন বেদনা অনুভব করে একলা ঘরে। ফিরতে চায় প্রেয়সীর অন্তর্গত যুগল বৃন্তে, বাহুতে। ফল হয়ে ঝুলে থেকে স্তনবৃন্তে শুষে নেবে গভীর ঘুমের সিরাপ এমন স্বপ্ন দেখে ফেলে। প্রিয় নারীর তিল ধারণের ঠাঁই নাই এরূপ অথই লাবণ্যবৃন্ত বুকের কুশনে প্রতিরাতে শু'তে চায়। বোঁটাখসা ফল প্রচন্ড ফিরে যেতে চায় আপন বৃন্তে। অথচ নিউটনের আপেল হয়ে পরে থাকে রুক্ষ মাটিতে। লোকটি রাত কাটায় নারকেলের ছোবড়ার জাজিমে। কোন এক বিরূপ মধ্যাকর্ষন তাকে মিলিত হতে দেয় না বিপরীত বিন্দুতে! ভিন্ন ধারার অন্য একজন কখনোই বিরহ ছোঁবে না ব'লে প্রেম আর মায়া এড়িয়ে ছুটছে পাহাড়ে, পাহাড়চূড়ায়; বা সমুদ্রে, ক্ষমাহীন ঢেউয়ের দংশনের দাগ শরীরময়_! উপরের সব লোকের সমষ্টিই হতে পারে আমি। আমার বহুমাত্রা। আমি নিজেকে একটি লোক ভাবি না। 'আমি' শব্দটি বহুত্ববাচক এবং ব্যাখ্যায়ন বিস্ময়সূচক! বিদ্যুতের মতো 'আমি' রূপ বদলাতে পারে। অদল বদল হয় চকিতেই। সেদিন মাঝরাতে বাসায় ঢোকার পথে একটা মৃত বিড়ালের চোখের গোমেটে পড়েছিল চোখ। বিড়ালটা আমার জীবন্ত চোখ পেয়ে আশ্বস্ত হল। কাত হওয়া কুচকানো দেহটা ঝাড়া মেরে রাতভর অলিতে গলিতে হাঁটতে করলো শুরু। বিষ্ময়বিহ্বলতায় বাসায় ঢোকা হয়নি। কিছুক্ষ্ণ এখানে সেখানে হেঁটে বাসার গেটে ফিরে দেখি বিড়াল মরাটা ওভাবেই পড়ে আছে নিথর ভোরের আলোয়! তবে কার কুচকানো দেহ সকাল পর্যন্ত অলিগলি হেঁটে এলো_!! যাহোক বাসার খাটে নিথর ভোরে অবিকল আতপক্লান্ত মরা বিড়াল ঘুম ঘুমাতে গেলাম। ঘুমিয়ে যাওয়ার পর বাসার ভেতরে কে ঘুমাচ্ছে আর বাইরে কে_ আলাদা করা যাবে না এতোটা একরকম ছিল অই ঘুম। 'আমি' কোনটা বের ক'রে আনাটা সত্যি বিস্ময়!!!

আজ পর্যন্ত এই ওয়েবসাইটে সাদমান সাকিব (নিষাদ) ৬৩টি কবিতা প্রকাশ করেছেন।