হারানো গদ্যের শূন্য ভার্স পদ্য
- দন্তস্য সিফাত ১৯-০৪-২০২৪

একান্ন কোটি বর্গ কিলো'র ছোট্ট এই গ্রহে হারিয়ে যাওয়া খুব সহজ !
জন্মের পর থেকেই হারানোর যাত্রা শুরু......
ক্লাস থ্রি ফোরের পর থেকে রুপকথা হারিয়ে যায়, আলাদিনের প্রদীপের নাগাল পেতে না পেতেই আলিবাবার দরজা বন্ধ হয়ে যায়, হারিয়ে যায় প্রিয় কার্টূন কিংবা প্রিয় কোন পুতুল,
খুব জলদি পড়ার টেবিলের ফাঁক দিয়ে খেলনা-বাটি হারিয়ে গিয়ে এক দালানসম পুস্তক এসে ঠেশ দিয়ে দাড়িয়ে থাকে......
শৈশব হারানো শুরু হয়, ততদিনে সময়ের হাত পা পাল্লা দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে দৌড়ানো শুরু করে।
খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে যাওয়া ছেলেটা আবিস্কার করে এখন তার আলাদা রুমে ঘুমুতে হবে, সারারাত মা'র গায়ের গন্ধ আর বাবার উপরে পা তুলে দিয়ে ঘুমানো নিমিষেই হারিয়ে যায়।।
হয়তো সাহস হারায় না, ছেলেটা বিছানার নিচের ভূতটার সাথে সারা রাত ঝগড়া করে, পপাই কিংবা সিনবাদের মত পিটিয়ে বের করে অহেতুক হারিয়ে যাওয়ার ভয়দের।
ক্লাস বাড়লে বই বাড়ে, কাধের ডোরেমনের ব্যাগটা এত ভর না সহ্য করতে পেরে হারিয়ে যায়।
ঠোঁটের নিচে হালকা দাঁড়িগোঁফের ছায়া পড়লে তার প্রতি আদর-স্নেহ যেন হারানোর রাস্তায় হাটা শুরু করে। হারিয়ে যায় জন্মদিন উদযাপন । কাজলা দিদিরা গুম হয়ে যায় হঠাত ।
শৈশব হেটে চলে গেলে কৈশোর দৌড় দিয়ে এসে ঘাড়ে চেপে বসে। আরেক ভূত।
বালক সাহস হারায় না কিন্ত, সারারাত যুদ্ধ চলে নিজের পরিবর্তনের সাথে, রাতারাতি বদলে যাওয়া পরিবেশের সাথে, প্রিয় মানুষ গুলোর সাথে...... বাল্যকালের খেলার সাথিও তাকে এড়িয়ে চললে সে খেয়াল করে তার কণ্ঠে আগের মিষ্টটা হারিয়ে গেছে।
প্রিয় চকলেট-চিপস হারিয়ে গেলে চা হয়ে যায় আপনজন। ততদিনে পড়ালেখার প্রেসার শত প্যাসকেল বেশি হয়ে সতর্ক বার্তা জারি করে।
সময় খুব দ্রুত হারিয়ে যায়, হারিয়ে যায় ভাল সময়...... শিশুপার্কে কিংবা বাজারে বাবার হাতধরে হাটা, হারিয়ে যায় ঈদের আনন্দ কিংবা নতুন পোশাক পড়ার উৎসাহ।
এত কিছু হারালেও বুকের গভীরের শুন্যতা হারায় না, হারায় না রাতের বেলার অন্ধকারের তেজ।
হাহাকার হারায় না, নির্জনতা হারায় না। প্রিয় রাস্তা বা মাঠ হারিয়ে যায়, সাইকেল চালানোর রাস্তা দখল করে নেয় দানবীয় ফ্লাইওভার...... এরচেয়ে বোধহয় বিছানার নিচে লুকিয়ে থাকা দানব ভাল ছিল...
যুবক ছেলেটার হারানোর ভয় অনেক বেশি...... গুটিকয়েক আপনজন যে যার তল্পিতল্পা গুটিয়ে হারিয়ে যায় গুলিস্তানের হকারের মতন। শিউরে ওঠা স্বপ্ন হারিয়ে যায় বাস্তবতার ধমকে।
প্রিয় রাস্তায় সাই সাই করে চলে যায় নীল রঙের মার্সিডিজ, এমন এক নীল গাড়ি শৈশবেই উঠান থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।
হারায় না দীর্ঘশ্বাস...... প্রিয় মানুষটা হারিয়ে গেলে ছেলেটা হারিয়ে যাওয়া সময়ের হিসেব শুরু করে, নিজেই স্মৃতির ইট পাথর জড়ো করে তৈরি করে বিশাল এক অদৃশ্য সৌধ !
ঘাড়ে ঝুলানো খয়েরি ব্যাগ হারিয়ে গেলে সেখানে এক এভারেস্ট দায়িত্ব এসে ঠাই নেয়......
এই সময়টা বড্ড হারানোর, শৈশব-কৈশোরের স্বপ্নরা প্রেতাত্মা হলে ঘুম হারিয়ে যায়, রাতের নিওন আলোয় জ্যোৎস্নার রঙ হারিয়ে যায়।
হারায় না আতংক ভয় কিংবা সংশয় !!
কোথা থেকে যেন হ্যামিলনের সুরের মত হারানোর সুর বাজতে থাকে রিপিট মোডে।
তারপর সব সুখস্মৃতির ইঁদুর লাফ দিয়ে বুড়িগঙ্গার পানিতে হারিয়ে যায়......
সব বিসর্জন দিয়ে যুবক ঘরে ফিরে গেলে শুন্যতা তাকে তার প্রাপ্য ঠিক ঠিক বুঝিয়ে দেয়......
শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত যুবক অ্যামাজনে হারিয়ে যেতে চায়, উত্তর মেরুতে তারার মিছিলে হারিয়ে যেতে চায়...... পোস্ট মর্ডানিজমের যুগে- জিপিএসের যুগে মানুষ হারিয়ে যাওয়া ঘোরতর অপরাধ ! স্বপ্ন হারিয়ে যাওয়া মামুলি !! এখানে সুই-মোবাইল হারিয়ে গেলে পাওয়া যায়, স্বপ্ন না !!
সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে ছেলেটি অপেক্ষা করে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার, হয়ত হারিয়ে যাওয়াতেই সার্থকতা !

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।