আরো অনুরণন
- অনির্বাণ মিত্র চৌধুরী ২০-০৫-২০২৪

[বিচ্ছিন্ন সময়ের বিচ্ছিন্ন কিছু অনুভূতি জমিয়ে রাখার ক্ষুদ্র প্রয়াসমাত্র। "অনুরণন" সিরিজের পর "আরো অনুরণন"]


জীবন কি কেটে যাচ্ছে না?
দিব্যিই তো যাচ্ছে!
না-পাওয়ার বেদনারা নাহয়,
মনে নীল রং ছড়াচ্ছে।


এক চিমটি ভালোবাসা দাও,
হতাশাগুলোকে স্যালাইন বানিয়ে গিলে খাই...


উসকোখুসকো চুল, মলিন মুখ
বিবর্ণ জীবন, ফেরারি সুখ
চোখের তারায় দুঃস্বপ্ন আঁকে স্মৃতি
স্বপ্নভঙ্গের কষ্টে ভাসে বুক।


মায়াবতী,
তোমার কাছে আমার এক জনমের ঋণ।
কারণ, তুমিই আমাকে বুঝতে শিখিয়েছো—
আমাকেও কেউ ভালোবাসতে পারে,
আমিও কারো ভালোবাসার যোগ্য।


মেঘের বাক্স ভরে কিছু স্মৃতি পাঠালাম প্রিয়
বৃষ্টি হয়ে ঝরবে যেদিন, যতনে কুড়িয়ে নিও।


বৃষ্টি যখন নামলো দৃষ্টি হঠাৎ থামলো
তোমার বারান্দায়
তুমিও এলোচুলে মেতেই উঠেছিলে
বৃষ্টির উচ্ছলতায়।
আমি বোকার মতো তাকিয়ে ছিলাম, কত
সময় এভাবেই গড়ায়
দমকা হাওয়া এসে তুমুল ঝড় নিমিষে
হৃদয়ে প্লাবন নামায়।


চোখে রাখো দু'চোখ,
মনে মনে কথা হোক
অভিমানের মেঘ ভেঙে
প্রেমের বৃষ্টি হোক।


ইচ্ছে হলেই ডাক পাঠিও
রঙিন মেঘের খামে
আসবো ছুটে ঠিক তখুনি
হৃদয়পুরের ট্রামে।


একটি স্বপ্ন দেখবো ব'লেই দু'জনে 
চোখের তারায় হারিয়েছিলাম মন
প্রতিশ্রুতি ছিলো কোন ভোরের কূজনে
শুনিয়ে যাবে প্রতীক্ষিত উচ্চারণ। 
সেই প্রভাতের নির্মল নৈসর্গিক আভায় 
বিমুগ্ধ চিত্তে উঁকি দিবে চপলতা 
কিন্তু হায়, আবেগের এক শোকসভায় 
হৃদয়ের বারান্দায় প্রভাতী নীরবতা। 

১০
আমি মানুষটা আগাগোড়াই নষ্ট,
পায়ের নখ থেকে মাথার চুল অব্দি আমার নষ্টামিতে ডোবা।
হে শুদ্ধমতি, তুমি আমায় গ্রহণ করো,
তুমি আমায় শুদ্ধ করো,
আমায় গ্রাস করো;
ব্লটিংপেপারের মতো শুষে নাও
আমার সমস্ত নষ্টামো।

১১
আমার মনের ঘরে তোমার অবাধ বিচরণ
তোমার মনের দুয়ারে নো এন্ট্রি নোটিশ
এ জন্মে তাই হলো না যে আর
তোমার আমার প্রেমের ইটিসপিটিস।

১২
কোন এক বর্ষার শেষে,
মেঘে ঢাকা সূর্যের মতোন
মেঘ সরিয়ে একটু উঁকি দিও
আমি শুভ্র কাশের পালকী সাজিয়ে
আসবো ছুটে প্রিয়।

১৩
আমার নৈমিত্তিক দৈন্যতায়
জড়াতে চাই নি তোমায়,
চেয়েছি সাজাতে তোমায় ঐশ্বর্যে, বৈভবে
নিজেকে রেখেছি তাই,
তোমার নৈর্ব্যক্তিক ভাবনায়;
বাহুডোরে আর রাখি নি ধরে অগৌরবে।

১৪
ভোরের স্নিগ্ধতা নিয়ে এসেছিলে তুমি
তাই নাম দিয়েছিলাম স্নিগ্ধা
দুপুরের কড়া রোদে পোড়ালে হৃদয়;
অসময়ে টেনে আনলে সন্ধ্যা।

১৫
নাইবা রাখলে রোজ,
আমার মনের খোঁজ
যেমন আছি তেমন-ই নাহয় রইলাম।
বাড়ছে, বাড়ুক দূরত্ব
কমছে, কমুক গুরুত্ব
আরেকটু বেশি কষ্ট নাহয় সইলাম।

১৬
কতবার যে তোমার দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি,
তুমি টেরও পাও নি।
টের পাও নি বলেই হয়তো আর পিছু ডাকো নি;
পিছু ডাকো নি বলেই আমি আজ এতোটা দূরত্বে
আর চারপাশে একাকীত্বের হাহাকার।

১৭
তুমি কাছে নাই তাই
মনের আকাশে শুভ্র চাঁদ হাসে না
তুমি কাছে নাই তাই
কবিতার ভাষা ছন্দ খুঁজে পায় না।
তুমি কাছে নাই তাই
মনবাগিচায় ফোটে না সুবাসি ফুল
তুমি কাছে নাই তাই
একই অংক বারেবারে করি ভুল।
তুমি কাছে নাই তাই
শুন্য খাতায় হয় না কিছুই লেখা
তুমি কাছে নাই তাই
সব আছে তবু আমি বড্ড একা।

১৮
চাঁদটা আজ ঢেকেছে কালো মেঘে
মনটা আজ ভাসছে কষ্ট আবেগে।
তুমি কাছে নাই, তাই চোখে ঘুম নাই
তারায় তারায় দুঃস্বপ্ন এঁকে যাই।

১৯
দুশ্চিন্তাগুলো ঘিরে রাখে মগজ,
কিছু ভাবার দেয় না সুযোগ
পাশ কাটানো নয় মোটেও সহজ;
সৃজনে তাই চরম দুর্যোগ।

২০
আমি চিনিনা, জানিনা তোমায়,
তাই নাম দিয়েছি অপরিচিতা।
চেনাজানার সুযোগ পেতে চাই;
অনুমতি পাবো কি তা?

২১
পুরনো দুঃস্মৃতিগুলো সব মুছে ফেলে
হৃদয়ে জমানো যত অভিমান ভুলে
এসো না আবার নতুন করে নতুন স্বপ্ন বুনি
এসো না আবার নতুন দিনের নতুন প্রহর গুনি...

২২
খরচের তালিকায় উঠে গেছে নাম
বেহিসেবি জীবনের কিবা আছে দাম?

২৩
টাকা নাই পকেটে,
গরিবিয়ানার ব্রাকেটে
বন্দী জীবন যাপন
দিন তবু যায় কেটে,
ফেসবুকে ঘেঁটেঘুঁটে,
নৈমিত্তিক সাতকাহন।

২৪
এতোটা মন খারাপ কেন হয়?
কেন এতোটা বিষণ্ণতা ভর করে শরীরে?
কেন হঠাৎ চোখের কোনে জমে জল?
কেন এতোটা তোমায় মনে পড়ে?

২৫
এই যে আমি বেঁচে আছি নিদারুণ তুমিহীনতায়
এই যে আমি মগ্ন আছি তুমিহীন তোমার মায়ায়
এই যে আমি ডুবে আছি তোমার আবেগী কল্পনায়
এই যে তুমি নেই কাছে, তবু তোমাকেই দেখি হৃদি-আয়নায়
একেই কি তবে প্রেম বলে, দরদিয়া?

২৬
সামাজিক জটিলতা ভালো লাগে নি কখনো,
তাই বৈরাগ্য চেয়েছিলাম মনে;
তোমার ভাবনারা আমায় কামাতুর বানালো
পড়ে গেলাম মোহের বাঁধনে।

২৭
রেখো ধরে হৃদ পিঞ্জরে
সাধের ময়না পাখি
যতন করে খুব আদরে
পিরীতে মাখামাখি।
সকাল সাঁঝে প্রেমের খোঁজে
করবে সে ডাকাডাকি
কাজের মাঝে হৃদয় ভাঁজে
নিও টেনে একাকী।

২৮
জানি অবহেলা তোমার অসহ্য লাগে
তাই —
অবহেলার পসরা সাজিয়ে
বসতি গড়েছি তোমার হৃদমহলায়।

২৯
মায়াবী চোখ দু'টো কেন রাখো রোদচশমায় ঢেকে?
স্নিগ্ধ মুখে কেন মুখোশ পরো মেকাপের রং মেখে?

৩০
অনেককাল তো হল, হয় না কো কথা
দু'জনই অভিমানী; তাই জমাট নীরবতা।
মৌনতায় ক্ষতি বেশি; কার কি বা লাভ?
অনেক তো হল আড়ি, কবে হবে ভাব?

৩১
মাঝেমাঝে ভাবি, ভুলে যাবো সব-ই
পুরনো কবিতা, ধূসর স্মৃতি, বিবর্ণ জলছবি।

৩২
মন থেকে সরিয়ে তোমায়
রাখবো বলো কোথায়?
মিশে আছো তুমি রক্তধারায়,
বইছো শিরায় শিরায়।

৩৩
সুখপাখি, কেন তুমি আমায় ছেড়ে যাও?
বারে বারে খাঁচা ভেঙে কেনো তুমি পালাও?
নিঃসঙ্গ হৃদয় ছেড়ে তুমি চলে গেলে
সুখহীন জীবনে শান্তি কি কখনো মেলে?
যেও না, যেও না চলে- মিনতি করজোড়ে
এসো তুমি ফিরে আবার আমার বাহুডোরে।

৩৪
যে ছলনায় জড়ালি আমায় মিথ্যে ভালবাসায়
নীল বেদনায় ভাসালি আমায় মিছে অভিলাশায়।
যে সুখেতে, এই বুকেতে জ্বাললি প্রেমের অনল
তোর প্রনয়ে সব হারিয়ে ঐটুকুই সম্বল।

৩৫
কত কথা বলার ছিল,
কত কথা শোনার।
কত কিছু দেখার ছিল,
কত কিছু জানার।।
কত কথা ভাবার ছিল,
কত কথা লেখার।
কত কিছু শেখার ছিল,
কত কিছু বুঝার।।
হল না কিছুই শেষ পর্যন্ত,
জীবন খাতায় সবই শুন্য।
তবুও ঘুরি ফিরি অবিশ্রান্ত
কিছু একটা হওয়ার জন্য।।

৩৬
তুমি আমার রাতের জ্যোৎস্না,
সকালের সোনা রোদ
তুমি আমার অবুঝ আবদার,
খামখেয়ালি অনুযোগ।
তুমি আমার শারদ আকাশ,
স্রোতস্বিনীর শান্ত ঢেউ
তুমি আমার মনের জানালায়
উঁকি দিয়ে যাওয়া কেউ।

৩৭
কথা ছিলো দু'জনে জেগে রবো সারা নিশি
তারাদের সাক্ষী রেখে হবো জোছনা বিলাসী।
কথা হবে মনে মনে, বাতাসে বাজবে বাঁশি
হবে হৃদয়ের লেনদেন আর ভালোবাসাবাসি।

৩৮
মেঘের ডানায় পাঠিয়ে দিলাম
নিবিড় প্রেমের ইশতিহার
যতন করে নিও গো কুড়িয়ে,
খুলিও তোমার মনের দ্বার।
অবসরে তুমি পড়িও গোপনে,
বলিও মনের অভিসার
তোমার মনসমুদ্রে ভাসব আমি,
কাটবো ঠিকই সাঁতার।

৩৯
পরাণের পদ্মবনে ফুটে আছে যে ফুল
সে তো তোমারই জন্যে প্রিয়তা
একমুঠো ভালোবাসা তুলে দেবো নির্ভুল;
নিয়ে এসো নিগূঢ় প্রেমের বারতা।

৪০
তুমি নেই তাই মৌন বিকেল,
বিষণ্ণতার মিছিল
তুমি নেই তাই মন খারাপি;–
খুশির ঘরে খিল।

৪১
হৃদয়ে আঁকা আছে যেই ছবিটা
অস্পষ্ট, তবুও ভীষণ চেনা
খুঁজে ফিরি অবিরল সেই মুখ
পাবে কিনা– মন নিজেও জানেনা।

৪২
অতঃপর ফিরে আসা,
খুঁজে পাওয়া ভালোবাসা
তোমার মনের ভাঁজে
সময় যেন থমকে যায়,
মত্ত হওয়া তোমার নেশায়;
হৃদয়ে প্রেমবীণা বাজে।

৪৩
যদি জিজ্ঞেস করো, "কেমন আছো?"
উত্তর কী দেবো পাইনা ভেবে।
যদি বলি, "এইতো, বেশ ভালো আছি"
সেকথা কি সহজে মেনে নেবে?

৪৪
আর এভাবেই ভুলে যেতে হয়।
পূর্ণিমার চাঁদও একা জেগে রয়;
আমিও যেমন জেগে আছি সারানিশি
নগর ভেসে যায় চাঁদোয়ায়,
কবিরা চিত্র আঁকে কবিতায়,
ভুলে যায় অমাবস্যার আকাশে শুন্য শশী।

৪৫
কতদিন দেখিনা ঐ মুখ,
কতদিন শুনিনা সেই মধুর বাণী,
কতদিন তোমার মানস সরোবরে
ডুবসাঁতার কাটা হয়নি।
কতদিন দেখিনা ঐ চোখ
রাগ আর অভিমানে ক্রুর চাহনি
কতদিন সাধিনি নিরালায় বসে
প্রেমরাগের অক্ষয় রাগিনী।

৪৬
যদি তুমি না থাকো পাশে
ভরা পূর্ণিমাও যদি আসে
মনে হয় যেন অমাবস্যা
যদি ঐ মুখ নাইবা হাসে
হাঁড় কাঁপানো শীতের মাসে
নেমে আসে ঘোর বর্ষা।

৪৭
প্রচন্ড উপেক্ষা সত্ত্বেও কেন ছুটে আসি আবার
কেন তোমাকে পাবার নেশা আমার দুর্নিবার
পাবো না জেনেও কেন পেতে চাই স্পর্শ তোমার
কেনইবা স্বপ্ন বুনি তোমার মায়ায়— ভালোবাসার?

৪৮
ভুলে যাবে? যাও তবে
বাধা দেবার মতো জোর নেই
মুছে দেবে? দাও তবে
আবছা হয়ে রইবো আড়ালেই।
শুধু চাইবো যেন তব বাণী
কর্ণকুহরে মাঝেমাঝে উঠুক রণি
মনের অলিতে গলিতে যেন
মাঝেমাঝে বাজে তব নূপুরধ্বনি।

৪৯
আমি তাকাই তোমার পানে
তোমার দৃষ্টি অন্যখানে
কত বিষাদ এসে
দীর্ঘশ্বাসে
ছড়ায় আনমনে
কেবল হৃদয় জানে।

৫০
ছেলেটি ভালোবাসতো পাহাড়, তাই সে পাহাড় হতে চাইলো
মেয়েটির চাইতো উচ্ছলতা, তাই সে হলো স্রোতস্বিনী নদী।
ছেলেটি স্থাণুর মতো অবিচল, নির্বিকার দাঁড়িয়ে রইলো
আর মেয়েটি সেই পাহাড় বেয়ে নেমে এলো, বয়ে গেলো নিরবধি।
অবশেষে,
সমুদ্রের কাছে এসে 
নদীটি খুঁজে পেল মোহনা।
সঁপে দিলো তার জীবন-যৌবন সমুদ্রের উত্তাল বুকে
অতঃপর,
পাহাড়ের অব্যক্ত বাসনা আর প্রকাশ্য হলো না।

৫১
আর কতকাল যুদ্ধ চলবে
হৃদয় অনুতাপে ক্রন্দি
সাদা পতাকা উড়িয়ে দিলাম
হোক না এবার সন্ধি।
হোক না এবার যুগলমিলন
বাজুক প্রেমের বাঁশরি
মন সমুদ্রে আসুক জোয়ার
ভাসাই আবার প্রেম-তরী।

৫২
তুমিহীনা মরা নদী —
জলের নিস্তরঙ্গ ঢেউ
তুমিহীনা ভীড়ের মাঝে
একলা হাঁটা কেউ।
তুমিহীনা বিষণ্ণ বিকেল —
ঠান্ডা চায়ের কাপ
তুমিহীনা দুঃস্বপ্নের রাত;
ঘুমের ঘোরে প্রলাপ।

(সমাপ্ত)

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।