আরো একটু অনুরণন
- অনির্বাণ মিত্র চৌধুরী ২৯-০৩-২০২৪

[বিচ্ছিন্ন সময়ের বিচ্ছিন্ন কিছু অনুভূতি জমিয়ে রাখার ক্ষুদ্র প্রয়াসমাত্র। "অনুরণন" সিরিজের পর "আরো অনুরণন", এরপর "আরো একটু অনুরণন"]

১.
তারপরও তো কথা থাকে।
ভুলে যাবো বললেই কি ভুলে থাকা যায়?
যে সমস্ত স্মৃতি গেঁথে আছে মনের মণিকোঠায়
চাইলেও যে তাকে ছুঁড়ে ফেলা দায়।

২.
তোমার অধরে ভেজাবো ব'লে
দিইনি চুমুক অ্যালকোহলে।
পোড়াইনি ফুসফুস নিকোটিনে
তোমার নিশ্বাস পুরবো ব'লে।

৩.
যে আঘাত দিয়েছিস প্রাণে
ক্ষতের চিহ্ন আঁকা মনের গহীনে
পারবি না, যতোই চাস সারাতে
সুখে থাক তুই নিজের মতন
আমিও মনে মনে করেছি যে পণ
চাইনা আর তোর স্মৃতি মাড়াতে।

৪.
তোমার হাতে নাটাই,
আর আমি হলাম ঘুড়ি
উড়ি আমি যেথায়,
তোমার টানেই ফিরি।
সাবধানে গুন টেনো
সামলে রেখো নাটাইটা
খেয়াল রেখো যেন
না হই আবার বোকাট্টা।

৫.
তোমার জন্যে প্রেমের বাইবেল,
শুদ্ধ চিত্তে নিত্য পাঠ
তোমার জন্যে হই কালিদাস —
প্রেমের স্তবক একশো আট।

৬.
খরা বুকে বসে আছি,
আনবি কবে জোয়ার?
কবে আনবি সূর্যোদয়,
খুলবি মনের দুয়ার?
তুই না এলে শুষ্ক মৌসুম,
হৃদয় পাড়ায় মঙ্গা
ছুঁয়ে দিলেই উথালপাতাল
বইবে প্রেমের গঙ্গা।

৭.
তুমি হাসো নি বলে আজ
আকাশের মন হ'ল ভার
ফিরে চাও নি বলে তাই
লাগে না সুর পাখিটার।
তুমি আসো নি বলে আজ
ফুলেরা সাজে নি বাগানে
ভালোবাসোনি বলে তাই
বিরহ জেগেছে পরাণে।

৮.
পৌষের কোন এক ভোরে
কুয়াশাভেদী আলোর মায়ায়
দেখেছিলাম তোমায়
এক নদী উষ্ণতা ঠোঁটে
ধুমায়িত চুমুক দিতেই
দেখি, তুমি নাই
হায়, তুমি নাই!

৯.
ভোরের শিশির যেমন
মিলিয়ে যায় হাওয়ায়
তুমিও ঠিক তেমন
হারিয়ে গেছ অবেলায়।
চলে গেছ তুমি
চিহ্ন এঁকে গেছ বুকে
ধুঁকছি ভীষণ আমি
তুমিহীনতার অসুখে।

১০.
তুই খুঁজে নিয়েছিস তোর পথ
আমার ছিলো যে ভিন্নমত
তাই —
আলাদা হলো কক্ষপথ।
হয়তো তুই ঠিক, অথবা ভুল
কষবো না সে হিসেব একচুল।
শুধু বুঝি —
দুজনেই গুনবো মাশুল।

১১.
তুই তো জানিস-ই অভিমানিনী,
অভিমান আমার একদম সহ্য নয়।
একা একা বাঁচতে এখন জানি,
আপেক্ষিক শূন্যতায় করি না আর ভয়।

১২.
পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির শরীরটা নয় বালিকা,
চেয়েছিলাম তোমার ঐ মনটাকে ছুঁতে
ভুল বুঝে অবলীলায় জ্বেলেছো হৃদয়ে চিতা
ব্রাকেটে পুরেছো তাই, রয়ে গেলাম উহ্যতে।

১৩.
নাহয় জিতেই গেলি তুই,
আমি হার নিয়েছি মেনে
তবুও যদি পারিস সুখী হতে
খুশি হ'ব খুব জেনে।

১৪.
তুমিহীন এ মন গহীনে বাজে বিরহ বাদ্য
শূন্যতার ওম বুকে, নিভানোর কি বা সাধ্য?
তুমি এলে পূর্ণ হবে প্রেমের উপপাদ্য
হৃদমন্দিরে তুমিই দেবী, তুমিই পরম আরাধ্য।

১৫.
কেটে গেছে তাল, ভুলে গেছি স্বরলিপি
কে যেন দিলো খুলে নীল বেদনার ছিপি।
মগজ গিলে খায় হতাশা, বাড়তে থাকে বি.পি.
হৃদয় জুড়ে বয়ে চলে বিষাদের মিসিসিপি।

১৬.
দৃষ্টি থামাও এ দু'চোখে,
নামাও স্বপ্ন — স্বপ্নভূমে।
প্লাবন জাগাও খরা বুকে,
প্রেম যে আধেক ঘুমে।

১৮.
তোমার জন্য ডায়েরী জুড়ে একগুচ্ছ কবিতা
তোমার জন্য ভোরের আকাশ— একরাশ স্নিগ্ধতা।

১৯.
তুই আমার শখ নোস,
তুই আমার অভ্যাস
তুই আমার স্বপ্ন নোস,
তুই আমার দীর্ঘশ্বাস।

২০.
হাত বাড়িয়ে পাই নি ছুঁতে,
মন বাড়িয়ে তো পেয়েছি
মনের ঘরেই খুব যতনে
জায়গা জুড়ে রেখেছি।

২১.
তুই যে আমার ভোরের আযান,
তুই যে সন্ধ্যাপ্রদীপ
তুই যে আমার নিঝুম দুপুর,
দীঘির জলে ছিপ।

২২.
তোর পিরিতে হৃদয় আমার হলো রে বেসামাল
তোর নামেতে প্রেম উজানে দিলাম তুলে পাল।
তোর হাতে আজ দিলাম সঁপে আমার হৃদয় বৈঠা
পরাণে পরাণ মিলিয়ে দিবি, তুই সে পূরোয়িতা।

২৩.
তোমায় জিতিয়ে দেবো ব'লে
আমি রইলাম বিজিতের দলে।

২৪.
দৃষ্টি থামাও হে চাতকিনী,
এ মনের বাস্তুভিটা খালি পড়ে আছে...

২৫.
মনের উঠোনে দাও ছড়িয়ে
ভালোবাসাময় রোদ্দুর
হাতে হাত রেখে চলো হারিয়ে
দু'চোখ যায় যদ্দুর।

২৬.
শাই করে ছুটে গেল তোর মুখ
চোখের পলক ফেলার আগেই
দিয়ে গেলি দিলে ভীষণ চোট;
এঁকে গেলি সেই চাহনি– কল্পরাগেই।

২৭.
দৃষ্টি আমার পিছলে গিয়ে পড়ল তোমার চোখে
শকুন হয়ে তাকিয়ে আছি, যা-ই বলুক লোকে।
কি যে মায়া ঐ দু'চোখে মুগ্ধ হয়েই রই
কাটবো সাঁতার চোখের মায়ায়, হোক না যতো অথই।

২৮.
মনের কোণে জমুক অভিমান,
হোক না কিছু বিষাদ
ভুলের ভাঁজে চাপা পড়ে যাক
পুরনো স্মৃতির আহ্লাদ।

২৯.
রেগেমেগে হঠাৎ সেদিন দিলো একজন ঝাড়ি —
"তুই একদম বেশি বেশি। যা, তোর সঙ্গে আড়ি"
ভাবলাম আমি মনে মনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ি —
"তবে তাই হোক, নাহয় হ'ল বিরহের বোঝা ভারি।"

৩০.
ভুলে গিয়েছি কিছু পুরনো অভ্যেস
মেনে নিয়েছি ঠিক– এই আছি বেশ
নষ্ট কিছু স্মৃতি; আবেগের উন্মেষ
হোক না এমনকিছু– শুরুর আগেই শেষ।

৩১.
যেদিন তোমার অযত্নের বাগানে গোলাপ হয়ে ফুটবো,
বুঝবে সেদিন কতখানি ভালোবাসা ছিলো।

৩২.
তোমার পছন্দ বর্ষার রিমঝিম,
আমি তাই শ্রীহীন শীত হলাম।
পাছে ভালোবেসে ফ্যালো তাই
কুয়াশা হ'য়ে পাতার গায়ে কাব্য লিখলাম।

৩৩.
কী এমন খোঁজো তখন অনামিকার নোখে
যখনই দৃষ্টি রাখি তোমার কাজল চোখে।

৩৪.
তোমার তখন উনিশ বোধহয়,
আমি একুশ পেরুনো যুবক
বিদ্যেদেবীর পুজোয় গিয়ে
আটকে গেছিলো দু'চোখ।
দেবীর মতোই দেখতে তোমায়,
আমি মন খোয়ানো পাতক
মন্ত্র ভুলে আওড়ে ছিলাম
প্রেমের নতুন স্তবক।

৩৫.
মৌসুমি ঝড়ো হাওয়ার মতো এসেছিলে তুমি
অকারণে ঝড় তুলে ডুবিয়ে গেলে হৃদয়-ভূমি।

৩৬.
নাহয় কিছু বিষাদ
আজীবন জমা থাক
হৃদয়ের লকারে...

৩৭.
মনে জমানো অনেক কথা হঠাৎ কান্না হ'য়ে ঝরে
চেনা-অচেনা মুখের ভীড়ে তবুও তোমায় মনে পড়ে।
হঠাৎ করেই খুঁজে পাওয়া, আবার হঠাৎ হাওয়া
উথালপাতাল জীবন-তরী উল্টো স্রোতে বাওয়া।

৩৮.
আমারও তো ইচ্ছে হয়, জাপটে ধরি স্বপ্নকে,
ছুঁড়ে ফেলি হতাশার জঞ্জাল
বিশ্বস্ত নাগর আমার কিছুতেই ছাড়ে না পিছু,
অভ্যস্ত হয়ে গেছি আজকাল।

৩৯.
একটু একটু করে অযতনে গড়া অভ্যেস
মগজে বাসা বাঁধে, গেঁথে যায় অনিমেষ।
সম্মোহিত ভাবনারা বদলে ফেলে ভেশ
মুছে যাওয়া কিছু স্মৃতির রয়ে যায় রেশ।

৪০.
জোর করে ভুলে যাওয়া; তবুও রেশ রয়ে যায়
ফেলে আসা স্মৃতিগুলো অগোচরে পোড়ায়।

৪১.
চাইলেই তুমি কাঁদতে পারো
কোলবালিশে মুখটা চেপে
আমার তবে পাষাণ পরাণ;
কষ্ট পেলেও উঠে না কেঁপে।
মনের প্লাবন শ্রাবণ হয়ে
যায় না বয়ে আমার চোখে
মন খারাপেও মুখে হাসি,
আবেগ লুকাই গভীর শোকে।

৪২.
তুমি সাড়া না দিলেই
হৃদয় পাড়ায় সর্বগ্রাসী ঝড় ওঠে
দু'চোখের জানলায়
আবেগী ঢল নামে হৃদয়ের চোটে।

৪৩.
একটি কবিতা লিখবো তোমায় নিয়ে,
তারপর —
সকল চ্যাংড়ামো থেকে ইস্তফা দিয়ে
নেবো অবসর।

৪৪.
হোক না সে ক্ষণিকের টুকরো আলাপন
তা-ই নিয়ে কেটে যাবে বাকিটা জীবন।

৪৫.
চাইতেই পারো নিখাদ ভালোবাসা,
দিতে পারি এক নদী নোনাজল
নিতেই পারো একমুঠো নিরাশা;
বেঁচেও মৃত থাকার নিপুণ সম্বল।

৪৬.
কিছু দমকা হাওয়া এসে যখন হঠাৎ হৃদয় ছুঁয়ে যায়,
আমি টের পাই, তোমার দীর্ঘশ্বাস ছিলো সে হাওয়ায়।

৪৭.
এলোমেলো ভাবনা আমার
পায় না ছুঁতে কল্পনা তোর
স্বপ্ন আটক আধেক ঘুমে,
বাদবাকিটা মায়ার ঘোর।

৪৮.
কেন এত স্নিগ্ধতা তোমার মুখে,
কেন এত মুগ্ধতা হৃদয় ছুঁয়ে যায়?
তবুও যে মৌনতা তোমার চোখে,
নিটোল নীরবতা রেখেছো বজায়।

৪৯.
অভিমানিনী, তুমি দেখে নিও —
তোমার অভিমানের আগুনে পুড়ে
একদিন ছাই হবো।

৫০.
হৃদয়েশী,
আমার কাছে তুমি কম্যুনিজমের চেয়েও দুর্বোধ্য
কী করে সঁপিবো তোমায় বলো হৃদয়ের নৈবদ্য ?

৫১.
চাইলেই যে বলতে পারি না সবকথা
এ তো আমার তুচ্ছ প্রাণের আদিখ্যেতা।

৫২.
তোর মতোন কেউ আর ডাকে না সেই চেনা নামে
যাযাবর ভাবনারা আজও তোকে ভেবেই থামে।

৫৩.
সারাটা সকাল, সারাটা দুপুর কাটলো একা একা
রইলে তুমি আপন কাজে, দিলে না আমায় দেখা।
বিকেল গড়ায়, প্রখর তাপে চুপসানো শেফালিকা
গোধূলিতে কি আসবে তুমি অভিমানী মেঘবালিকা?

৫৪.
চোখ রাখি না তোমার চোখে
ওতে ভীষণ মায়া
তবু যেদিক পানে দৃষ্টি রাখি
দেখি তোমার ছায়া।

৫৫.
যদি নাইবা থাকে কিছু বলার
লিখে দিও একখানি চিরকুট
বুঝে নেব কত অভিমান জমা,
কত কথা রয়ে গেছে অস্ফুট।

৫৬.
দৈনন্দিন ভালোবাসায় তুমি আছো মিশে
তুমিহীন জীবনযাপন বড্ড বেশি ক্লিশে।

৫৭.
কিছু কথা হোক আলাপন,
কিছু স্মৃতি হোক অনুরণ,
কিছু ব্যথা থাক না গোপন
মনের ভাঁজে
কিছু আশা হয় না পূরণ,
কিছু জটিল সমীকরণ,
কিছু বলা নিষ্প্রয়োজন
হৃদয় মাঝে।

৫৮.
চাইলেই কি ফিরে আসা যায়?
চাইলেও কি ভালোবাসা পায়?
অপ্রাপ্তির রোদ্দুর হৃদয় আঙিনায়
স্বপ্নের বাগান অগোচরে পোড়ায়।

৫৯.
কখনো হয়নি বলা গোপন কথাটি সেই
একাকী পথচলা আজও পুরনো পথেই...

৬০.
অভিমানটাই শুধু দেখলে,
দেখলে না চোখের কোনে জল
আলাদা সুখের কথা ভাবলে,
ভাবলে না বিষাদ কতটা অতল।

৬১.
অভিমানগুলো মনের কোণে কষ্ট বিষাদ আঁকুক
মাস্তুলহীন জীবন তরী উল্টো স্রোতে ভাসুক।

৬২.
তুমি আমার নীল বেদনার আকাশে
এক টুকরো সাদা মেঘ
তুমি আমার পড়ন্ত বেলার কার্নিশে
একমুঠো হিম আবেগ।

৬৩.
লাল-সাদা শাড়িতে তুমি ঠিক যেন গো দেবী
ইচ্ছে জাগে হৃদকমলে তোমার হৃদয় সেবী।

৬৪.
তোমার কপালে লাল টিপ,
সিঁদুরে রাঙানো সিঁথি
আমার ললাটে কলঙ্কের দাগ,
কণ্ঠে বৈরাগ্য গীতি।

৬৫.
শোনাতে পারিনি তোমায়
অনুরাগের রাগিণী; তাই —
অভিমানের পত্র পাঠানো
যেন অমার্জনীয় অন্যায়।

৬৬.
ধরে রাখতে চাইনি হৃদয় পিঞ্জিরায়
ডানা মেললে তাই আকাশের নীলে
পড়ে থাক শূন্য খাঁচা মনের বারান্দায়
হাহাকার জুড়ে থাক বিষাদী মিছিলে।

৬৭.
ভালো তো আর বাসতে পারি না
তোমার মতোন করে
ভুলেও তাই থাকতে পারি না
তোমার আড়ালে সরে।

৬৮.
আরো একটা দিন তুমিহীন কেটে যাবে,
এবং এভাবেই যাবে আরো কিছু রাত
নৈরাশ্য বুনে যায় প্রতীক্ষার স্বপ্নজাল,
বিষণ্ণতা নীরবে শেখায় নিঃসঙ্গতার ধারাপাত।

৬৯.
বরং তুমি আমায় ঘৃণা করো;
যদি ভালোবাসতে নাই বা পারো,
মিছিমিছি দোটানা সব ছাড়ো।
(সমাপ্ত)

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।