হাতে ধরি পায়ে পরি
- সাইফ রুদাদ - আহ্বান ২০-০৪-২০২৪

মেঘকন্যা মেঘকন্যা খেয়েছো কি কবু
রাস্তার পাশের ডাস্টবিনের পঁচা শাবু?

জসীমুদ্দির বড় ছেলে হুমায়নে
সেদিনও গিয়েছিল ডাস্টবিনে,
খাবারের আশায় দশ্যিদের সাথে
কুকুরের দলও আসল জানি কোথা থেকে।

মাত্র এক টুকরো পঁচা রুটি নিয়ে
কুকুর আর মানুষ দিল ঝগড়া বাধিয়ে,
ক্ষুদার্ত কুকুরের হিংস্র কামড়ে
খাবারের জন্যে হুমায়ন গেল মরে।

তুমি মেঘকন্যা নেওনি কবু খোঁজ
কেন ঝগড়াটে হুমায়ন?কেন হল লাশ?
শুধু গালি দাও ছিঃ ছিঃ বলে
হুমায়ন বস্তির ছেলে বলে।

তুমি ধনীর দুলালী মেঘকন্যা
তাই ত বোঝ না বস্তির ছেলের কান্না।

মনে কি পড়ে ছোট্ট বেলায়
মা বাবা তোমার কত মমতায়,
কত স্নেহে খাইয়েছিল তোমায়
আমারও তো তোমার মতো
মা বাবার হাতে খেতে মন চায়।

মেঘকন্যা মেঘকন্যা পড়েছ কবু কি
পুরণো ছেড়া জামা, তালির শাড়ি?

গেল ঈদে জসীমুদ্দির মেজো ছেলে
আব্বুর কাছে কেঁদে কেঁদে বলে
আব্বু আমায় দিবে কিনে নতুন জামা?
ভীষণ ধমকে বের করে দিল সেজোকে
টাকার অভাবে হুমায়নেরে পড়াতে পারেনি
তিন টুকরো নতুন কাফনের কাপড় জসীমুদ্দি,
এ দুঃখ হতবাগা বাবা কোথায় দিবে চাপা।

তুমি ধনীর দুলালী মেঘকন্যা
তাইতো বুঝ না গরিবের কান্না।

মনে কি পড়ে ছোট্ট বেলায়
কত মমতায় তোমার বাবা তোমায়,
চুমু খেয়ে গালে কপালে
আম্মু কী চাই দাও বলে।
নচেৎ এখুনি চল গোসাইরহাটে
নাম করা ওই হাজী মার্কেটে।
যত খুশি যেটা খুশি দিব কিনে
দেখ দেখ কোনটা মানায় পড়নে।

আমারও তো মন চায় তোমার মত
ঈদগুলি আনন্দে আনন্দে কাটাতে।

তুমি ধনীর দুলালী মেঘকন্যা
ঘুমিয়েছো কি কবু ভাঙা ঘরে,
যেখানে প্রদীপ যায় নিভে ঝটকায়
ফোটা ফোটা বৃষ্টির পানিতে।
তুমি তেলাপোকা ভয় পাও
আর শিয়াল আমার বাড়িতে।

এই কথা গুলো বন্ধুর কাছে বলে
জসীমুদ্দির ছোট্ট ছেলে
বন্ধুরে একে একে ভাইয়েরা গেল
শেষে ভাতের অভাবে বাবাও মরল।
এই শোনশোন বন্ধু ভাঙা এ বস্তির ঘরে
এবার আমার পালা আমিও বুঝি যাব মরে।

হু হু করে নিঃশব্দে বন্ধু তার কাঁদে
এবার ও যদি বুঝত মেঘকন্যা
তবে হয়ত বেঁচে যেত জসীমুদ্দির
বংশের একেবারে শেষ প্রদীপটা।

কেমনে বুঝিবে তুমি হে মেঘকন্যা
তুমি আছো মহাসুখে অট্টালিকার পরে,
কেমনে বুঝিবে ঝটকা আর বৃষ্টির পানির
জ্বালা যন্ত্রনা দুঃখ বেদনা এদুঃখীর।

হাতে ধরি পায়ে পরি হে মেঘকন্যা
এসো এসো তুমি আর্তমানবতার সেবায়
হয়ত তোমার সামান্য একটু দয়ায়
চিরদিন জ্বলবে হাজার বাড়ির শেষ প্রদীপটা।

০৪ মার্চ ২০১৫ইং
সদর হাসপাতাল, শরীয়তপুর।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।