আমি মূর্তি হয়ে গেলাম
- সাইফ রুদাদ ১৯-০৪-২০২৪

এই তো গেল বছর ছিলাম সাভার,
কোচিং এর সুবাদে
ছায়াবীথি থেকে হেটে হেটে রানা প্লাজার
সামনে থেকেই বাসে উঠি।

প্রতিদিন দেখি রানা প্লাজার সামনে চল্লিশ উর্ধ্ব
মহিলা পুরুষ দাঁড়িয়ে কি যেন খোঁজে
নড়াচড়া করে না, শুধু মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকে,
শুধুই চোখ নড়ে ছলছল করে।

জাহিন আর আমি রানা প্লাজার সামনে দাঁড়াই,
একি পা ব্যবহার করতে পারছি না
হঠাৎ প্যারালাইসেজ হল না কি?
হায় হায় একি আমার সকল ক্রীড়া বন্ধ
যেন প্যানিক ডিজঅর্ডারে পেয়েছে আমায়।

শ্রমিকের রক্তে ধোয়া লাল খণ্ড খণ্ড ইট
গুলো মানুষেরা পায়ে পিষতে পিষতে ধূসর
রঙে পরিণত করে দিয়েছে,
আমি দেখতে পাই
এই ধূসর রঙের ভিতর থেকে মাঝে মাঝে
বিদ্রোহের আগুনে জেগে উঠে গার্মেন্টস
শ্রমিকের জমাটবদ্ধ রক্ত।

আমি যে কবে? কখন? মুর্তি হয়ে গেছি বুঝতে
পারছি না?
জাহিন কাঁধে হাত দিতেই বিদ্যুৎ চমকে গেল
শরীরের মধ্যে
বলল একি তোর চোখ ছলছল কেন? তোর
তো কেউ মরেনি
জাহিন আমার মুর্তিরূপ ভেঙে দিল, কিছুই বলিনি
তাকে।

বাটার শ্রমিকেরা ধূসর মাটি রক্তে ধুয়ে লাল করে
ইট তৈরি করে
ইট তো নয় যেন থকথকে জমাটবদ্ধ বদ্ধ রক্ত।

রানা প্লাজার মালিকেরা সেই রক্তের জমাটবদ্ধ ইট
সাদা করে ব্যবহার করে
বাটার শ্রমিকের অবমূল্যায়ন রক্তে জমাটবদ্ধ লাল
ইট মেনে নেয় নি।

মুক্তা যেমন ঝিনুকে ভাল থাকে, শামুকে থাকে না
তেমনি রক্তের জমাটবদ্ধ ইট সাদাতে ভাল থাকেনি
সকল সাদা পেরিয়ে মুক্ত আকাশে বেরিয়ে
গার্মেন্টস শ্রমিকের রক্তে ধুয়ে নিয়েছে গা
মুক্ত ইট যেন আবার জমাটবদ্ধ রক্ত হয়েছে,

টিনের বেড়িগেটের পাশ থেকে একটি ইট
আমাকে ফিসফিস করে বলল আমি বাটার শ্রমিকের
রক্তে জমাটবদ্ধ ইট
আমাকে অপব্যবহার তো আমার স্রষ্টার অপমান
তাই বেরিয়ে এলুম রানার গলা চেপে ধরতে।
আরও বলল শ্রমিকের সফলতা মানুষ সহ্য করতে
পারে না
তাই পায়ে পিষতে পিষতে আবার ধূসর করে
দিয়েছে আমাদেরকে।
ইটের কথায় আমি আবার মুর্তি হয়ে গেলাম।

খানিক চুপ থাকার পর পাশ থেকে সিমেন্টের
সাথে লেপ্টে থাকা বালুকণা বলল
পৃথিবীর বুকে মানুষের মত একজন আছে কিন্তু
তিনি মানুষ নন
বিস্ময়ে জানতে চাই তবে কি তিনি ঈশপের
গল্পের সেই ---
বালুকণা থামিয়ে বলল না তিনি "হেমা হেলাল" তিনি
শ্রমিকের কল্যাণ চান।

তারপর থেকে আমি হেমা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম।
কিন্তু আজ সেই বালুকণা খবর পাঠাল হেমা হেলাল
মানুষ।
আমি এবার সত্যি সত্যি মূর্তি হয়ে গেলাম।

০৫ অক্টোবর ১৫ইং
কামরাঙিচর, ঢাকা।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।