অদ্বি || ঈদ সংখ্যা ২০১৬
- আজাদ বঙ্গবাসী - লিটলম্যাগ ২৯-০৩-২০২৪

                               কবিক্রম                    

ইমরান মাহফুজ,  কাজী মেহেদী হাসান,  ডালিয়া 

চৌধুরী,  তিথি আফরোজ, দন্তন্য ইসলাম, দ্বিত্ব শুভ্রা,

নকিব মুকশি,  ফরিদা ফারহানা, বিমলেশ রায়,   

মাহফুজ মুজাহিদ, রহিমা আফরোজ মুন্নী,  রিকেল,

রুদ্র নীলিম,  রুদ্র রহমান, শাহানা সিরাজী,  শিবলী 

শাহেদ, শিমুল জাবালি, সাজ্জাদ সাইফ, সাম্য শাহ,

সারাজাত সৌম,  হিরণ্য হারুন 

 

   


♥♥♥

 

   উৎসর্গ




- তনু বোন আমার, 

   আমাদের অপারগতা ক্ষমা করো।


- এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী

   মাহমুদা আক্তার মিতুর আত্মা, সুবিচারে কাঁদে।


-  হোটেল হলি আর্টিজানে  নিহতদের মত 

    ধর্মান্ধে  আর কারো বলি চাইনা।





♥♥♥


                            অদ্বি কথন

ছাপার অক্ষরে ঈদ সংখ্যা বেরিয়েছে অনেক। 

আমারও তেমনটাই ইচ্ছা ছিলো। কিছু সীমা -

বদ্ধতায় সে  পথ মাড়ানো হয়নি আমার। লিটল 

ম্যাগের আয়ু সল্প আর দীর্ঘ যাই হোক; তার কিন্তু বৃহৎ কলেবর ও আবেদন থাকে। এখানে মুক্ত 

সাহিত্য চর্চার বিস্তীর্ণ ব্যপ্তি বিরাজমান। অস্থির সময়। তারুণ্যের মনতলে কালো ছায়া। হটেলে 

রেস্তুরায়, পার্কে, জনচলাচলে, ঈদ জামাত এবংকি 

যেকোন ভীড়েই একটা চাপা আতঙ্ক। এই বুঝি 

বিপদগামী কেউ একজন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বসবে। 

এতো কিছুকে উপেক্ষা করেও বৃষ্টিস্নাত ঈদ বিশ্ব মুসলিমের দ্বারে খুশির বার্তা নিয়ে হাজির। ধর্ম- 

বর্ণ রাজা- প্রজা সবার মাঝে বিনিময় হচ্ছে ঈদের 

শুভেচ্ছা। অদ্বি লিটল ম্যাগটি বর্তমানে ফেসবুক 

স্ট্যাটাস হিসেবে আত্ম প্রকাশ করলেও অভিপ্রায় 

আছে ছাপা অক্ষরে প্রকাশের। বর্তমান সংখ্যাটি 

তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হলেও আগামী সংখ্যায় 

স্থান পাবে নবীন প্রবীন প্রতিশ্রুতিশীলদের কবিতা 

ও কবিতা বিষয়ক আলোচনা। সেই স্বাপ্নিকে শতত 

শুভেচ্ছা সবার প্রতি।


আজাদ বঙ্গবাসী - সম্পাদক,  অদ্বি |



♥♥♥

                           

মৃত্যুমুখী পাখির সমাবেশ || ইমরান মাহফুজ

মা, দিনশেষে আমায় আর ডেকো-না
রাতদুপুরে অশোকবনে পাখি নিয়েই থেকো

খোদার কসম আমি মানুষ হতে পারিনি
ফলত বাবা সেদিন লিখি দিলো প্রাপ্য সম্পদ 
জন্মই পেয়েছি ধর্ম
তাই কখনো হিন্দু বা খ্রীষ্টান
কিন্তু মানুষ না!

মা, তোমার অযোগ্য সন্তান 
আজ মৃত্যুমুখী পাখির সমাবেশে
নূপুর পায়ে শিশুর মতো
প্রার্থনা করছে- আনন্দ মৃত্যু!
তুমিও আঁচলের চাবি দিয়ে
খুলে দাও সিন্দুক- লাল হোক পৃথিবী!


                                 অদ্বি ১





অনিয়ম || কাজী মেহেদী হাসান


ওষ্ঠ ও ঊরুতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকি
শীতলক্ষ্যা আর ডেড সী’র অমিশ্রনীয় মোহনায়।  
যেহেতু ভালোবাসার পাশেই এক অসুখ শুয়ে থাকে
যেহেতু জীবন চিরকাল মৃত্যুতেই পৌঁছতে চায়; 
তবু ভয়—
ফুরিয়ে যাবার। 

গোপন তিলের পাশে এক অসামান্য দাগ রেখে আসি
যেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল; 
পাল ছিঁড়ে গ্যাছে এক দুঃসাহসী নৌকোর 
তবু ডুবছি না—
হারিয়ে যাবার ভয়। 
  
যেহেতু ভালোবাসার পাশেই এক অসুখ শুয়ে থাকে
যেহেতু প্রথা ভেঙে আমি সহমরণেই ফিরে যেতে চাইছি 
তবু ফিরবার প্রতিশ্রুতি চাই
প্রিয়, যত কাছে আসি
কেবল বুক জ্বলে যায়
        বুক জ্বলে যায়।  


                                অদ্বি ২


♥♥♥




শিরোনামহীন  ||  ডালিয়া চৌধুরী


শিরোনামহীন মলাটে মুড়ানো গল্পটা বলি
মৎস্যশূন্য পুকুরে অযাচিত মোহে 
ছিপ ফেলে বসে থাকা ছায়াটার কথা ।
ঘোলা অধ্যায়ে রচিত জলের পান্ডুলিপিতে
স্বচ্ছ প্রতিবিম্ব দেখতে চাওয়া নক্ষত্রটির
বারবার চোখ ঘষা অবনত অবয়বের কথা।

জরাগ্রস্ত  বাগানের পাপড়ি ঝরা গোলাপটি
সংযোজিত ঋতুতে কীটদষ্ট অাঙিনায়
দহনের সরব উপস্থিতিতে নিরবে পুড়ে ফুল।
একটা শিরোনামহীন সমুদ্রের গল্প বলি
রাতের পদ্মরাগে স্ববিরোধী সঙ্গীত
সবুজ উপড়ানো উপত্যাকায় লবন চাষে
বৃষ্টির মতো ঝরতে থাকা নোনতা কথা।
মৃত প্রবালের বিচ্ছিন্ন মেঘদ্বীপটিতে 
একাকিত্বের নির্নিমেষ অায়োজন
ভেতরকে ব্যবচ্ছেদ করে সুনীল ঢেউ।



শিরোনামহীন ভূখন্ডে ভস্মীভূত পর্বতের নিচে
বিদগ্ধ কারুকার্যে গ্লানির অনুচ্ছেদ 
একখন্ড জমির মতন অবচেতন অঞ্চলে 
তীব্র যন্ত্রনা ধারনের হৃদপিন্ডটা অবাঞ্চিত।

একটা শিরোনামহীন সম্পর্কের কথা বলি
দিগন্ত চুঁয়ে পড়া অসমাপ্ত গোধূলির গল্পটা।


                                

                                অদ্বি ৩



♥♥♥




পুরুষ তোমার পুরস্কার  ||  তিথি  আফরোজ     


যার নাভিমূলে এঁকেছি  ঠোঁটপালিশ-সুখকাতরতার

 বিনিময়ে সে পুরুষ বুক ভরা ঝড় পুরুস্কার দিয়েছে

নখের পথ বেয়ে জল জড়ানো চুলের ডগায় দিয়েছে

 দীঘল পাথার।একরাশ প্রেম...শূন্যপথ পূর্ণ করেই 

চর্বণ করলো শিশুর কলিজারক্ত আর মজ্জার স্বাদ 

গ্রহণকারী বাঘের সঙ্গম দেখেজেগে ওঠা ক্ষুধা মৃত্যুর

 মতো সহজ সাবলীল হয়অতঃপর নির্গত হয় লহিত

 কণিকাচাঁদের গায়ে লেপ্টে থাকা অমাবশ্যার 

দুঃখের মতো রাতের কাহিনিগুলো সিঁধেলচোর 

পাশা খেলেতৈরী হয় আগুন আর এ্যাস্ট্রের অভিধান

যুগ ধরে শিশ্নগুলোর চাটুকারীতায় মুখর থেকে 

নির্লজ্জ বেহারাপালকীর গান ভুলে এঁকে যায় 

হৃদয়বিলে কার্বন ডাইঅক্সাইডআর...বৃক্ষ জীবনের

 প্রেম নিয়ে লোমশ বুকজমিনে জিহ্বার পেলব 

শিহরণছড়ায় কুশুমবুচি।                                                        

   অনন্ত ক্ষুধা আর তন্দ্রার মাঝামাঝি বসে বালক 

জীবনের ফসিল গ্রহণের ফলে দিয়েছে প্রেমিক 

উচ্চতর দক্ষতার ধ্যানমগ্নতা... ফলে সুখদক্ষিনা 

দিচ্ছে  নারীজন্ম,  

দিবো পুর্নজন্মেও  সমগ্র ইন্দ্রিয়তে

যাবতীয় স্বাদ এনে দিবো কল্কের জরায়ু ছিঁড়ে। 


                                 অদ্বি ৪ 



♥♥♥


দূরত্ব  ||  দন্ত্যন ইসলাম


বাঁশফুল গন্ধে সন্তান জন্ম দেয় জোনাকিরা। তাদের 

ঝলমলে যৌথ নর্তক দেখেই চাঁদের আলো এতটা 

মৌন। চাঁদের সে উচ্ছ্বাস বালকেরা দেখে 

বাঁশবাগানের পর্দা সরিয়ে। আর মায়েরা চাঁদমামা 

চাঁদমামা বলে বাচ্চাদের শেখায় আত্মীয়তা। 

মাকে ভীষণ মনে পড়ছে। 

যে গ্রামে কোনো মা বৃক্ষ নেই, সেই গ্রাম অক্সিজেন 

শূন্যতায় ভোগে। অক্সিজেন গ্রহণ করেই বেঁচে আছে

 হাসপাতালগুলো। হাসপাতাল মানেই হলো শাদা 

ফুল আর রেডক্রিসেন্ট। মহামারিতে শাদা ফুলেরা 

আক্রান্ত হলে রেডক্রিসেন্ট কর্মীরা হন্তদন্ত চলে। 

আমি হন্তদন্ত হয়ে রোজ মাকে খুঁজি। মা বাড়িতে 

থাকেন। বাড়িটা এখন আমার থেকে অনেক দূরে। 

দূরে আছে বলেই বাড়িরা আমার জন্য কাঁদে। দূরত্ব 

হচ্ছে টমচম ব্রিজের সমান।  

মৃত মানুষ মাটিতে ঘুমায়। মাটি পবিত্র। দেবদেবীর 

পুতঃ আরাধনা করে মানুষ। মানুষ মরিয়া গেলে 

দেখি বাঁশের চালা দিয়ে তাহাদিগকে ঢাকিয়া রাখে।

আমিও একদিন ঢেকে যাবো।          


                                অদ্বি ৫           

                       

                    

♥♥♥


দায়মুক্তি  ||  দ্বিত্ব শুভ্রা



রক্ত

সাড়ে চার লিটার 
ফেলে দিলেই
সব ঋণ 
শোধ 
হয়ে যায়।

তোমার বাড়ি আমার বাড়ি
নিত্য যে চাওয়া চাওয়ি
শেষ হয়ে যায়।

একটা ব্লেড বড্ড সস্তা !

এত্ত সুযোগ !          

                      



                                অদ্বি ৬



♥♥♥


চীনামাছ  ঘাঘরাপ্রেম  ||  নকিব মুকশি

গোলপাতার গহনে ডুবে প্রান্তিক ভূমির তারালতায় আমি

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ডোবার ফার্ণ তুলি, নদের কাঁকড়াউঠে এসে

 চেপে ধরে রাখালের মোহনসুর!  গম্বুজের পরিধি শিরশির করে

 বেড়ে উঠলেই তুমি ঘাঘরার মতো জড়িয়ে ধর আমায়, উলুবনে

ঘেঁটুর খানকায়, সীবিচের নগ্নিকার নদঘ্রাণ ছুটে আসে হোগলার বেলাভূমে,

জেগে ওঠে গহনে 

 বেণুবিহন পাখাঘূর্ণনে বারবার ফিরে আসি,  কেন জানি আসতে হয়, তোমার

ঝুলবারান্দার ছায়ায়, টোপাপানার মতো ভাসতে হয় ট্রায়াঙ্গল নদে


চীনামাছ আমার খুব প্রিয় বলে তুমিও গায়ে মাখ চীনামাছের গন্ধ

নলখাগড়ায় থেকেও চিনাবাদাম খাও, ক্যারাটে শিখতে চাও

মালভূমি থেকে যে হাওয়া আসে তাতেও লেখা থাকে

এক অবিভক্ত সার্বভৌম পুষ্ট ডিমের কথা, তা তুমি জানো বলেই 

ভারতপাড়ে বসেও পুষ্ট  ডিম জুড়ে বল অহিংসার কথা


আর দিন দিন শুধু জেগেই উঠে আমার মাঝে, বুদ্বুদ-গহনে
চীনামাছ, রাখাল, শাদা টুপি, কুশমূলের মালা, সিঁদুর আর নলখাগড়া ঘাঘরাপ্রেম! 


                                


                                  অদ্বি ৭



♥♥♥


বসে আছি পথ চেয়ে || ফরিদা ফারহানা


বহুদিন ধরে জমে থাকা
আজন্ম তিয়াস মিটাতে চাই...
ছুয়ে যাও আমার বুক, নাক,
আর আমার চঞ্চলতা....
কোন উপলক্ষ লাগবে না 
চলে আসো।। 
অন্তহীন দেয়াল ভেঙে.... 
বাস্তব ডানায় ভর করে,
ভোরের আভায় ধুয়ে দাও 
মনের আঙিনা 
ষ্ট্রিট ল্যাম্পের আলোয় আর কতোকাল 

স্বপ্ন ধরে রাখবো 

কোন উপলক্ষ লাগবেনা 
চলে আসো।। 
আনন্দের ছল কিবা প্রেমের তুঙ্গ মুহূর্তে
চাই তোমার চশমা পরা চোখের 
অবাক ভালবাসা 
আর অভূত পূব' জীবনের নিশ্চয়তা 
তুমি চলে আস
কোন উপলক্ষ লাগবেনা।


                                অদ্বি ৮





♥♥♥


বিশ্বাস  || বিমলেশ রায়


বিশ্বাস শব্দটিকেই আজ সব থেকে বেশী ভয় হয়,
মাঝে মাঝে উপরে তাকিয়ে দেখি,সত্যি আকাশ আছে কি না?
নিচের দিকে তাকিয়ে খুঁজি,সত্যিই পায়ের নিচে মাটি আছে তো ?
কখনো কখনো নিজের হৃদপিন্ডের আওয়াজ শুনতে চেষ্টা করি, সে চলছে তো? 
একটু মেঘের আড়াল হলেই ভাবি,চাঁদতো একেবারে হারিয়ে গেলো না ?
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নিজের শরীরে চিমটি কাটি,সত্যি বেঁচে আছি তো ?
কারণ,এদের চেয়ে যাকে বেশী বিশ্বাস করতাম ,
সে বলেছিল কোনদিন ছেড়ে যাবে না ।
আজ সে নেই-
আর আমি প্রতারিত একজন ;
তাই বিশ্বাস শব্দটিকেই বড় অবিশ্বস্ত মনে হয় ।


                                অদ্বি ৯




♥♥♥


মনে পড়ে রুদ্র || মাহফুজ মুজাহিদ


(চিরজন্মা এক ক্ষণিকা রুদ্র সম্মরণে)


প্রিয় রুদ্র
তোকে দেখিনা কতোকাল হাসির ঝর্ণা ধারায়
আমার পকেটে এখন আর চকলেট থাকে না
একটি চেয়ার পরম মমতায় খালি নেই আর
দুষ্টুমির পর ক্লান্ত এক স্বচ্ছ চোখ দৃষ্টিবিভ্রম হয়ে ফেরে
তুই কতোদূর আছিস; ভালো আছিস তো তুই
এখন বুঝি মায়ের আঁচলে দুষ্টুমি শেষে
লজ্জায় মুখ লুকোতে সাধ জাগে না আর
প্রিয় প্রাঙ্গণ, লাইব্রেরির গুমোট হাওয়া আজো কাঁদে
আমি সেই একদিনই কেঁদেছিলাম আর কাঁদিনি
তবে একটি মা এখনো কাঁদে; এখনো মনে পড়ে
প্রতিটি উৎসবের কালে দিনে রাতে সময়ে অসময়ে
তোর কি খুব তাড়া ছিলো রুদ্র;
সময় এতোটাই দ্রুত ফুরিয়ে যায় বুঝি
আমরাও আসছি রুদ্র; তুই ছাড়া পৃথিবী নিরানন্দ মনে হয়
আবার উচ্ছাস দেখবো, দুষ্টুমিতে মাখবো সময়...


                                অদ্বি  ১০     




♥♥♥


মৃত্যুর আগে ৷৷ রিকেল
সমুদ্র স্রোতের আগে আমরা ভ্রমণ করে আসবো বুনো পাহাড়
আমরা ভালবাসবো আমাদের ব্যর্থতা
আমরা ভালবাসবো আমাদের বিচ্ছেদ
আমরা ঝরাবো আমাদের শেষ অশ্রু;

আমরা কখনও সূর্যোদয় দেখিনি বলে
একদিন দ্যাখবো ভোরের সাগর
একদিন কবির মৃত্যু একদিন বিষাদ পাঁজর
একদিন কুড়োবো কবির ভেঙে ফেলা এপিটাফের টুকরো

ঝুলন্ত সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে দ্যাখবো মৃত্যুর বিস্ময় শিল্প
আমাদের চোখ আমাদের সৌন্দর্য— আমরা দেখি মৃত্যুর চারুতা

আমরা গাইব জীবনের শোকসঙ্গীত
সঞ্চিত মেঘেরডাক

পাথরে অঙ্কিত রক্তাক্ত প্রতীক— 
এক বিকেলের রোদে  আঁকা হয়েছিল আমাদের রক্তে

                                অদ্বি  ১১   




♥♥♥



প্রিয় প্রতারক-১৩ || রুদ্র নীলিম 



তোর চকলেট ফ্লেভার লিপস্টিক 
আর আমার দুঃস্বপ্ন 
ভাঙা আয়নার ছড়ানো কাঁচে 
অনেক ভীতি খ্যামটা নাচে

আমার ডায়েরি,রাতের ফুটনোট
তোর দেয়া ওভারকোট  
সকালের কুয়াশা    
সবাই ঘুমায় 


আমিও ঘুমাই মাছের চোখে  






                                অদ্বি  ১২                 



♥♥♥


বৃদ্ধ চুলের আদিতেও মেলেনি || রুদ্র রহমান


তোমার সর্পিল মনে একটিবার হাঁটতে চাই ধরিত্রী 
হামাগুড়ি দিতে দিতে আমি ক্লান্ত- 
হিমোগ্লোবিন শূন্য আমার চোখের চাহিদার লিস্ট 
ব্যর্থতার ট্রপিক্যাল অঞ্চলে পদচারনা আজ, 
নিজেকে বড়ই অপরাধী ঠেকে 

ভালবাসার দ্বিত্ব ব্যন্জনা আর চাইনা! 
ভালোবাসা বলতে কিছু আবিষ্কার হয়নি -
সব প্রতারণা, ছলচাতুরীর অশরীরী আত্মা 
যেদিকেই চোখ পড়ে সাদৃশ্য রোগে জর্জরিত সবাই 
অসুখটি পৃথিবীর দক্ষিণ শার্টে অবস্থান নিয়েছে 
প্রেমিকের বুকের ফ্রেশ পেনড্রাইভে এর সূচনা ...
কলঙ্কিত পদধূলিতে অক্ষাংশে জাগিয়ে তোলে সতর্ক সংকেত! 
ত্রিমাত্রিক গাণিতিক মোড়ে বৃদ্ধি পায় অ 'চেতনা 
আধুলিতে প্রেম বেঁচে পেট খালি করে প্রেমিকা, 
পৃথিবীর নাট্য কোলাহলে দর্শক সেজে বিরক্ত আমি! 
হাত তালি দেবার মত সামর্থ্য নেইমানিব্যাগে 
হৃদয়ে জমানো দুঃখ গুলিকে হালকা সমীকরণে গোছাতে চাই, 

ব্যর্থ মরুতে পানি সেচে হয় কিপ্রাণের আস্বাদন? 
হয়নি সে পথের বলয়ে নিত্য পদার্পন- 
আতুঁড়ঘরে শয়তানের চিমটিটা ভুলে গেছি ...
তীক্ষ্ণ ব্রেন সার্কিটেও সেটিররেশ রিক্ত, 
কিন্তু, যে দহনে জ্বলছে পৃথিবীরকীটগুলির আয়ু 
স্বস্তি নিতে তিন বার গুনে বসি! 
এভাবে আর কতগুলি জীর্ণ দিনের সূর্য পাড়ি দিবো? 
প্রশ্ন করেই মুখে কুলুপ এঁটেছি আলতো নয়নে, 
বৃদ্ধ চুলের আদিতেও এর সমাধান মেলে 'নি!  


                         


                          অদ্বি  ১৩       





♥♥♥


নেশা || শাহানা সিরাজী


সারারাত জেগে জেগে ইনবক্স ভরিয়ে দেবো
এর ওর তার তবু তোর নয়

কেউ রাজনীতির কথা বলবে
কেউ অর্থনীতি
কাব্য নিয়েও বলতে পারে কেউ
আমি ওখানে যাবো না...

আমি রাজনীতিবিদ নই
অর্থনীতিও না
কবিতা লিখি বলে কবিও না
মোহন পাগলা বলে আমি নাকি সাক্ষাৎ  দেবী।
আবার শুধরে বলে
তুমি প্রেমের দেবী!

প্রেম দিতে দিতে ঝিঁঝিঁর মতো স্তব্ধ হয়ে যাবো
প্রেম দিতে দিতে শারদীয় মেঘ হবো
প্রেম দিতে দিতে আগামি বছর বইমেলার জন্য 

বায়না করবো
প্রেম দিতে দিতে জল স্থল অন্তরীক্ষে ঘাস বিছানা 

পাতবো


সবুজবাতি হবে নিয়ন 
দিনের আলো হবে পূর্ণিমার মতো
তাপে আলোতে সেদ্ধ হতে হতে অগ্নিগিরির 

উদগীরণ হবে
তবু তোকে দেবো না তার 
এক বিন্দু এক বিন্দু এক বিন্দু....


                       


                           অদ্বি  ১৪     



♥♥♥


অনন্তব্রত || শিবলী সাহেদ



নখাঘাতে আহত সহস্র সৈনিক দাঁড়িয়ে আছে

 তোমার ওই জারুল গাছটার নীচে। প্রিয় বোন পারুল— 

অথচ এই ঘরের ভেতর তুমি কার জন্য এত জমিয়েছ কান্না, 

বড় যত্নে লালিত! কার জন্য এই অনন্তব্রত...
বলছিলাম, কিছুটা নমনীয় হ'লে আরো ভালো হতো। 

নাকি নমনীয়তার ভীষণ চূড়ায় দাঁড়িয়েই তুমি ভাবছ— 

এই যে অগণিত সৈনিকেরা, গুঁড়ো ধোঁয়াশায় এক হরিণ-

শাবক খুঁজতে গিয়ে তারাও একদিন কুয়াশা হবে?



                                অদ্বি ১৫




♥♥♥


ছেলেগুলো সেলোয়ারের ফসকা গীট  || শিমুল জাবালি



তোমার গন্ধগুলো একপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা 

অনেকটা স্কুলবার্তার মতো লাগে।

 মাটির ফিসফিস কোলে তুলে নিলে তুমি কানাবাজি খেলো। 

ছেলেগুলো সেলোয়ারের ফসকা গীট।

সন্ধ্যা বিক্রির বাজারে আধার কার্ড বিলি করার সময় 

ঘুঙুরের আত্মহত্যার খবর কবিরা জানে।

 শেষ মাথায় গন্ধের দোকানে বাসমতি চাল ফুরিয়ে যাবার আগে 

কবির কবিতা লেখা শেষ হয়।



                              অদ্বি ১৬



♥♥♥


কোঁচবক  || সাজ্জাদ সাইফ

আমিও জানি না পাশা খেলা, তবু তার ক্রীড়নক হয়ে 

উল্টে পাল্টে যায় কি করে ভূবনজলধি মনের? 

মন কি তবে ভ্রান্তির আকরিক? সালফার ভেজানো ধোঁয়া?


দেরি হয়ে যায়, যে কোনও স্টেশনে পৌঁছাতে আমার,

যে কোনও পথের বাঁকে অন্ধত্ব জড়াতে থাকে চোখে৷



খোলা মাঠ বনের দুপাশে শুয়ে,
লোনা পানি নদীর বিভুতি ছুঁয়ে,
হেলান দিয়েছে মনে-
পৌঁছাতে বিলম্ব চিরটাকাল, যে কোনও সুন্দরের কাছে, 

আমাকে ভারাতুর করে, সকরুণ করে আর একটি 

সরল স্বপ্নের কাছে নিজেকে খুলতে থাকি, নিজেকে 

তুলতে থাকি অপারসৌধের দিকে, ধীরে৷


ঘুম হয়, গ্লানি হয়, দেখা হয় অনিত্যপত্রালি যত, 

নিজের বিষাদ শেষে নিজের কক্ষপথে পুরোপুরি 

ঘুরে আসে পৃথিবী, তাকে ছায়া দিতে দিতে আসে 

প্রাচ্যধুসর মেঘ, অম্লান কোঁচবক শিমুদের পাঁচিলে 

বসে সূর্যাস্তকে দেয় স্থিরতা কিছু, দেয় কারুকার্য, দেয় 

ব্রক্ষ্মসাঁকোর পারাপার প্রস্তাব!




                                অদ্বি ১৭       



♥♥♥


ইরাময়ী রাতের গান  ||  সাম্য শাহ্‌



খুলে ফেলে রক্ষিতো কামিজের খিল- উছলে কি 

দিবো প্রেম? জোনাকির অতল রাতে; গাবের ফুলের 

মতো ফুটে আছে নগ্নদেহ। কামের প্রতাপে কেঁপে 

উঠা ফর্সার ভাঁজে যখন-  জ্বলজ্বলে জ্বলে উঠে 

মায়ার চাবুক; মুখোমুখি দাঁড়িয়ে- আমি আর ঘোর 

লাগা অন্ধকার! 

এ ঘর- এই সংসার; প্রিয়তম হালাল ফুলের মতো 

বউ। চিহ্ন যার লেগে আছে শার্টের কলারে অথবা 

জান্নাতি রাতের তরতরে ঘামে। এক মুঠি ভেজা দরদ 

সম্বল করে- সঙ্গমের নিকাশ নয়; প্রেমের অহরহ 

চুম্বনে নিঃশ্বাসে বাড়িয়ে কামের দাগ- উঠতি 

যৌবনের প্রবল পিপাসায় রাতভর টেনে যাবো 

উজান দেহের দাড় !



                                 অদ্বি ১৮





♥♥♥



প্রেমের পঙ্খী ||  সারাজাত সৌম 



উড়ালিয়া প্রেমের পঙ্খী
আমারে বাতাসে ভাসাও
যতো দূরে তুমি
তোমার নৌকা বাও
বসন্ত বসনে মক্ষী 
কার গান গাও
উড়ালিয়া প্রেমের পঙ্খী
আমারে বাতাসে ভাসাও....



                                অদ্বি ১৯                   



♥♥♥

           
মৃত্তিকা মায়া || হিরণ্য হারুন

           
কল্পছায়ায় নগ্ন জ্যোৎস্নায় হেঁটে হেঁটে
তুমি আসো আর নাইবা আসো
আমি আছি স্নিগ্ধ বৃক্ষগুলির পাশে,মৃত্তিকার গন্ধে
ভেজা আকাশের অশ্রু হাতে.....
.
         
উন্মাদ সুরে সুরে, শুক আর সারীর মিলনে
বেঁচে আছি নিম্মজিত শৈবালের এক অতল আধারে
তুমি আসো আর নাইবা থাকো
আমি ফিরে যাই ফিরে আসি আবার—
অরণ্যনদীর কাছে মৃত্তিকার মায়ায় উচ্ছ্বসিত,
সত্য ও অলীক স্তব্ধ নিরবতায়— তরু-পল্লবী রন্ধে রন্ধে
এবং ছুটে যাই, উদগ্রীব, উন্মাদ— আলোর শীতলতায়..


                                 অদ্বি  ২০  










                          




                          

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।