আবারো অনুরণন
- অনির্বাণ মিত্র চৌধুরী ১৯-০৪-২০২৪

[বিচ্ছিন্ন সময়ের বিচ্ছিন্ন কিছু অনুভূতি জমিয়ে রাখার ক্ষুদ্র প্রয়াসমাত্র। শুরুটা করেছিলাম "অনুরণন" দিয়ে। এরপর "আরো অনুরণন"। তারপরে "আরো একটু অনুরণন"। এবার "আবারো অনুরণন"]


১ 
ইচ্ছে করে একছুটে পৌঁছে যাই 
তোর মনের বাড়ি
হোঁচট খেয়ে থমকে দাঁড়াই;— 
তোর সাথে যে আড়ি! 

২ 
তোমার কাজল চোখে চোখ পড়েছে যেই
মনপাখিটা হলো ফেরার, মনের মাঝে নেই। 

৩ 
বদলে গেছে পুরনো অভ্যেস,
বদলে গেছো তুমিও
জোর করে আর রাত জেগো না, 
তন্দ্রা পেলেই ঘুমিও।
ভুলতে গিয়ে অতীত স্মৃতি
ভাবনা গাড়ি থামিও
সব ছিলো না সস্তা নাটক,
কতক ছিলো দামীও। 

৪ 
এবং আরো কিছু বিকেল গড়িয়ে গেলো নিজস্ব ঢঙে,
এবং আরো কিছু স্মৃতি ধূসর হলো বিষণ্ণতার রঙে।
এবং আরো কিছু ব্যথা নিকষ হলো মনের একান্তে 
এবং এমন অনেক কথা তুমি তাও পারো নি জানতে। 

৫ 
রাতের তারা দেয় পাহারা
ছন্নছাড়া স্বপ্ন তোর
কল্প-ভূমে, উষ্ণ ওমে 
আধেক ঘুমে নামলো ভোর। 

৬ 
আজ প্রভাতে প্রার্থনাতে 
নাম জপেছি তোর 
ক্ষণিক দেখায়, চোখের তারায় 
লাগিয়ে দিলি ঘোর। 

৭ 
তুমিহীনা পানসে সময়, 
জমে না খুনসুটি 
মনের ঘরে মঙ্গা চলে, 
বিরহের লুটোপুটি। 

৮ 
তোমার মনের ঈশান কোণে 
মেঘ জমেছে কালো 
বৃষ্টিভেজা চোখের পাতায় 
নোনাজল টলোমলো। 
দেখে না কেউ সেই কালো মেঘ 
কতটা নিকষ, নিগূঢ় 
বুঝে না কেউ তো হৃদয় আবেগ— 
মন খারাপের দুপুর। 

৯ 
তুমি আসবে বলে নীল দিগন্তে 
সদা জাগরূক আঁখি 
তুমি আসবে বলে মনের দুয়ার 
আজও ভেজিয়ে রাখি। 

১০ 
আমার যাপিত জীবনের কিছুতেই তো তুমি নাই
তবুও চোখ বুজলেই কেন তোমার আভাস পাই?

১১ 
অধরা স্বপ্নের পিছে ছুটে বেড়াই না আর
বুঝে গেছি ও-তে নেই আমার অধিকার। 

১২ 
লাশ হয়ে পড়ে আছি
তোর মনের মর্গে
ভুল-ত্রুটির পোস্টমর্টেম 
যত ইচ্ছা কর গে। 

১৩ 
চাইলেই ছুঁয়ে দিতে পারতাম 
তোমার পবিত্র হৃদয়
চিন্তারা এতোটাই অশুচি যে
হাত বাড়াতেও ভয় হয়।

১৪ 
ক্ষীয়মাণ সময় রেখা; 
কিছু স্মৃতি অম্লান
হিম-বুকে জমে থাকা 
ঠুনকো অভিমান।

১৫ 
আর একটুখানি বসো, 
কিছু সময় কাটুক নীরবে
এলিয়ে রাখো খোঁপা —
হৃদয় ভরুক সৌরভে।

১৬ 
তুমি আমার আকাশ হবা? 
আমি হবো শঙ্খচিল। 
তুমি আমার কাব্য হবা? 
আমি হবো অন্ত্যমিল। 
তুমি আমার নাটাই হবা? 
আমি হবো লাল ঘুড়ি। 
তুমি আমার সত্যি হবা? 
আমি কল্পনার নীলগিরি। 

১৭ 
না হয় কবিতা লেখা, 
না হয় বাঁধা গান
না হয় ছুঁয়ে দেখা
তোমার আসমান।

১৮ 
জয়-পরাজয় হিসেব ভুলে 
তোর সাথে যে সন্ধি 
এক পশলা ঝগড়া শেষে 
ভালোবাসায় বন্দি। 

১৯ 
যাচ্ছো চলে দূর
হৃদয় ভেঙে চুর 
তুমি বিনে মন গহীনে 
বাজে করুণ সুর। 

২০ 
হৃদয় উপকূলে ঘূর্ণি হয়ে এসেছিলে তুমি
উত্তাল তান্ডবে আজ প্লাবিত মন-ভূমি। 

২১
তোমার মনের মেঘ ছুঁতে চাইলাম
মন বাড়াতেই, 
ঝড়ো দমকা হাওয়ায় সিক্ত হলাম।

২২
কালো আঁধারের বুকে হেঁটে চলেছি একা
ক্রমশ গাঢ় আঁধারে ঢাকছে চারপাশ
চোখে-মুখে-বুকে যেন চরম নাভিশ্বাস
জানিনা কখনো পাবো কিনা আলোর রেখা।

২৩
চোখ দু'টি যেন তার পদ্ম-পুকুর
ছিপ ফেলে বসে আছি আলসে দুপুর
রিনিঝিনি বাজে তার রূপালি নূপুর
হৃদয়ে ঢেউ জাগায় অনুরাগের সুর।

২৪
তুমি আমার গরিবিয়ানার রাজ্যে চেয়েছিলে সম্রাজ্ঞী হতে
অমাবস্যার রঙ চাইনি ছড়াতে
তোমার স্বপ্নিল পথে পথে।

২৫
জেনে রেখো মনের সব মেঘ কেটে যাবে একদিন, 
বাতাসে জুড়ে থাকবে না দুর্যোগের পূর্বাভাষ
মিটিমিটি তারারা তোমার জন্য জ্বালাবে প্রদীপ
তবু জোছনায় ভাসবে না আমার অমাবস্যার আকাশ।

২৬
বোহেমিয়ান সময়,
ভেসে যাচ্ছে সব মহাকালের স্রোতে
দূরত্ব বাড়ছে, 
তুমি উজানে ভাসছো, আর আমি ভাটিতে।
বাউণ্ডুলে জীবন, 
কোন ঠিকানায় আস্তানা গাড়তে চায় না
ভাটির টানে —
ভেসে চলে সাগরের সন্ধানে; ভবিতব্য জানে না।

২৭
প্রিয়তা,
এসো প্রেমের গঙ্গাজল গায়ে ছিটিয়ে
পবিত্র হই।

২৮
তোমার মনের অলিগলি আমি চিনি না,
জানি না কেমন তোমার দুনিয়া
কেবল জানি— তুমিই আমার ঠিকানা,
তুমিই আমার মন-মুনিয়া।

২৯
আবার যেদিন দেখা হবে, 
সরিয়ে নেবো না চোখ
যদি অতল ও দু'চোখের মায়ায় ডুবে মরি— 
তবে তাই হোক। 

৩০
হাতে হাত রেখে বহুদূর হারাতে চায়
কল্পনাবিলাসী মন
কল্পনার আলপনা ছেড়ে ধূসর বাস্তবতায়
ফিরে আসি পরক্ষণ।

৩১
কেন বারবার ভুল প্রেমে ডুবে যায় অবুঝ মন
কেন বারবার ডুবে গিয়েও, শেখা হয়না সন্তরণ। 

৩২
জীবন যায় নি থেমে; 
যেমনটি ছিলো আগে, তেমনি আছে
শুধু তুমি নেই, তাই— 
বড্ড একলা লাগে নিজের কাছে। 

৩৩
বনলতা তুমি হতেই পারো,
আমি তো নই জীবনানন্দ
রূপের মোহে বিভোর হয়ে
লিখতে পারি না কাব্য-ছন্দ।

৩৪
আমার সবটা না-থাকা জুড়ে 
কেবল তুমিই মিশে আছো 
মনের ইলশেগুঁড়ির রোদ্দুরে 
তুমি পেখম তুলে নাচো। 

৩৫
নষ্ট মনে কষ্ট বুনে 
যাচ্ছে কেটে দিন
নীল বেদনে সন্তরণে
আশার আলো ক্ষীণ। 

৩৬
কী নিঃসীম একাকীত্ব নিয়ে অনাহুতের মতো বেঁচে আছি 
তুমি আছো হৃদমহলায়; তবুও যে নেই স্পর্শের কাছাকাছি।

৩৭
একই শহরে রয়েছি দু'জন, 
অথচ যেন ভিন্ন কোন গ্রহে 
অন্তর জুড়ে ব্যথার আস্ফালন, 
সংক্ষুব্ধ মন বিষাদিত দ্রোহে।

৩৮
আঁচল পেতে দাও মিতুয়া,
অনেকদিন ঘুমাই না।

৩৯
বিজয়ালক্ষ্মী তুমি, তুমিই হে ঈশ্বরী
স্বর্গ থেকে উড়ে আসা এক ডানকাটা পরী।

৪০
অভিমান কোরো হে সজনী
মান ভাঙাতে কেটে যাক রজনী... 

৪১
একবার ছুঁয়ে দিলেই মহাকাব্য লেখা হয়ে যেতো;
আর বইমেলার নায়িকা হতে তুমি।

৪২
কবিতায় এসো তুমি,
কবিতায় ভালোবেসো
কবিতায় ভেসো তুমি
কবিতায় মৃদু হেসো।

৪৩
সেই ক'বে থেকে জানলা খুলে বসে আছি, 
একটিবার তোমার জানলা খুলে দেখো।
দু'চোখ জোড়া তৃষ্ণা নিয়ে তাকিয়ে আছি 
তোমার অতল চোখে; তুমি স্বপ্ন আঁকো।

৪৪ 
বসন্ত এসে ফিরে যায় আমার দুয়ারে
অনন্ত থাকি প্রতিক্ষায় বিরহী খোঁয়াড়ে।

৪৫ 
কঙ্কাবতী,
লক্ষ্মণ-রেখা এঁকে দিলাম 
তোর বুকে
কলঙ্ক আর ছোঁবে না তোকে।

৪৬ 
বিদায় বোলো না, 
যেতে চাও? নির্দ্বিধায় যাও, 
আবার দেখা হবে।
তুমি চাও বা না চাও — 
আমার স্বপ্নরা তোমায় ছোঁবে।

৪৭ 
চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে বিষাদ
হৃদয়ের কোটরে কষ্ট-নিনাদ। 

৪৮
স্বপ্ন ঘুড়ি মন,
সামলে রাখো নাটাই
যাযাবরী জীবন
ভাসে মেঘের আলপনায়।

৪৯ 
আবার ঘুরে দাঁড়াও, 
দু'চোখে স্বপ্ন মাখাও 
মনের গহিন থেকে 
কষ্ট স্মৃতি তাড়াও। 

৫০ 
মাঝেমাঝে মনের কথারা ফুরোয়, 
ভাবনারা হয় এলোমেলো
মাঝেমাঝে স্মৃতির ঝাপটা ধুলোয়
দু'চোখ ভেজায়– ছলোছলো।

৫১ 
বেসুরা মনে কোন সে ক্ষণে
বাজিয়ে গেলে বেণু 
হৃদয় ঝিলে ছড়িয়ে দিলে
আপন রাগের রেণু। 

৫২ 
তুই যে আমার মন উঠানে
বিকেল বেলার চড়ুই
তোর চোখেতে ভুবন আঁকি, 
তুই যে স্বপ্ন বাড়ুই। 

৫৩ 
ঝুঁকতে ঝুঁকতে থুতনিটা 
বুকের উপর থামে
এক একটা দীর্ঘশ্বাস–
হারিয়ে যাওয়া দামে।

৫৪ 
তুমি আমায় ভালোবাসো,
আমি বাসি তোমায় মন্দ
তোমার স্পর্শে পরম মায়া,
আমার মনে পোড়া গন্ধ।

৫৫ 
যতোই দূরে সরিয়ে রাখি, 
ফিরে আসো অনুভবে
সংগোপনে আশায় থাকি–
ফের তুমি আসবে কবে?

৫৬
পুড়ে যাচ্ছে মন,
তুই বিহনে মন উঠোনে
দগ্ধ সমীরণ।

৫৭
বসন্তের ঋণ শোধ হবে একদিন
বৈশাখী এক ঝড়ে উড়ে যাবে সব নেশা
শ্রাবণের প্লাবনে ভেসে হবে লীন
কবেকার শারদীয় আহ্লাদী ভালোবাসা।

৫৮
ইচ্ছেরা ডানা মেলে
যেতে চায় নীলিমায়
স্বপ্নরা তোকে পেলে
ফিরে আসে অবেলায়।

৫৯
তোর আকাশে মেঘ জমলে
আমার আকাশে বৃষ্টি
মন খারাপের দীর্ঘশ্বাসে
আমার ঝাপসা দৃষ্টি।

৬০
আসবো, আসবো করেও তুমি এলে না
বুকের ভেতর মৌন শহর;
মাতিয়ে তবু গেলে না।
বিষণ্ণতায় খাচ্ছি খাবি, ঠাঁই মেলে না
নিগূঢ় মায়ায় প্রেমের ডিঙায়
সঙ্গী করে নিলে না।

৬১
কথারাও ফুরিয়ে যায়,
সময় থমকে দাঁড়ায়
বোবাকান্নার আস্ফালনে
দম ফুরোতে চায়!

৬২
নৈমিত্তিক হতাশায়
আহ্লাদী প্রেম উবে যায়...

৬৩
তোমাকে —
তোমার মতো করে,
ভালোবাসতে না পারার
আক্ষেপ আমার আজন্ম!

৬৪
খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ঘা করে ফ্যালো;
ঘা বুকে নিয়ে ক্যান্সার ছড়াবো
তোমার সৌষ্ঠব শরীরে।

৬৫
এমনও তো রাত হয়,
তুমি, আমি— কেউ কারো নয়!

৬৬
অনেক বছর পরে
যদি সামনে এসে দাঁড়াও
চিনে নেবো ঠিক-ই, তুমি দেখো
শুধু ঠোঁটের কোণে লাজুক ঢঙে
হাসির ঝিলিক এঁকো।

(সমাপ্ত)

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।