মৃত্যুশোক
- মুক্ত মন ২৯-০৩-২০২৪

একটি মৃত্যু ঘটে গেল ডিসেম্বরের হাড় কাঁপানো ভোরে ,
হাসপাতালের গুমোট হাহাকারের সাথে আরও একটা
হায়! হায়! রব উঠেছিল রাস্তায় - মহরমের শোক মিছিলে ।
এধারে কারা যেন মাতম করছিল, ''আহা কি পুন্যি !
এমন দিনে মরণ, নিশ্চিত জান্নাত !"
কয়েকশ' গোঙ্গানির মধ্যে অলক্ষেই রয়ে গেল
আরো দুটি লাশ - জীবন্ত ।
একটি শোকস্তব্ধ, অন্যটি ভবিষ্যতের ভারে নুব্জ, ক্লান্ত, ভীত ।

কেউ জানল না, বৌটি কখন ভেঙ্গে ফেলল হাতের পলা,
শুধু না-খোলা সোনার বালা-জোড়ার দিকেই ছোঁক ছোঁক
অজস্র চোখ । হাজার লোকের দমবন্ধ কান্নার ভিড়ে,
কেউ শুনল না, এলোকেশির 'একটু জল-জল !' আর্তি ।

আর মেয়েটি তখন ভিড়ের হাতে মা-কে ,
টুপিওয়ালা দের হাতে বাপের লাশকে সঁপে দিয়ে,
সন্তর্পনে আগলাচ্ছিল- মা'র সোনার বালা, বাপের ডেথ-সার্টিফিকেট
আর নিজের শরীর । চোখে আদিগন্ত শুন্যতা,
বুকে কয়েকশ' গুন ধুকপুক -
কেউ জানল না, হৃৎস্পন্দন নয়, বুকের পাঁজরে
আছড়াচ্ছিল গ্যালন গ্যালন রক্ত ।

''লা-ইলাহা-ইলল্লাহ''-র সাথে গর্তে চাপা পড়ল
বাষট্টি বছরের এক বৃদ্ধ শাসক -তার তামাম শাসন সহ ।
টুপিওয়ালা দু'জন চুপিচুপি পিক ফেলল -
জানাজা পড়ার আগে - অটুট ভক্তি !

আর এদিকে তখন পুলিশ কুকুরের মত
কারা যেন শুঁকছিল লোহার বাক্স, কাঠের আলমারি,
চামড়ার ব্যাগ, মায় কড়িবরগার জীর্ন কুঠুরি ।
মাকে খুঁজতে গিয়ে ভুলক্রমে মেয়েটি
সামনে এসে পড়লেই বাড়ছিল কান্নার রোল ।
এগিয়ে আসা লোমশ স্বান্তনার হাত গুলো
গায়ের চামড়া সরিয়েও খুঁজবে বুঝি,
কর্তার ফেলে যাওয়া কোনো গুপ্ত ধন !

কোণঠাসা দিশেহারা মা-মেয়ে
প্রানপণে খুঁজছিল একটি বাড়ানো হাত -
ওদের চোখ হয়েছিল আস্ত মরুভুমি,
বুকে জমেছিল গোটা একটা হিমালয় ।
'পাষানী ! কান্দে না একটুও !'- চেঁচিয়ে উঠেছিল
শোক গ্রস্তরা - ওদের ডানহাত সামলাচ্ছিল ব্যাগ ,
বাম হাত পকেটে , নজর ইতিউতি - আর
চোখে অনবরত জলধারা -- মৃত্যুশোক ।।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

kobisabujahmed
১০-০২-২০১৫ ১৭:১৬ মিঃ

darun