ধন্যবাদ মা
- ফয়জুল মহী ২৮-০৩-২০২৪

(৩১ তম পর্ব)---------------ধন্যবাদ মা-------------- সিস্টার সিস্টার একটু শুনুন।চল চল এই বাচ্চাটা এখন আবারও আসছে তার সাথে কথা বলতে দেখলে দিদির নেকনজর সরে যাবে। মনে হয় তাদের কাজ শেষ চলে যাওয়ার জন্যই বাহিরে এসে দাড়িয়েছে।কিন্তু আমার সাথে কথা বলতে অনিহা কেন করছে বুঝতে পারছি না।সিস্টার স্বাধীনের মা এসেছে কিনা বলতে পারেন। না আমি জানি না। দয়া করেন বলুন,কেন এমন করছেন।যা বাবা তুই রিতা ম্যাড়ামের সাথে কথা বল। সিস্টার হাঁটতে হাঁটতে বিরক্ত হয়ে কথা বলায় আমার বুঝতে কষ্ট হয় না যে কিছু লুকাচ্ছে আমার থেকে।যে করে হোক রিতা ম্যাড়ামের সাথে দেখা করতেই হবে তাই চোখ হাসপাতালের দরজায়।দুই দারোয়ান দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলতেছে এখনি সুযোগ ভিতরে যাওয়ার।সন্ধ্যার আবছা আলো-আঁধারে আমাকে লুকোচুরি খেলতে হচ্ছে স্বাধীনের জন্য।মনে হয় যেন এটাই আমার স্বাধীনতা,কি যেন স্বাধীনতার চেতনা চেতনা করে বড় লোকেরা আমি ওই সব ধুঁয়ে কি পানি পান করবো যেখানে প্রতিটি স্থিতিতে লড়াই আর লড়াই রাস্তা হতে ঘরে ফিরে যাওয়ার। ইয়া রব এই দাঁড়া,এই দাঁড়া বলছি। আমি কোন দিকে দেখি না,কোন কথাও শুনি না।আমাকে দৌঁড়াতে দেখে লোকজন পথ ছেড়ে দেয়।আমি সোজা রিতা ম্যাড়ামের অফিসে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ফেলি। এই তুই কেন এখানে। রিতা ম্যাড়াম স্বাধীন এখনো হাসপাতালে কেন। কোন স্বাধীন।যে বাচ্চা সকালে আমি আপনাকে দিয়েছি। কি হয়েছে এখন। আপনি বলেছেন তার মাকে ফেরত দিবেন কিন্তু এখনো কেন দিলেন না,এখনতো রাতও হয়ে গিয়েছে। আপনারা কোথায় মরছেন। এখানেই তো ম্যাম। আপনি ঠিকভাবে কাজ করলে এই বাচ্চা কি করে ভিতরে আসে। চল চল বাহির চল(দুই হাতে গলা টিপে ধরে দারোয়ান)।ছাড় আমাকে শালা,আমি যাব না (কান্নারত এবং উচ্চু স্বরে)প্রথম বলেছেন যে স্বাধীনকে তার মায়ের কোলে তুলে দিবেন আর এখনও তার মাকে ডাকা হয়নি। (দারোয়ান থাপ্পড় মারে) যা এখান থেকে। ছাড় শালা মেরে ফেলবো সবাইকে ( টেবিল হতে পাথর তুলে) ওহ মাই গড়,লুক এট দিস বয়।আমি এক্ষুনি পুলিশকে ফোন করছি। কর পুলিশকে ফোন,আমি ভয় পাই না,আমি পুলিশকে বলবো তোরাই বাচ্চা চোর তোদের সাহায্য নিয়ে পেট ছিড়ে বাচ্চা প্রান্ত করে কিন্তু পালনের দায়িত্ব না নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে।তোরা সব মিথ্যাবাদী,তোরা সব হারামি,তোরা সব ধান্ধাবাজ।(চলবে) (৩২ তম পর্ব)----------------ধন্যবাদ মা---------- টেবিলে রাখা পাথর উঠাতেই পাথরের নিচে কাগজ পাখার হাওয়ায় এদিক সেদিক উঠতে শুরু করে,মনে হয় যেন এক একটি মানবতা উঠছে হাওয়ায়।আমার চিৎকারে রিতা ম্যাম ও দারোয়ান চুপ হয়ে একে অপরের মুখ দেখতে থাকে,রাগ ও হতাশায় আমার চক্ষু হতে নীর ঝরায় তাদের চাহনি কোঁকড়া দেখায়। দ্রুত মনে পড়ে ফাদারের কথা,হাসপাতাল হতে আবার ধাবন ফাদারের বাসায়।একটু দুরে ফাদারের বাসা গেলেই পাওয়া যাবে আবার বিরামহীন দৌড়,যেন আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম মুখ হতেও লালা বাহির হয় কিন্তু থামলে চলবে না,হয়ত রাতে তারা স্বাধীনকে উধাও করে ফেলতে পারে তাই এখনি তাকে ফেরত নিতে হবে।(ফাদারের বাসার সামনে গিয়ে মাটিতে পড়ে যাই একটু দম নিয়ে উঠে দাড়াই) ফাদার,ফাদার ফাদার(দরজায় হাত দিয়ে আঘাত করে) ডাকতে থাকি।কিছুক্ষন পর ফাদার দরজা খোলে আমি দুই হাত জোড় করে কৃপা ভিক্ষায় মাথা নত সে হতভম্ব,আমাকে দেখেই বুকে জড়িয়ে ধরে আমার নিঃশ্বাস তাঁর বুকময়।চোখের পানি ও ঘামে আমার ভেজা শার্টে তাঁর গাউনও ভিজে যায় তারপরও ফাদার জড়িয়ে রাখে আমার চোখ অর্ণব হয়ে যায় যেখানে মা বাবা নামধারী নর-নারী অগম হয়। এ নাও তোমার স্বাধীন। (হাসি মুখ যেন দুনিয়ার সুখ) উমমম্মা ধন্যবাদ ফাদার,ধন্যবাদ ম্যাম।সিস্টার স্বাধীনের মায়ের ঠিকানাটা তাকে দিয়ে দিন। হোয়াট ইট ফাদার,আমি মনে করেছি...কি করে এ সম্ভব,লেট হিম টেক দি বেবি। ডোন্ড ওয়ারি সিস্টার,আমি জানি আমি কি করতেছি।টেস্টার একটা চোর হতে পারে,জুতা কারিগরের পালিত হতে পারে কিন্তু আপনি যা ভাবছেন তা না সে মা-বাপহীন স্বাধীনকে মায়ের কোলে তুলে দিতে চায়।জীবনে এই প্রথম কারো জিনিস ফেরত দিতে চাইছে,বিধাতা হয়ত টেস্টারকে ভাল পথে আনার জন্য তার হৃদয়ে দায়িত্ববোধ দিয়েছে।ঠিক আছে এখন যাই পরে এসে সব কাগজে সই করে দিব যাতে আপনার সমস্যা না হয়। শহরের উন্নত ও স্বতন্ত্র জায়গায় এক বিশাল প্রাচীর যা পুরাটাই কালো আয়নায় তৈরি,চারদিকে দেশী-বিদেশী নানান ধরনের গাছ লাগানো যা পরিবেশটাকে সবুজ ও সতেজ করে রেখেছে।লাল নীল বাতির আলো দপদপানির নিঝুম সন্ধ্যায় চেয়ার-টেবিল নিয়ে দারোয়ান বসে আছে শুধু,তাকে গিয়ে ঠিকানা দেখাতেই চিনে ফেলল।দেখ দেখ স্বাধীন কি মনোরম ফোয়ারা,জানিস সারা দিন যে আমি না খেয়ে আছি এখানে এসে তা যেন সংবরণ হয়ে গেল সত্যই তুই ভাগ্যবান স্বাধীন। এখন কাজের বদল হলে তোর মা বাহিরে আসবে তারপর আমরা তার সাথে দেখা করতে পারবো,তুই জানিস ভিতরে আমার যাওয়া এলাউডিস নাই তাই অপেক্ষা করতে হবে,চল ফোয়ারার পাশে বসে কথা বলবো।দুইদিন আমার সাথে থাকে তোর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে,তুই আমার গায়ে যে প্রস্রাব করতে আমার কাছে গরম গরম লাগত আজ সব শুকনা শুকনা রে।স্বাধীনের কপালে চুমা দিতেই সে অনঘ হেসে উঠে,এই যে হাসি তা দুনিয়ার হীরা-রোকড় দিয়ে খরিদ করার মত না আরে তুমি কেমন মা এই হাসি দেখা হতে নিজেকে বঞ্চিত রেখেছ।এই তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস এই কিছু দিন যে তোকে থাকা-খাওয়ার কষ্ট দিয়েছি,আরে কষ্ট হলেও যে ভালবাসা তোর প্রতি তা সব কষ্টের কাছেই নগন্য।(ম্যা করে কেঁদে উঠে)দুর বোকা মজা করলাম।(চলবে) (৩৩ তম পর্ব)--------------ধন্যবাদ মা------------এই মায়ের কোলে দেওয়ার পর নিজেকে সামালকে রাখবি তুই প্রস্রাব করে দিলে মা বকা দিবে বলবে বোকা ছেলে আদাব-কায়দা শিখেনি।কান্না বন্ধ কর ভাই,এই তুই কি আমাকে ভুলে যাবি.হুম তুই ভুলেই যাবি শিশুকালের কথা স্বরণ রাখে না কেউ।আমাকেও কেউ ডাস্টবিনে ফেলে চলে যায় তা আমারও মনে নাই,আমি তোর মাকে জিজ্ঞাস করবো প্রতি শুক্রবার আমি তোকে দেখতে আসতে পারবো কিনা সে কখনো না বলবে না।মনে হয় সময় হল ছোট বাস দুইটাতে ও ব্যক্তিগত গাড়িতে লোক এসেছে চল স্বাধীন আমরাও আস্তে আস্তে সামনে যাই।লোকজন সবাই সারিতে দাড়িয়ে ছাড়প্রত্র নিচ্ছে দপ্তরের ভিতরে যাওয়ার জন্য আমারও কি লাগবে না থাক।যাদের কাজ শেষ তারা বাহিরে আসছে আর যাদের শুরু তারা ভিতরে যাচ্ছে এমন অবস্হায় একে অন্যের সাথে কুশল বিনিময়ও করছে।দুই-তিনটা ছেলেমেয়ে একপাশে দাড়িয়ে কি নিয়ে যেন হাসিতে ব্যস্ত চল তাদেরকে তোর মার নাম বলি,স্বাধীনের মা আপু। স্বাধীনের মা! দেখি কাগজটা। সোজা যাও ওখানে জিজ্ঞাস করো। আপু একটু দেখো। ওই দেখ ওখান দিয়ে উপর। হ্যা উপর,ওই যে। উহ কত উপর।এটা কি আপনার নাম। জিন্স প্যান্ট ও টিশার্ট পরহিতা এক অপ্সরী কাগজটা হাতে নিয়ে মুখটা আষাঢ়ের আকাশ করে,আপনার নাম লিখা তাই না(হাাসি মুখ)।এই নাও তোমার বাচ্চা। একে শ্রাবণ হাসপাতাল হতে চুরি করে ছিল পরে কেন জানি ডাস্টবিনে ফেলে দেয় আমি দেখে তুলে নিয়ে যাই,তাকে যে কত জায়গায় নিয়ে ঘুরছি তোমার খোজে,দেখ মা তোমার সন্তান তোমার কাছে নিয়ে আসলাম,তোমার ঠিকানা হাসপাতাল হতে নিয়েছি। (কান্নারত) দয়া করে তুমি বাচ্চা নিয়ে চলে যাও,তুমি কি বলতেছ আমি বুজতেছিনা।আমার লোক এখন আসবে আর আসলে তোমাকে অনেক মারবে তুমি দয়া করে চলে যাও। এইতো তোমার সন্তান মা। আমার কোন সন্তান-টন্তান নাই। এই যে মা তোমার সন্তান ,চেহারা তার দেখ তোমার মত।কত মিষ্টি বাচ্চা। তুমি আমার কথা বুঝতেছনা। (হতাশ হয়ে ) না।কেন তুমি এমন করছো মা।একবার দেখ না তোমারই সন্তান।কমচে কম একবার কোলে নিয়ে একটা আদরতো করো মা। (উভয় কান্নারত) শুন,এখানে অনেক টাকা নিয়ে চলে যাও।এবার দয়া করে যাও জীবনে আর দ্বিতীয়বার এখানে আসবে না,আমি হাত জোড় করে বলছি,তোমার পা ধরে মিনতি করছি। আমি টাকা চাই না(উচ্চ স্বরে) আমি এই বাচ্চার মা চাই,আমি এই বাচ্চার মাটি চাই।কেন তুমি তাকে নিবে না,আমাকে বল কেন নিবে না।মহিলাটা দৌড় দেয়,এই দাঁড়া বলছি,এই দাঁড়া শালী এই তোরই সন্তান (পিছনে পিছনে দৌড়ে টেস্টার)।(চলবে) (৩৪ তম পর্ব)-------------ধন্যবাদ মা------------- এই দাঁড়াও,কথ শুনো মা (প্রবল কান্নার কন্ঠ) আমি স্বাধীনকে নিয়ে দৌড়াতে পারছি না মা,মারে দয়া করো।আমাদের চোর পুলিশের দৌড়ে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে,বহুজাতিক কোম্পানীর উচ্চপদস্হ ম্যাড়ামের পিছনে নোংরা কাপড় পরিহিত কিশোর এক দুধের বাচ্চাকে নিয়ে দৌড়াতে দেখে সবাই অবাক।দারোয়ান বসা হতে উঠে দাঁড়ায় হাত তুলে সালাম দেওয়ার জন্য কিন্তু ম্যাড়াম ভ্রু- নিক্ষেপ ছাড়াই রাস্তার পাশে রাখা কালো মার্সিডিস বেঞ্জে গিয়ে বসে পড়ে। সরি বেবি একটু দেরি হয়ে গেল,বলতেই পারি না কখন ঘুম চলে আসলো । পঞ্চাশ বছর বয়সী লোকটা সিট বেল্ট লাগাতে ব্যস্ত হলেও মহিলাটা কান্নায় বুক ভাসাচ্ছে আর আমি স্বাধীনকে বুকে ছেপে ধরে গাড়টি দেখি। এই কাঁদছো কেন,কি হয়েছে কেন কাঁদছো? মেঘহীন নীল আকাশ হতে আচমকা মুষুলধারে বারিষ শুরু হয়,আমি স্বাধীনকে বৃষ্টিতে ভিজতে মেলে ধরি। আরে কি হয়েছে,কেউ কিছু বলেছে তুমি না আমার ভাল বন্ধু না বললে বুঝবো কেমন করে বলো বলো। আমি তীর্ষক চোখে বুড়ার হাতের কারুকাজ দেখি। (কান্না বন্ধ করে) আমার নিজের প্রতি নিজের ঘৃনা হয়। না না এমন বলে না(কপালের চুল সরিয়ে দেয়) এরকম বলে না ডার্লিং একদম বলে না,আমি কি বলেছি আমরা হলাম ভাল বন্ধু আর তুমিতো বল ভাল বন্ধু সব করতে পারে সব বলতে পারে ঠিক না (মুখের উপর আঙ্গুল ঘসে আস্তে আস্তে হাত বুকে ও মুখ ঠোঁটে চলে যায়)। আমি বিশ্বাস করতে না পারায় চোখ বড় করি দেখার জন্য,বুড়া তার কানে মুখ ঘসে মহিলাটি কান্নার আওয়াজ বাড়িয়ে আমাকে দেখে আর আমি দ্রুত তাকে পিছন করি যাতে স্বাধীন তার মায়ের অসহায়ত্বের করুণ চিত্র না দেখে।তার কান্নার আওয়াজে আমারও কান্না আসে এদিকে আকাশের কান্নার তেজ বাড়ে তাই স্বাধীনকে আরো শক্ত করে বুকে ছেপে ধরি। পাঁচ ভাই-বোনের লেখা পড়ার খরচ এবং ভরন পোষণ বাপহীন বৃদ্ধ মার বড় মেয়ে হয়ে চালাতে গিয়ে আজ সে স্বাধীনের মা।এইভাবে হয়ত জীবন চলমান থাকবে কারন চাকরী করতে হবে,চাকরী না থাকলে সংসার চলবে না।স্বাধীনের বাবা সমাজের উপর তলার মানুষ যেখানে স্বাধীনের কিংবা মায়ের স্হান নাই,সমাজ জানলে সম্মান যাবে তাহলে কেন স্বাধীন আসবে পৃথিবীতে,কে গড়বে স্বাধীনের জীবন সমাজ,সংসার,ধর্ম,আধুনিকতা নাকি ডাস্টবিন। বৃষ্টির জল,আমার নয়নের লোনা জল,স্বাধীনের প্রস্রাব সব একাকার,আকাশ পানে চোখ তুলে তাকাতে আমার হাসি পায় আমি হাসতে হাসতে স্বাধীনের কপালে আদর করি।তাদের প্রতি ঘৃনা করতেও মন সায় দেয় না তাই আবার দেখি গাড়িটা কিন্তু এতক্ষনে উধাও তারা।(চলবে) (৩৫ তম পর্ব)---------------ধন্যবাদ মা---------- একটা ঢেউ এসে কূলে মিলে,তার পিছনে আরেকটা ঢেউ তৈরি হয়ে কূল খোঁজে অথচ আমার জীবনের কূল হবে না কারন আমি যে কুলহীন তাই হয়ত আমাকে সাগর কাছে টানে।আজ স্বাধীনকে নিয়ে সাগর তীরে আমি মন চায় হেটে যেতে সাগরের নিগূঢে,যেতে যেতে আমার কোমর ডুবে যায় পানিতে ঢেউের পর ঢেউ আমাকে ছুয়ে দেয়।কি দোষ তোর স্বাধীন,কি দোষ আমার সাগর তুমিই জবাব দাও স্বাধীনকে তোমার বুকে তুলে দেওয়া এর কি সমাধান। অন্ধকার পক্ক হয় চোখ কিন্তু জলহীন,উহ কেমন নিস্পাপ অক্ষিবিভ্রম চেহারা কেমন করে এই বাচ্চা তোমার বুকে তুলে দিই হেই সাগর(চিৎকারে আকাশ যেন কেঁপে উঠে)। না না তোকে ছেড়ে যেতে পারবো না বরং যে তোকে জনম দিয়ে দুরে করেছে তার নাম জলে ভেসে যাক,এই দেখ তোর মায়ের ঠিকানা সাগরে ছেড়ে দিলাম ঢেউয়ে ঢেউয়ে তা তলিয়ে যাবে। "হে খোদা তোমায় দেখা যায় না তারপরও তোমায় বিশ্বাস করি,তুমি বলো আমি কি করি,তোমার কথা মায়ের কদমতলে সন্তানের বেহস্ত তাই মা দাও আমায় কদম চুমা দিই "। "রাম নাম সত্য হে,রাম নাম সত্য হে"বলে বলে কিছু লোক হিন্দুর লাশ নিয়ে যাচ্ছে,খাটের চার পাশে চার জনের কাঁধে পুরানা কাপড়ে মোড়ানো লাশের দেহখানা।কত সাধারণ এই শেষ চলে যাওয়া,শ্মাশানে পুড়ে যাবে দেহ তারপর পাংশু মাটির গর্তে,অতি ক্ষমতাশালীও ভম্ম হয় আগুনে ওহ নিষ্করুন পরিনীতি তবুও ভোগের মোহে আমাদের জন্ম এই সময় কেন কোন ধর্মই কাজে আসে না। গুটি গুটি অ্ক্ষি জল স্বাধীনের মুখে পড়তে সে ঠোঁট দুইটা চুষতে থাকে,তবে যেমন চুপচাপ তেমন চোখও খোলে না।আমার শার্টে পকেট নাই প্যান্টটা অনেক পুরাতন ছিড়ে যাওয়া তা হয়ত স্বাধীন বুঝে গিয়েছে এতদিনে আর তার জন্য সময় দেওয়ায় কামাইও হয়নি যে বেশী করে দুধ কিনে পান করতে দিব। কত বড় বিশাল শহর অথচ আমরা কত অসহায়,কোথায় যাব এখন।এই দালানের ছাদ হতে পুরা শহর দেখা গেলেও আমাদের মাথা রাখার জায়গা দেখা যায় না।আমিতো আমার পুরাতন জায়গায় ফিরে যাব সেই রেল স্টেশন,সেই প্রতিবন্ধী বাবার পাশে বসে জুতা পালিশ,শলোমানের সাথে চুরি করা এবং ধরা পড়লে পুলিশের লাথি খাওয়া,পরি ও ট্রাফিককে নিয়ে শহরে ঘুরে বেড়ানো ইচ্ছামত।কিন্তু তোকে আমি কোথায় রাখবো,শলোমান তোকে দেখলে যে ক্ষেপে যাবে,বাবা চোখ বড় করে বলবে নিজে খাইতে পারি না!!তোকে কি মুসলিম এতিমখানায় দিব,নাকি খ্রীষ্টধর্মাবলম্বীদের চার্চে দিব,নাকি রামকৃষ্ণ মিশনে রাখে আসবো তাও বুঝতেছি না।(চলবে) (শেষ পর্ব)-------------ধন্যবাদ মা---------- মেঘহীন স্বচ্ছ আকাশে শত শত ঘুড়ির মেলা,আমরও খুব ইচ্ছে হল একটা ঘুড়ি উঠাতে কিন্তু স্বাধীনের জন্য পারছি না।আকস্মিক একটা লাল রংয়ের ঘুড়ির বাঁধন ছিড়ে যায় ঘুড়িটা ঘুরতে ঘুরতে সীমানাহীন হয়ে পড়ে।ভাবলেশহীন আমি স্বাধীনকে বুকে চেপে নিরত রাস্তা পার হতে অতর্কিত সাদা টয়োটা গাড়ি এসে যায়।দক্ষ মহিলা গাড়ি চালক আমাদের বাঁচাতে সহসা ব্যাক চেপে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে যায়,খুব আপন আপন মনে হয় চালকও গাড়ির গ্লাস খুলে গভীর মমতায় আমাকে দেখতে থাকে।রাস্তার উপর holy spirit hospital এর সাইনবোর্ড দেখি যেখানে এক মহিলা ডাক্তারের ছবি অনেক উপমায় ভরা এবং ছবির নিচে লেখা woman of the year এবার গাড়ির কাছে গিয়ে ঝুকে উনাকে দেখি।ডাক্তার অকৃত হয়ে এদিক সেদিক দেখতে থাকে এবং ব্যাগ হতে পাঁচশত টাকার নোট এগিয়ে ধরে উনি ভাবছে হয়ত কোন ফকির সন্তান রাস্তায় ভিক্ষার জন্য দাড়িয়েছে।বাম হাতে টাকা নিয়ে আমাকে ইশারা করে আমি ঘৃনায় মুখ বাঁকা করে দুরে সরে দাড়াই,টাকা না নেওয়ায় অভাগ হয়।আমার যেরকম বাম হাতে কালো দাগ উনারও সেরকম বাম হাতে কালো দাগ তবে সে ফর্সা হওয়ায় খুব ভাল করে নজরে আসে।উনি আবারও বাম হাত দিয়ে চোখে সান গ্লাস পরে আমি অপলক তাকিয়ে থাকি ডান হাতে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে চলে যায়।তাহলে উনি কি আমার মা।মা মা ও মারে। সাত-পাঁচ ভাবনায় মনে আসে ফাদারের চেহারা যাকে মানুষ হিসাবে বিশ্বাস করা যায় যার উপর মানুষ হিসাবে আস্তা রাখা যায়। আমি স্বাধীনকে নিয়ে সোজা চার্চে চলি আসি যেখানে ফাদার ধর্ম শিক্ষা দেয়।আমাকে দেখে ফাদারসহ সবাই হতবাক পুরাটা কামরা যেন জনমানবহীন মনে হয় আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকি।ফাদার আমাকে ইশারা করে পাশের কামরায় যেতে আমি ক্ষমা চাই তালিমের মধ্যে শান্তিভঙ্গ করায়। একে রাখুন সিস্টার এ যখন বড় হবে তখন আমি নিয়ে যাব(স্বাধীনকে টেবিলে রাখি)। একটু দাড়াও সব কিছু লিখতে হবে। স্বাধীন হাত পা নড়াচড়া করে দেখে বুকের ভিতর আমার ব্যথা করে হারানোর,কি লিখবে লিখ।নাম-স্বাধীন,বাবার নাম-পৌরসভা,মাতার নাম-ডাস্টবিন এবার যাহা মন চায় তাই লিখ কিন্তু এতিম লিখতে পারবে না।আমি দুই হাত দিয়ে তার মুখ ছুঁয়ে দিয়ে কপালে চুমা দিতেই চোখে প্লাবন নামে। আমি তোকে বলেছিও যে নজর রাখ নজর রাখ বাচ্চা জনম দিয়েই হাসপাতাল হতে পালাবে,এখন দেখ আমার কথা সত্য হল কিনা। আমার কি দোষ,আমি মনে করেছি এইভাবে কেউ নিজের বাচ্চা হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায় নাকি। আবে ওই যেত বছর তোর বয়স তার চেয়ে বেশী আমি এই হাসপাতালের দারোয়ান,একবার মা নিজের হাতে বাচ্চার গলা টিপে ধরে মারার জন্য,শোকর কর এতো বাচ্চা ফেলে চলে গিয়েছে তুই বহুত বড় হৃদয়বান যা ঘরে মাদার তেরেসার ছবি লাগিয়ে রাখ।এমন করলে হাসপাতালের ঝাড়ুদার কাজ করে এ জামানায় সংসার চলবে না,যা আমার সামনে হতে। আগে সেখানে বসে কাকার জন্য অপেক্ষা করতাম সেখানে বসে থাকি দেখি কাকা আসে কিনা।ওই কিরে,আজ আবার এখানে বসা ধরলি,তোর মাথায় কেন ঢুকে না আমার কথা কেউ আসবে না তোর খোজে,যা চলে যা নিজের কাজ কর (আর্তনাদ করে)যারে বাপ। গম্ভীর হয়ে বসি থাকি পাশে রাখা ফেনসিডেলের বোতল এগিয়ে ধরি কাকার দিকে।শুনো কেউ আসুক না আসুক আমি তোমার কাছে আসবো বোতল নিয়ে,এখন যাই। হায়রে জীবন(বোতল ছুড়ে ফেলে কান্না )এই সাদা টয়োটা গাড়ির বড় ডাক্তারই তোর মা যাহা মরনের আগেও তোকে বলা যাবে না।"ওহ ওহ ওহ মা মা মা,ওহ মা।আহ আহ মা তোরে ছাড়া বাঁচা অনেক কষ্টের,তোরে ছাড়া যে ঘুম আসে না আহ আহ মা মা মা"। পনুশ্চঃ এক বেসরকারী হিসাবে ভারতে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৭০টা বাচ্চা হাসপাতালে ফেলে চলে যায় মা। তাই আমরা ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুশাসন মেনে চলি।তবে পৃথিবীর সব মাকেই ধন্যবাদ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 3টি মন্তব্য এসেছে।

almamun1996
০৭-১২-২০১৭ ১০:২৫ মিঃ

সুন্দর ।।ভাল লিখেছেন কবি

almamun1996
০৭-১২-২০১৭ ১০:২৫ মিঃ

সুন্দর ।।ভাল লিখেছেন কবি

gainp86
০৭-১০-২০১৭ ১৯:১৫ মিঃ

মন ছুঁয়ে গেল ভাই। আরও লিখুন। শুভকামনা রইলো।