গল্প "বল মা তারা দাঁড়াই কোথা "
- pijush kanti das ২০-০৪-২০২৪

"বল মা তারা দাঁড়াই কোথা "
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পীযূষ কান্তি দাস
----------------------------------------------------------------------------------------
এই সেদিন আফিস থেকে বাড়ি ফিরে সবে আমার সাধের চেতক(আসলে মোটর বাইক )কে আস্তাবলে রেখেছি কী রাখিনি দড়াম করে দরজা খুলেই গিন্নীর চিলচিত্কার
-----বলি তুমি ভেবেছোটা কী আমায় স্পষ্ট করে বলবে ?আজ তিন তিনটা বছর ধরে এতো করে বলছি ---এটুকু আশাও পূরণ করাতে পারবে নাতো বলি বিয়েটা করছিলে কেন ?
আমিতো ভ্যাবাচ্যাকা আবস্থা ।তোতলাতে তোতলাতে বলি
----আহা হা ,চি -চিত্কার করছো কেন ?ব -বলি হ -হয়েছেটা কি ?আমিতো কি -কিচ্ছুটি বু -বুঝতেই পা -পারছি না ।কিসের কথা বলছো ?
শুনেতো আমার গিন্নী আরও রেগে উঠলো ।
----তা বুঝতে পারবে কেন ?আমি কি তোমার আপিসের সুন্দরী পি .এ যে বলতে না বলতে সব বুঝে যাবে ।এই সামান্য কথা যদি মনে না থাকে তবে আপিসের অতো অতো কথা বলি মনে থাকে ক্যামনে শুনি? হতচ্ছাড়া গুলো তোমায় এত্তবড়ো পোষ্টে কী মুখ দেখতে বসিয়ে রেখেছে নাকি সেখানে সব ঠিক আর বাড়ির বেলায় যত্তো সব ভুলে যাওয়ার ব্যামো ?বলি আমি কী কচিখুকী -কিছুই বুঝিনা ?
এতক্ষণে মনে পড়লো আমার কথাটা ।আসলে আজ তিন তিন বচ্ছর ধরে গিন্নী মা তারার থানে গিয়ে একবার মায়ের দর্শন করে ও পূজা দিয়ে আসবে বলে বারবার বলেছে আর প্রতিবারই আজ যাবো কাল যাবো বলে বলে বিভিন্ন ভাবেই আমি তা এড়িয়েই গেছি ॥
সেই পাঁচবছর আগে সে মানত করে ছিলো যখন ওই ব্যাম্বুভিলা (সার্থক নাম বটে )তে গিয়েছিলাম ব্যাম্বুর গাঁট ছাড়াতে আর ফেরার পথে কার অক্সিডেন্ট হয়ে হাসপাতলে কয়েকদিন ভর্তি - যমে -মানুষে টানাটানি (লোকের বিশ্বাস আমার সতী -সাবিত্রীর শাঁখা -নোয়ার জোরে ) শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে ছিলাম ।এ মানত নাকি সেই তক্খন কার ॥
সে যাইহোক আমি মাঝে ওই মাস ছয়েক আগে একবার অফিসের কাজেই অফিসের গাড়িতে করে ওই রামপুরহাটে গিয়েছিলাম ও "পতির পূণ্যে সতীর পুণ্য নইলে খরচা বাড়ে "বিবেচনা করে পূজাও দিয়ে ভেবে ছিলাম যাক্ বাবা রথ দেখা আর কলাবেচা দুটোই হলো । আর নিশ্চয়ই গিন্নী যাওয়ার কথা বলবে না ।কিন্তু সেটা যে অমূলক তা আজ হাড়ে হাড়ে টের পেলাম ।।
প্রতিদিন আফিস থেকে ফিরলে হাত -পা ধুয়ে আমার পরম প্রিয় রাজসিংহাসন(একখানা বেতের আরাম কেদারা যেটি আমার গিন্নী সেই দশ বছর আগে শিলং বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকেই একরকম জোর করে ও বিস্তর অসুবিধা পুইয়ে এনেছিলো )বসামাত্র আমায় চিনি ছাড়া চা ও দুই খানা ক্রিমকেকার বিস্কুট (সুগার না থাকা সত্বেও যাতে মুটিয়ে না যাই তারই অগ্রিম সতর্কতা বিধায় )নিজে হাতে দিয়ে যেত এবং এই বিশ বছর বিবাহিত জীবনে হাতে গোনা কয়েক দিন (যে কদিন আমায় ছেড়ে একা একা বাপের বাড়িতে থেকেছে ) কোন রকম নড়ন চড়ন হয়নি ।আজ দেখলাম আমাদের কাজের মেয়ে -সেই ময়নার মা চা দিয়ে গেল ।বুঝলাম আজ কপালে দুঃখ আছে ।চায়ে চুমুক দিয়ে এও বুঝলাম যে আজ আমার হার্ট নিজের হাতে চা বানায় নি ।ময়নার মা নূতন কাজে বহাল হয়েছে ।সে তো জানেনা- বেশ ভালো করেই চিনি আর আদা দিয়ে এককাপ কড়াক চায়ে দিয়ে গেছে ।।
আমি তো চা খেয়ে বেরুলাম ক্লাবের উদ্দেশ্যে যথারীতি রাত নটায় বাড়ি ফিরে হাত -মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসলাম ।চিরদিনই আমি আর্লি রাইজিং ও আর্লি গো টু বেড (অবশ্যই বিয়ের পর থেকেই আর কারণটা না হয় সবিস্তারে নাই বা বললাম ।সুধী পাঠকবর্গ এ ব্যাপারে অনেক চালাক )।।
ও হরি খাবারও দিয়ে গেল ময়নার মা ।আমি জিগ্গেস করলাম
------হ্যাঁরে ,তুই যে বড় খাবার দিলি ?তোর বউদিমনি কই ?
-------আর কয়েন না দা বাবু ।বউদিমনি সেই যে আপনে বেরুলেন আর তিনিও টিপিনটাও না খেইয়ে মাতা ধইরেচে বলে ঘরে গিয়ে শুলেন -রাতে কি আন্না হবে তাও কননি ।মুই যা পেইরেচি রাঁধি পেকাইচি ।ভালো না লাগিলে মোকে বকতে পারবেন না কিন্তুক ।
বুঝলাম ব্যাপার গুরুতর॥
আজ ক্লাবে গিয়েও ফালতু বিনয়- রবিনের বাঁজা কথায় রেগে গিয়ে পটলা ,ভুতো -গনশার হাতাহাতি ।সন্ধ্যায় যে আজ কমলার তেলেভাজা আর মুড়ি -চা খাওয়ানোর কথা ছিলো তাও কেঁচে গেছে ।
বাড়িতেও সেই ময়নার মায়ের দেওয়া চা ই শুধু খেয়ে গেছলাম ।কোন টিফিনও খেয়ে যাই নি ।তারপর ওখানেও ওই আবস্থা ।পেটের ভিতর হাজার খানেক ছুঁচো যেন ডন বৈঠক মারছে । খাবার খেতে গিয়ে আক্কেল গুড়ুম ।শুধু রুটি আর শালা আমার দুচোক্ষের বিষ সেই নিউট্রিলার তরকারি ।অথচ বেশ মনে আছে গতকালই মেরি জান বলেছিলো আজ গরম গরম পরটা আর মাটন রেজালা হবে সেজন্য সকালে সেই আমার চেতক নিয়ে খিদিরপুরে গিয়ে পাক্কা পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে পায়ে ঝিনঝিনে ধরিয়ে রহমানিয়ার ছেলেটাকে অনেক বলে কয়ে সিনা থেকে কড়কড়ে একখান পাঁচশো ও একখান একশোর পাত্তিখসিয়ে এককিলো রেওয়াজি এনে দিয়ে গেছি ।তারপর আবার সেই সাধের নিউট্রিলায় এমনি কষে ঝাল দিয়েছে ময়নার মা যে একবার মুখে দিয়েই মাথার ব্রহ্মতালু পর্য্যন্ত ঝাঁঝিয়ে উঠেছে ।আর কিচ্ছু না থাকায় তাই দিয়ে কোনরকমে দুখানা রুটি খেয়ে উঠে পড়লাম ও কাল সকালে বড় বিয়োগের সময় গুহ্যদ্বারে কি আরাম উপলব্ধি করবো ভাবতে ভাবতে ব্রাশ করে রুটিন ঔষধ খেয়ে শয়নকক্ষে প্রবেশ করিলাম ।।
মৃদু নীল আলোতে অবলোকন করলাম আমার সহধর্মিণী (নিন্দুকের কথায় বেড পার্টনার ) আমার দিকে পশ্চাত্ ফিরিয়া শয়ন করিয়া আছেন ।নিদ্রাদেবীর বশীভূত কিনা বোঝা যাচ্ছে না ।আমি আসতে করে মশারি তে নাড়া দিয়ে ঈষত্ উঠিয়ে আতি সতর্কতার সাথে বিছানায় প্রবেশ করলাম ।এই শালা মশার বাচ্চারা যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্দর গমনের ট্রেনিং নিয়েছে সেটা নিয়ে কেউ যদি রিসার্চ করে ও ওদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কোন উপায় আবিষ্কার করেন আমি সরল অন্তঃকরণে ও সেচ্ছায় তাকে একটি বিশেষ প্রাইজ দেব সে অঙ্গীকার করছি ।কারণ যতই সাবধানে ঢুকিনা কেন দু -একটা শালা ঢুকবেই ঢুকবে ।তখন যদি লাইট জ্বালিয়ে হাজার গরু খোঁজার মতো খুঁজি তবুও তাদের টিকির নাগাল(যদিও জানি তাদের টিকি নাই ) কোনদিন পাই নি ।তারপর যখন অনেক সাধ্য সাধনার পর নিদ্রাদেবী সবে চোখের পাতার কাছে আসব আসব করেন ঠিক তখনই কানের কাছে তারা বিসমিল্লা খানের সানাইসহ নহবত্ এর কনসার্ট শুরু করে ও নিদ্রার গুষ্টির ষষ্টিপূজা করে ।তা তখন সেই ঘুম ঘুম চোখে মশা নিধনের চেয়ে খালি হাতে পানিপথের যুদ্ধে কামান সমেত বাবর নিধন করা আমার মনে হয় অনেক সহজ ॥
তা যাই হোক ঢুকলাম তো বিছানায় ।মৃদু নীল আলোতে আমার হৃদয়হারিণী- আমার দিল ঘুমিয়ে আছে নাকি মটকা মেরে পড়ে আছে বুঝতেই পারছি না ।মনেমনে সর্ব বিপদতারণ মহাদেবকে স্মরণ করে কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে যেই না বলেছি-
----জান !তুমি কী সত্যি ঘুমিয়ে গেলে ?
আর যায় কোথা সঙ্গে সঙ্গে ফোঁস !
----যাও যাও আর জান বলে আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না ।তুমি যে আমায় কতটা ভালোবাসো তা আমার ভালোই জানা আছে ---বলেই রাগ করে -মশারি -ফসারি ছিঁড়েমিড়ে বিছানা থেকে নেমে যায় আরকি ! অনেক কষ্টে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে ঠান্ডা করার জন্য বলি
----না সোনা রাগ করে না ।তোমার মাথার দিব্যি খুব শীঘ্রই তোমায় তারাপীঠে নিয়ে যাবো ।
------কি বল্লে কি বল্লে আমার মাথার দিব্যি ? হাঁ হাঁ -জানি জানি তা আমার মাথার দিব্যি তো নেবেই ।কারণ
আমি মরলেই তো তোমার সুবিধে ।তবেই তো তোমার লাইন ক্লিয়ার হয় ,সুন্দরী পি .এ ওই কি যেন নাম তনিমাকে নিয়ে ফস্টি -নস্টি করতে সুবিধে ।
----আহা - হা! কি যে বলো না জানু ।তুমি ছাড়া বলি কি আমি জগত্ অন্ধকার দেখি ।
----আরে যাও যাও !তুমি যে আমায় কত ভালোবাসো সে আমার জানতে বাকি নাই ।গতবার বিয়ে বার্ষিকীর আগে তুমি আমায় কি দিবে বলেছিলে আর কি দিয়েছিলে মনে আছে ?
------কি দিব বলে দিইনি বলো ?তোমাকে কি আমার অদেয় কিছু আছে ?
------জানি জানি আমায় আর বুঝাতে এসো না ।আমি কিছু বল্লেই তো ভুলে যাও ।অথচ সেই সেবার তোমার ভাইঝির বিয়ের সময় যখন সোনার চেইন দিলে আমি কিছু বলেছি ?
------আহ্ !কি যে বলো না !তুমি কি আমার সেরকম সোনা ।আর আমি তো জানি যে চুটকি (আমার ভাইঝির ডাক নাম ,ভালো নাম কোয়েল )কে তুমি কতোটা ভালোবাসো ।ছোটোবেলা থেকেই ওতো তোমার কাছেই মানুষ ।ও যে তোমায় জেঠিমা না বলে আড়ালে মা বলে ডাকে তা কি আমি জানিনা ভেবেছো ?
আসলে বিয়ের পরে পরে যখন আমরা দেশের বাড়ি ছেড়ে কোলকাতাতে সবে এসেছি আর আমিও তখন সবেমাত্র চাকুরীতে জয়েন করেছি তাও কিনা ক্লাসথ্রি পেটি ক্লার্ক হিসেবে ।অথচ চিরদিনই আমার পরীক্ষার রেজাল্ট ছিল ঈর্ষা করার মতো আর ওই রেজাল্ট এর গুণেই কলেজের সবার কাছে বেশ পরিচিত ছিলাম ।নীচের ক্লাশের স্টুডেন্টদের কাছে তো একপ্রকার আইডল ই ছিলাম ।প্রফেসররাও নীচু ক্লাসে কেউ পড়া না পারলে তাদের কাছে আমায় উদাহরণ দিতেন যে যাও কিভাবে পড়াশুনা করতে হয় দাসের কাছে দেখে এসো ।
সেই জন্যইতো এত সহজেই অমন ডাকসাইটে সুন্দরী এক কথায় হুরি ধনীর একমাত্র দুলালী আমার জানু আমার প্রেমে পড়েছিলো ।।
তা যাক্ ওসব কথা সময়ের সাথে সাথে একটু একটু করে পদোন্নতি হয়েছে আর কোলকাতার বুকে এককামরা বাড়ি থেকে আজ তিন তলা বাড়ি ।কিন্তু প্রথম জীবনের প্রতিষ্ঠার লড়াই লড়তে গিয়ে সন্তান নেওয়ার কথা আমাদের দুজনেরই মাথায় আসে নি ।তারপর যখন ওদিকে হুশ পড়লো তখন আর ইসু আসে না ॥
শুরু হলো এ ডাক্তার ও ডাক্তার এর কাছে ছোটাছুটি ।সব্বাই বলছে দুজনের কারুরই কোন দোষ নাই তবুও কেন যে ইসু আসছে না সেটাই তাদের বোধগম্য হচ্ছে না ।প্রতিক্ষা আর ধর্য্য ধরে চেষ্টা করে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই ।
ডক্টর দাসতো কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন
--- -----পৃথিবীতে যে হারে লোক সংখ্যা বাড়ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে শুধু মানুষই যে বিপদে পড়বে তা নয় পৃথিবীর ও ওই বিপুল সংখ্যক মানুষের ভার বইতে অসুবিধে হবে ।প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে ।ধরে নিতে পারেন এটা পৃথিবীর প্রতিরোধ ।বিদেশে এরকম ক্ষেত্রে কাপল চেঞ্জ করিয়ে সন্তানধারণের ব্যবস্থা হয় কিন্তু আমাদের সনাতন এই দেশে এ কথা বলতে গেলে লোকে পিঠের ছাল তুলে নেবে ।তাই অপেক্ষা করুণ আর ধৈর্য্য হারাবেন না ।
আমাদের তত্কালিন কাজের মেয়ে শেফালীর যখন তৃতীয় সন্তানের পর আবার চতুর্থ সন্তান এলো তখন গোপনে জানুকে অনেক চোখের জল ফেলতে দেখেছি ।ও তো রাতে শোয়ার সময় প্রায়ই বলতো
---দেখো দেখো ওদের বাড়িতে খাওয়ার জোটেনা অথচ হিংসুটে ভগবান ওদের কোলে সন্তানের পর সন্তান দিয়ে যাচ্ছেন আর আমরা কেমন হতভাগা কোন অসুবিধা না থাকা সত্বেও কোন সন্তানই আসছে না ।জানো কাল যখন ঘোষবৌদির মেয়ের বিয়েতে হলুদমাখাতে গেলাম তখন কেমন কায়দা করে আমায় মাখাতে দেয়নি ! আড়ালে আবডালে ওরা আমায় বাঁজা বলে হাসাহাসি করে ।তুমি তো পুরুষ মানুষ -তোমার আফিস আছে ক্লাব আছে ।সারা দিন আফিস -ক্লাব এই সব নিয়ে সময় কাটিয়ে দাও আমার কিভাবে সময় কাটে জানো ?
সেদিনই আমি সত্যিকারে ওর বেদনাটা উপলব্ধি করেছিলাম ।তারপরই আমি দেশের বাড়ি গিয়ে ছোট ভাই এর মেয়ে চুমকিকে এনে ওর হাতে তুলে দিয়েছিলাম ।আসলে ছোট বৌমার চুমকি হওয়ার পরে দেড়বছরের মধ্যেই আবার একটি সন্তান হয়ে গেছে এবং একই সাথে দু দুটি ছোট বাচ্চাকে নিয়ে নাজেহাল আবস্থা ।।
চুমকিকে পেয়ে ও যেন জীবন পেয়েছিল ।।
তা যাক্ ওসব কথা ।সেদিন যে কি করে ওকে সামলে ছিলাম তা একমাত্র ঈশ্বর জানেন ।কথা দিয়েছিলাম যে পরের শুক্রবারেই ওকে তারাপীঠে নিয়ে যাবো ।তাই পরের দিনই ভোরে উঠে ছুটেছিলাম টিকিট কাটার জন্য লাইন দিতে । ওই যে আজকাল ই- টিকিট ফিকিট কি সব কাটা যায় আমি আবার ঠিক মতো তা কাটতে পারি না । এসব ব্যাপারে এক্সপার্ট আমার শ্রীমানও তো এখন সেই সুদূর ভুবনেশ্বরে পড়াশুনার জন্য ।টিকিট কেটে বাড়ি এসে গিন্নির হাতে দিলাম ও স্নানাহার সেরে আলতো চুমু দিয়ে অফিসে এসে নিজের চেম্বারের চেয়ারে বসেছি কি বসিনি আমার পি .এ. তনিমা চেম্বারে ঢুকলো হাসি হাসি মুখে ।
বললে --স্যার ! এম .ডি সাহেব এখুনি আপনাকে তার চেম্বারে ডেকে পাঠিয়েছেন ।আপনার আসার আগেই উঁনি দু দুবার আমায় ইন্টারকমে আপনার খোঁজ নিচ্ছিলেন ।খুবই ইমারজেন্সি কি দরকার আছে ।
অগত্যা টেবিলে রাখা বিস্লারীর বোতল (যেটা আফিস থেকে প্রতিদিনই দেওয়া হয় )দু ঢোক খেয়ে ছুটলাম এম .ডির ঘরে ।
এম .ডি .র ঘরে গিয়ে দেখি উঁনি দরজার দিকে পেছন ফিরে টেলিফোনে কার সাথে বেশ গম্ভীর ভাবে কথা বলছেন ।
-----আপনি আমায় ডেকেছেন মি.দাশগুপ্ত ?
----ওহ্ মি .দাস !প্লীজ বি সিটেড ।একটা অত্যন্ত দরকারী ফোন এসেছে দিল্লী থেকে আর পাঁচ মিনিট লাগবে ।আপনি বরং ততক্ষণ চা টা খেয়ে নিন বলেই বেল দিলেন ।ওনার পি .এ .মিসেস পাকড়াশি এলেন ।উঁনি আমার জন্য চায়ের ব্যবস্থা করে ফের টেলিফোনে মনোনিবেশ করলেন ।ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই উঁনি আমার দিকে ফিরলেন ।
-----মি.দাস ।আপনি কাল বাড়ি যাওয়ার পর আমায় অনেক রাত পর্য্যন্ত অফিসে থাকতে হয়েছিলো ।আপনি তো জানেন যে সামনেই আমাদের অ্যানুয়েল কর্পোরেট মিটিং । বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের সব প্রশ্নের উত্তর আমাদের দিতে হয় ।
----জানি স্যার ।
-------গতকাল দিল্লীর আফিস থেকে ওখান কার ইনচার্জ মি .আগরওয়াল ফোন করেছিলেন ।ওখানে অফিসে কোন এক ডিস্ট্রিবিউটার এর সাথে কন্ট্রাক্ট নিয়ে কি লিগ্যাল প্রব্লেম হয়েছে ।তারা চার কোটি টাকা ডেমারেজ ক্লেম করেছে আর আপনিতো আমাদের কোম্পানির লিগ্যাল প্রব্লেম সলভ করার মাষ্টার পিস ।তাই কোম্পানী আগামী পরশুর ফ্লাইটে আপনাকে ও আপনার পি .এ কে দিল্লী পাঠাচ্ছে ।মি .আগরওয়াল নিজে আপনাদের এয়ারপোর্টে রিসিভ করবেন ।দিন সাতের বেশি সময় লাগার কথা নয় ।আজই আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট আপনাদের টিকিট দিয়ে যাবে ।আশা করি কোন অসুবিধে নেই আপনার ।
বুকের মাঝে কি একটা কষ্ট অনুভব করলাম ।অনেক কষ্টে উদগত কান্না রোধ করলাম বুকটা কেমন কেমন করে উঠলো কিন্তু বাড়ির কথা আর বলতেই পারলাম না ওনাকে ॥

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।