বাতিঘরের নায়িকা
- সোহরাব হোসেন - বেলা অবেলা ১৯-০৪-২০২৪

দুদন্ড শান্তি বিলায়ে ক্লান্ত হয়না বনলতা সেন,
মুগ্ধ মিতালীতে ঋতিরা করে সবিনয় নিবেদন।
শব্দ ও অক্ষরের কবিতায় ডুবে রয় নিশ্চুপ নীরা,
লায়লী প্রেমে মজনুরা থাকে চিরকাল আত্মহারা।
মাধবীলতা নীরবে হয়ে রয় অনিমেষের ভরসা,
রাশমনি জাগায় হৃদয় মাঝে অহর্নিশ ভালবাসা।
ব্যস্ত সুধা, ভুলিবেনা তবু অমলেরে দেওয়া কথা;
ঐখানে যদি যায় সুরঞ্জনা, মনে লাগে বড় ব্যথা।
কপিলা যাবে ময়নাদ্বীপে কুবের যদি নেয় লগে,
নীল নীল চোখে নীলাঞ্জনা চেয়ে থাকে অনুরাগে।
নীরঞ্জন প্রেমে লাবণ্যেরা মেটায় ওড়ার প্রত্যাশা,
কেতকী বাঁধে ক্লান্ত অমিতের ছোট্ট সুখের বাসা।

চাঁদনী রাতে হাতেহাত রেখে কুসুমেরা যায় বহুদূর—
বেপরোয়া স্বাদে মতি রাঙায় কুমুদের স্বপ্ন অজড়।
বনবিহারী প্রেমে জয়ারা করিবে সর্বাঙ্গসুন্দর ভুল,
মৃন্ময়ী কুড়ায়ে আপনি হাতে ঠাকুররে দিবে ফুল।
পার্বতী গড়ে পর্বতসম অটল ভালবাসার প্রাসাদ,
লাস্যময়ী নির্মোহ চন্দ্রমুখীরা মুছে দেয় অবসাদ।
জয়গুনরা থাকে বাক্সবন্দি, শাশ্বত রমণীর রূপায়ণ,
কত সহজে মুনারা পাল্টায় বাকের ভাইয়ের জীবন!
সাদামাটা জীবনে রং ছড়ায়ে যায় মন্তু মিয়ার টুনি,
অচলারা হয় সুরেশের হৃদয়ের সুরভিত মধ্যমণি।
গেরুয়া বসনে বিনোদিনীরা থাকে চিরকাল অধরা—
শেখরের প্রেমে ললিতারা হয় জীবনের রং হারা।

রেমির শূন্যতা কুড়ে কুড়ে যায় স্বপ্নওয়ালার অন্তরে,
প্রণয় পিয়াসী রোহিণীরা ঝরে গোবিন্দের মন্দিরে।
যক্ষপুরী ছেড়ে নন্দিনী দেয় শ্বাশত প্রেমের বারতা,
বাল্যসখী সুরবালার একরাত্রি, জীবনের সার্থকতা।
মেহেরজানেরা ফুটিয়ে যায় ভালোবাসার ফুলকলি,
হৃদয়ের শাখা দোলা দিয়ে যায় চশমা পড়া ললি।
রূপে ব্যক্তিত্বে প্রখর মহামায়া আঁকড়ে থাকে হৃদয়,
অলি, তুতুল, সুলেখা করে মন অকারণ বিষাদময়।
মমতাময়ী ভূমিসুতা ঠিকরায় সুখের প্রথম আলো,
রজকিনীর সর্বনাশা প্রেমেতে চন্ডীদাস তড়পালো।
মিষ্টি মেয়ে আহীরে ভালোলাগা- মনের মতো মন,
এলা দিলো প্রেমে কামনার দাবি, শ্বাশত-নিরাবরণ।

কোমল প্রেমী হেমামালিনী করে অন্তরে অন্তর যোগ,
নিরুপমা, কল্যাণী, হৈমন্তী সহে মনোযাতনা অমোঘ।
বিন্দু নিধিতে ভালবাসার সিন্ধু বহে নিরন্তর নিরবধি,
আত্মত্যাগী সাবিত্রীরা পৌঁছায় মনের মন্দির অবধি।
গিরিবালা, মৃণাল, কুমুরা মেটায় স্বামীর হেলার দায়,
রহস্যময়ী অপর্ণার ভালবাসা জগৎ মাতালো ঈর্ষায়।
সুন্দরী, প্রখর মুকুরা রয়ে যায় তবু দৃঢ়তায় টইটম্বুর,
বিভারা করে যাবে অভীকের হৃদয় পূর্ণ আবিষ্কার।
চারুলতার অমন নিষ্কাম প্রেমে অমলের স্বপ্ন দোলে,
রওশনেরা বিলায় হৃদয়ের ভাষা- আঙুলে আঙুলে।
সূর্যকে ভালোবেসে শ্রেষ্ঠ সুখী ক্ষণজীবিনী বুলবুল,
বিনয়ী প্রেমে, প্রেমময়ী ললিতা কথা-কাজে অটল।

ভালবাসার তরে চন্দ্রাবতীরা জীবন করে কোরবান,
সোনালি হাজার প্রাচীর ডিঙিয়ে পেতে চায় ত্রিস্তান।
বিষের ভেলায় বেহুলারা থাকে প্রেমের মন্ত্রে জাগি,
বিচ্ছেদ অনলে রাধা পুড়ে ছাই কৃষ্ণের প্রেম লাগি।
শিরিতে বুঁদ ফরহাদেরা সদা কাটিবে অসাধ্য পাহাড়,
ইউসুফের প্রেমে জুলেখারা হয় জ্বলে পুড়ে অঙ্গার।
রাজলক্ষীরা অন্তর জুড়ে শ্রীকান্তের নির্ভয় আশ্রয়,
বিলাসী অধরা হৃদয় রাজ্য তিলে তিলে করে জয়।
ভালোবাসাময় স্বপ্নে জাগাতে, ভালোবাসা শেখাতে
প্রেরণার সম্পর্ক সৃষ্টিতে, সুখের সপ্তম স্বর্গে ভাসাতে—
স্বপ্নের নায়িকারা আসবে ফিরে মর্তলোকে বারবার,
স্বমহিমায় দেবে হৃদয়ে শুশ্রূষা, বাস্তবতা করে চুর্মার।

রবিবার, পলাশী
১০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ইং।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

robinbdbuet
১৮-০১-২০১৮ ২১:৩৮ মিঃ

বইয়ের পোকা, বই প্রেমিদের জন্য আমার উপহার।