নষ্ট কাব্যের গল্প
- অনিমেষ বিশ্বাস ২৫-০৪-২০২৪

কবি সেই গল্পটা আরেক বার বল ,
সে যে সেই অবুঝ আনাড়ি মেয়েটার কথা ,
পুতুল খেলার বয়স পেরিয়ে
প্রথম যৌবনের ছোঁয়ায়
শান বাঁধানো পুকুরের ঘাটে
পায়ের পাতা কিঞ্চিত ডুবিয়ে
অনুভব করেছিল ভাললাগার
আলতো সুড়সুড়ি ।
জল আর আকাশ তার ভাল লাগত ,
মেঘের ঘুড়ি স্বচ্ছ জলের আয়নায়
আনমনা করে তুলতো ;
বসন্তের দুষ্টু বাতাস তার
মুখ আর চুলের সাথে লুকোচুরি খেলে
তাকে বুঝিয়েছিল কতখানি রং ফুল প্রজাপতির ডানায় !
অতটুকু তার বয়স
সে বুঝবে কি ?
বসন্ত পেরিয়ে কালবৈশাখী
ফাঁদ পেতে থাকে
সযত্নের ছোট্ট ঘরখানি নিয়ে
ছেলেখেলায় মেতে উঠতে।
রং আর উষ্ণ সান্নিধ্য ভালবেসে
মেয়েটাকে সর্বস্ব জলাঞ্জলি দিতে হবে
পুকুরের পাড়ও স্বপ্নে ভাবেনি ,
জানলে হয়ত পাড়ের ওপাশের গুল্ম আর ঝোপ ঝাড়কে
বুকে আগলে রাখত না
এতটা ভালবেসে ।
সে মেয়েটাকে এখন আর পুকুর ঘাট আর জলোরাশি পায় না খুঁজে
আর কোন দিন শীতল জল
ঐ পায়ে আঁকবে না চুম্বন।
অভিশপ্ত গাছটি এখন নেই ,
কাঠুরের ধারালো করাত তাকে মৃত্যদন্ড দিয়েছে !
শুধু জ্যোত্‍স্না রাত গুলোয়
বাতাসে অতৃপ্ত অশরীরির কান্না ঢেউ ভাঙে নিথর জলে ,
ঝরাপাতায় আলতো নুপুর
নাকি পুরোটাই কল্পনা ?
কবি বল না গল্পটা ।
কবি সেই গল্পটা আর বলতে পারে না ,
যতবার বলতে চেয়েছে পুরো গল্পটা . . . .
সে পারে নি পুরোপুরি সত্‍ হতে ,
কিভাবে বলবে সে ই ,সে নৃশংস কাল হাত !
কবিতার খোঁজে অবোধ কিশোরীর মধুচাক ভেঙে ,
অবলীলায় পান করেছিল সুধা রাশি ।
অতঃপর ,ঘর ছেড়ে ছুটেছিল আরো নতুন কবিতার খোঁজে ,
ছুটে চলা থামেনি কবির
ফুল আর ভ্রমরের অভিসারে
নিমগ্ন থেকে ভাষার খেলায়,
অবশেষে , যেদিন থেমেছিল ।
পিছুটান ফিরিয়ে দিয়েছিল
সেই নির্জন পুকুর ঘাটের চাঁদের আলো ।
ফিকে হয়ে যাওয়া চেনামুখ ,
প্রথম শিল্পভাঙার যজ্ঞ !
ততদিনে শানের উপর জমেছে পিচ্ছিল শেওলা !
খসে পড়েছে চাঁদ অভিশাপ হয়ে
পাগল করা জ্যোত্‍স্না ফুটিয়েছে
মৌমাছির হুল ।
কবি কিভাবে বলবে
কিছু পাপ ক্ষমা করে না কোনদিনও ,
জীবনের ঘরে কিছু মৃত্যু রেখে যায় ।
শশ্মানের চেলা কাঠ আর কতখানি পোড়ায় শরীর ?
হৃদয়ের অঙ্গার তার চেয়েও
পোড়ায় ঢের ।
মিরপুর ,
২৭ মে ২০১৪,
বিকাল ৪টা ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।