মনের ভ্রান্তি অভিমান
- প্রবীর রায় - ছোট গল্প ২০-০৫-২০২৪

আমার বাড়িতে দুইটি বিড়াল আর একটি কুকুর ছানা আছে।বিড়াল শাবক দুটিকে পাশের বাড়ির বন্ধু অমিত এর বাড়ি থেকে এনেছি আর কুকুর ছানাটিকে পাড়ার অনিল কাকুর বাড়ি থেকে এনেছি।বিড়াল ছানাদের মধ্যে একটি ছিল ছেলে ও একটি মেয়ে আর কুকুর ছানাটি ছিল ছেলে।যত- দিন অতিবাহিত হল তাদের মধ্যে স্নেহ
-প্রেম-ভালোবাসা বেড়ে গেল, সম্পর্ক দাঁড়ালো বন্ধুত্বে।
একে অপরকে নিয়ে খুব হাসাহাসি-ঠাট্টা ও মজা করে।বিড়াল দুটি শুধু ভাত অর্থাৎ সাদা ভাত খায় আর কুকুর ছানাটি বারোয়ারি খাবার খায়(মানে -যা দেওয়া যায় তাই চেটেপুটে খায়)।সেজন্য আমাদের পরিবারের কোনো খাবার নষ্ট বা অপচয় হয়না(মানে-টাকাপয়সা জলে যায়না)।তারা তিনজনে দিনেদিনে বড় হয়ে উঠলো আর আমাকে ভালোভাবে চিনতেও শিখলো।তাদের আমি ভীষণ ভালবাসতাম এবং তারাও আমায় ভীষণ ভালবাসতো।এক মুহূর্ত যদি আমি তাদের চোখের আড়াল হই তাহলে তারা খাবার ছেড়ে আমার আশায় পথ চেয়ে বসে থাকতো।এইভাবে সুখে- স্বাচ্ছন্দ্যে বছর বারো,তেরো কেটে গেলো।হঠাৎ একদিন খাবার নিয়ে বিড়াল ছানাদের সহিত কুকুর ছানাটির ভীষণ রাগারাগি, বিড়াল যেহেতু আকারে ছোট -কুকুরটি বলবান হওয়াই ছেলে বিড়ালটিকে কামড়ে ক্ষত করে দিলো।ঘটনাটা আমি জানতাম না, বা আমার পরিবারের কেউই জানতনা,নিজেদের মধ্যে গোপন রেখেছে।তাছাড়া তারা
ঘটনাটা বলবে কি করে,তারাতো অবোলা জীব।তাদের কথা বলার বরদান ঈশ্বর তাদের দেয়নি।সেই ঘটনার দরুণ ক্ষত বিড়ালটি দিনেদিনে রোগা হতে চলেছে এবং খাওয়ার রুচি হারিয়েছে।আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম,কিছু বুঝে উঠতে পারলামনা।ছানাটি চিন্তা করে আর দুঃস্বপ্ন দেখে,কখনো-কখনো কাঁদে,ভাবে দোষ করলো কুকুর সাথীটি আবার সেই আমায় কামড়ে দিলো।আমিও কাজের চাপে ওদের ওপর নজর রাখতে পারিনি,পরিবারের লোকজন অবশ্য ডাক্তার দেখিয়েছিলো।কিন্তু হঠাৎ একদিন অসুস্থ বিড়ালটি প্রাণ ত্যাগ করলো,তাতে মেয়ে বিড়ালটি অঝোরে কাঁদতে থাকলো।কুকুরটি রাগে ও অভিমানে এক ফোঁটাও অশ্রু ঝরালোনা,বরং সে আনন্দিত হল।আমি জানতে পেরে কাজ ছেড়ে বাড়ি এলাম এবং বিড়ালটির সৎক্রিয়ার ব্যবস্থা করলাম।এই ঘটনার শোকে মেয়ে বিড়ালটি ঠিক সাত দিন পরে জীবন বিসর্জন দিল।প্রাণ ত্যাগের কিছু সময় আগে বিড়ালটি সাথী কুকুরকে তার ভুল ভাঙিয়ে (অর্থাৎ-গণ্ডগোলের কারণটাকে বলে )দিয়েছিলো।ঠিক তার পরেই কুকুর ছানাটি নিজের ভুল বোঝার চেষ্টা করলো।কুকুরটি বুঝতে পারলো শেষ পর্যন্ত যে দোষটি তার-ই ছিলো,শুধুশুধু সে সাথীটিকে মৃত্যুর দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো এবং রাগ ও অভিমান করেছিলো।এখন কুকুরটি অনুতাপে নিজেকে একজন ছোট মনের সাথী ও স্বার্থপর বন্ধু ভাবছে।আমি ইতি মধ্যে মেয়ে বিড়ালটির ও সৎক্রিয়ার ব্যবস্থা করলাম।এই ঘটনার জন্য আমার এবং আমার পরিবারের সকলের মন খারাপ হয়ে গেল।রাত্রে যখন আমরা সকলে একসঙ্গে বসে বিড়াল দুটি মরার আলোচনা করছিলাম ঠিক তখনি কুকুরটি কাঁদতে কাঁদতে আমাদের মাঝে এসে বসে,সব ঘটনা আকার-ইঙ্গিতে বোঝালো।আমরা সব শুনে কেঁদে ফেললাম কারণ যদি জানতাম যে ছেলে বিড়ালটকে কুকুর ছানাটি কামড়েছে তাহলে আরো আগে চিকিৎসা করাতাম,হয়তো সে ভালো হয়ে যেত।এখন না জেনে পস্তাচ্ছি ও অনুতাপ করছি,আর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি যেন ছানা দুটি যেখানেই পুনর্জন্ম নিক তারা যেন হেসেখেলে থাকে।তারপর কিছুদিন অতিবাহিত হলে দেখি যে কুকুর ছানাটি মনমরা হয়ে বসে থাকে ও (যখনি ঘটনাটা স্মরণে আসে)কাঁদতে থাকে।তার দুঃখ দেখে আমি আবার দুটি বিড়ালছানা আনলাম,তা দেখে কুকুরটি আনন্দে মেতে ওঠে একবার আমার দিকে চেয়ে বিড়াল শাবক দুটিকে জড়িয়ে ধরে ও স্নেহ চুম্বন দেয়।তারপর থেকে সকলে মিলেমিশে একসাথে আমাদের সাথে জীবন কাটাতে লাগলো.....................।।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।