প্রতীক্ষার সাতকাহন
- সোহরাব হোসেন - বেলা অবেলা ২৫-০৪-২০২৪

আলেয়ার প্রলোভনে আলোকিত হৃদয়,
ধেয়ে থাকা নিশি কালো অন্ধকার বলয়—
ঘিরে থাকে আলোকের চারপাশ।
কিছুতেই হয় না যে স্ফুরণ; বর্ণালীর উদ্ভাস।

আশা ছিলো ভালোবেসে যাব শুধু একজনকে,
যাকে নিয়ে সুখে-দুঃখে মুখরিত জীবনের স্বপ্ন এঁকে—
সুভাসিত স্নিগ্ধতায় কেটে যাবে অপেক্ষার প্রতিক্ষণ;
আলোকিত প্রেম এসে করে যাবে হৃদয়ের উন্মোচন।

শুরুতেই নিবেদন ছিলো বড় আনাড়ি বয়সে,
সপ্রতিভ সাড়া দিলো সেইজন মনের হরষে।
কচি মনে পারিনিতো হতে তার হৃদয় আরতি,
বিধি বাম! সেসময় ছিলো তার শরীরের মতি।
হতভম্ব হয়ে শেষে অসহায় নিশ্চুপ প্রস্থান,
চাইনি তো অপবাদে ভালবাসা হয়ে যাক ম্লান।

দিন যায়, মাস যায়, কেটে যায় বছর—
বসন্ত ক'টা গেলো, কে নিয়েছে খবর?
স্রোতে টানে গরগর, গড়িয়েছে কতো নদী জল!
বালিকার আঁখি জুড়ে মুগ্ধতা বাড়ে অনর্গল।
ভুলে গিয়ে পরাজিত হৃদয়ের শোকের মাতম,
অশরীরী প্রণয়ের টানে ফেলি দ্বিতীয় কদম।
বড় বেশি ভীত হতো! দাঁড়াতাম সামনে যখন—
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেতো লাজে তার আনাড়ি মন।
থাক নয় সেসময়, থাকে যেন সে প্রতীক্ষায়,
সামর্থ্যের সবটুকু বিলিয়েছি আশায় আশায়।
সেতো কথা দিয়েছিল, দেয়নিও; অসহ্য ধোঁয়াশা—
ক্ষণে ক্ষণে অপমানে উবে গেছে মনের প্রত্যাশা।

দিন যায়, মাস যায়, কেটে যায় বছর—
যেনতেন কেটে যায় এলেবেলে প্রহর।
কোন এক চঞ্চল কিশোরীর পাশাপাশি পথচলা—
মুহুর্তেই শতবার নিজেকে হারিয়ে ফেলা।
খুনে চোখে চোখ রাখা ছিলো বড় বিব্রতকর,
শান্তিময় দিঘিজলে টুপটাপ মোহ ঝরে ঝরঝর।
চাপল্যের আবডালে খুঁজে কী যে কিশোরী মানস!
পূর্বাপর অপমান ভুলে জানা— হলোনা সাহস।

দিন যায়, মাস যায়, কেটে যায় বছর—
চলে তবু নিজেকেই খুঁজে ফেরা সফর।
কৈশোরের গ্লানি মেখে তারুণ্যে হলো পদার্পন,
দণ্ডায়মান হই রেখে সম্মুখেতে সমতল দর্পণ।
নিমেষেই পাই খোঁজ। তবু হায়! সে আমি—
হয়ে গেছি আজীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

দিন যায়, মাস যায়, কেটে যায় বছর—
ধীরে বয়; ছুটে চলা যৌবনের নহর।
পূর্বাপর সব ভুলে উৎরিয়ে সময়ের আড়াল,
কাছে এলো প্রিয়জন, সুখ ঝড়ে করে দিয়ে নাকাল।
ভুলে গিয়ে দিগ্বিদিক, কোন এক দ্বিপ্রহর বেলায়—
হৃদয়ের অর্ঘ্যখানি সঁপিলাম তারে অবলীলায়।
ভালোবেসে চিরদিন সাথী হয়ে রবে কেউ সাথে,
অবশেষে কথা দিলো হাত রেখে হাতে।
বেলা শেষে করে ভর ক্লান্তি তারে, বিধি!
হাতছানি দিয়ে ফের হারালো সে নিধি।

দিন যায়, মাস যায়, কেটে যায় বছর—
নীরবতা ভেঙে এলো প্রেমময়ী দোসর।
নিভু নিভু আলোটুকু আচানক জ্বেলে দিয়ে ফের,
প্রাণভরে অকাতরে অন্য আলো বিলিয়েছে ঢের;
শব্দহীন ভাষা ঠোঁটে, কপালের ভাঁজে—
আবেদনে পরিপূর্ণ সূক্ষ্ম কারুকাজে।
অভিনব ছিলো কতো! সেই সব দিন,
আবেগের পরিতৃপ্তি, বসন্ত রঙিন।
জীবনের জটিলতা, ভুল সমীকরণ;
নিঠুরতা সবকিছু করে নিলো হরণ।
পূর্ণপাত্র শূণ্য করে রেখে গেছে টান,
অভিযোগ, অভিমান— সবকিছু ভান।

দিন যায়, মাস যায়, কেটে যায় বছর—
বিনির্মাণে ভাঙে-গড়ে হৃদয়ের শহর।
ওরা নিধি, আসে যায়; অবসর বিহীন!
সুখে-দুঃখে রেখে যায় হৃদয়ের ঋণ।
দ্বিপ্রহর আলোকনে ঝলসানো চোখ,
সারাবেলা খুঁজে ফিরে হারানো সে মুখ।
অন্ধকার গহ্বরে ভেঙে দিয়ে ব্রত,
জীবনের চোরাবালি রেখে যায় ক্ষত।
তলানির অবশেষে কত যায় খোঁজা?
বিবাগের বিসর্জনে লুকোচুরি সোজা!
আসে যায়, আয়োজনে কেটে যায় সময়,
থিতু প্রেমে আজবধি আসেনি যে প্রণয়।

আসো কিবা নাই আসো, আছো তবু নিধি—
নিউরনে অনুরণন জাগে নিরবধি।
কোনদিন হয় যদি হৃদয়ের মতি,
গল্পটার হয় তবে এখানেই যতি।

শুক্রবার, ভাটিয়ারি
০৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ইং।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 3টি মন্তব্য এসেছে।

robinbdbuet
২৪-১১-২০১৮ ১৭:৪৭ মিঃ

সিফাত ভাই, ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন, এখানেই লিখার তৃপ্তি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।

sifatahmed
১৩-১১-২০১৮ ২২:২২ মিঃ

খুব সুন্দর কবিতা। খুব ভালো লাগলো।

robinbdbuet
১১-১১-২০১৮ ১৮:৫৭ মিঃ

বর্ণাঢ্য প্রেম এসে হৃদয় ছুঁয়ে যায় প্রতিটা মানুষের জীবনে। তবুও যেন মানুষ পরিতৃপ্ত হতে পারে না! প্রেম জিনিসটাই এরকম। তৃপ্তির সাময়িক স্রোতে অতৃপ্তির সাগরে ভাসায়। মেহমানের বেশে দরজায় কড়া নাড়ে, সাদর আতিথেয়তার স্বাদ নেয়, তারপর বাজায় বিদায় ঘন্টা। চলে যায়, পিছু ফেলে যায় মায়া। প্রেম যেন ক্ষণিকের জন্যই, থিতু হতে জানেনা! এই মোহিনী প্রেমের জন্য নিবেদিত আজকের এই গীতিকাব্য।