তবুও টিকে থাকবালে সে
- এস আই তানভী ২৮-০৩-২০২৪

প্রায় স্কুল থেকে ঘরে ফিরে দেখে-
ঘষামাজা চকচকে শূন্য ভাতের হাড়ি
ফাঁকি দিয়ে সকলের চোখ, নিজের চোখ হতে
কয়েক ফোঁটা লোনা জল মুছে ফেলে
ফুসরা উঠা স্কুল ড্রেসের শার্টটা খুলে রাখে
ঘুণে খাওয়া আলনায়- হাফ প্যান্টটা পড়নেই রেখে
একটা জীর্ণশীর্ণ হাফ হাতা ওয়ালা গেঞ্জি পড়ে
নিরবে ধীরে ধীরে চলে আসে আপন শহরের বুকে
ব্যস্ত মানুষদের মতো দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে
তার চেনা শহরের সব অলিগলিতে।।

চেনা শহরটাও বড্ড অচেনা; কোথাও কাজ জুটেনা-
ছোট বলে কেউ কাজে নেয় না; হেঁটে হেঁটে
ক্লান্ত হয়ে চলে আসে শহরের নামকরা স্কুল মাঠে
আলালের দুলালদের খেলা দেখে ক্ষুধার জ্বালা
ভুলে; নিরবে সূর্য ডুবে, সন্ধ্যাও এসে যায়-
বাড়ি যাবার ছোট পথ, ধান ক্ষেত, খোলা মাঠ
রাতের চাদর গায়ে জড়ায়, তবে শহরের বুকে
আঁধার আসে না, তার মতো বালকের কাজ
জুটে না, ক্ষুধা মেটে না, অশ্রু শূন্য চোখের কাঁন্না
কেউ দেখে না, এমন মানুষের দেখা মেলে না।

চেনা শহরের বুকে- অতন্দ্র প্রহরীর মতো টহল রত
কুকুর দলের সাথে তার কত রাত গেছে কেটে
অভাব অনটনে জর্জরিত, ক্রন্দনরত পরিবার
রোজ রাতে মায়ের প্রয়োজনীয় কিংবা অপ্রয়োজনীয়
বকাবকি সীমানা ছাড়িয়ে যায় ( মাঝে মাঝে
জননী তার মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলে)
আবেগের ভুল সাগরে ভাসতে থাকে সে, চলে আসে
শহরের বুকে, টিভি অথবা জুয়ারির জুয়া খেলা দেখে
কেটে যায় অনেক বিষণ্ণতার চকচকে রজনী
শিখে ফেলে বায়ান্ন কার্ডের খেলা, হাতে আসে
ঘনঘন ট্রিপল সাহেব অথবা শক্তিশালী টেক্কা
মুখ দিয়ে গলগল করে বের হয় সিগারেটের কালো ধোঁয়া
জ্বলন্ত ইট-ভাটার মতো তার ভেতরটাও জ্বলে অন্তহীন।।

ব্যাস, তের বছরেই ভুল পথ যাত্রীদের সাথে
হাত মিলালো, বুক মিলালো আর ভালো ভালো
বন্ধুদের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলো
এটাই কি চেয়েছিলো বিধাতা! হায়রে নিয়তি!

বহুদিন এভাবে চলেছে, জুয়ার টাকায় নাস্তা কিনে
ভোর আলোতে ঘরে ফিরেছে, পাঁচ দশ টাকা
দিয়েছে সংসারে বেলা অবেলায়, চাল-নুন-তেল
তরকারি আর ঔষধ, ছোট ভাই-বোনের বই-খাতার
ঘাটতি মেটাতো এভাবেই- কেউ প্রশ্ন করে নি
তার এই টাকা আসে কোথা থেকে?

তার আরেক নেশা ছিলো- বই এবং বই পড়া
নিজে একটু শিক্ষা লাভের আশায় শহরের দোকানগুলোর
বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বলা বারান্দায় কিংবা কারো বাড়ির হতে
জানালা দিয়ে আসা আলোতে বসে চোরের মতো
বই পড়ে, মালিকের ধমক খায়- তবুও বই পড়া
ছাড়ে নি সে, স্কুলেও যায় মাঝে মাঝে---।

ধীরে ধীরে মন্দের সাগরে ডুবে যায় সবার আড়ালে
কিন্তু কতদিন এভাবে জীবন বাঁচে? হটাৎ
একদিন বুঝতে পারে- বাবার আয়ে সংসার বাঁচানো
যাবে না আর সে'ও নষ্ট হয়ে গেলেও কেউ দায় নিবে না---
সৎ পথে রোজগারের প্রতিজ্ঞা করে তার শহরের বুকে
ক্লাস নাইনের বই ছুড়ে ফেলে টেম্পুগাড়ির পিছনে
দাঁড়িয়ে হেল্পারদের কাজ নেয়----
কিছুদিন পর গাড়ি চালা শেখে নিজেই ড্রাইভার
এতে যা পায় তা দিয়েও সংসার চলে না
এরপর ওয়ার্কশপে কাজ শেখে, হাতুরি দিয়ে
বড় বড় লোহা পেটায়, ওয়েল্ডিং এর কাজ শেখে
খুব অল্প সময়ে লেদ মেশিন চালানোটাও রপ্ত করে ফেলে
বেতের চেয়ার বুনে রাতভর- সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে

বছর দুয়েক পড়ে আবার বই হাতে নেয়, তার
চেনা শহরের নামকরা স্কুলে আসতে লাগে, স্কুলের
সনদটা হাতে নিয়ে কলেজে আসে- এখানেও সফল
এবার ডিগ্রী সনদটা নিয়েই তবে শান্ত হবে---
আর এসবের যত রসদ লাগে নিজেই কাজ করে জোগায়।

চেনা শহরের বুকে এখন সে ছাত্র পড়ায়
হেঁটে যায় নামকরা মানুষদের সাথে পাশাপাশি
বন্ধুদের সাথে আবার আড্ডায় মেতে উঠে প্রায়
প্রতিদিন কাজ করে, গল্প-কবিতা লিখে গোপনে
বুকের কোণে, চোখের কোণে দুঃখ, আশা-নিরাশা
লুকিয়ে রাখে শহরের বুকে টিকে থাকার জন্য।।

জীবনটা তার কোন দিকে যাবে জানে না
তবে ভবিষ্যতের প্রতিটি মুহূর্ত ভরে আছে বহু
ঝড়- ঝন্টা, কণ্টকাকীর্ণ, যন্ত্রণাময় নীল রসে, তবুও
শেষ দম অবধি ঢাল তলোয়ার বিহীন শূন্য দুহাতে
যুদ্ধ করে যাবে, অন্যায়, অপকর্ম আর
অশ্লীলতা কে দূরে ঠেলে প্রতিবাদী কণ্ঠ দীপ্ত রেখে
সৎ পথে চলে তার চির চেনা শহরের বুকে
মাথা উঁচু করেই চলবে, স্বপ্ন দেখবে, নতুন করে
আবার ইচ্ছেগুলো কে পুনর্জীবিত করে বেঁচে থাকবে।
____________
০২/১১/০৭ইং

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

Tanvi
২৪-০৯-২০১৯ ১৪:৫৬ মিঃ

জীবনের গল্প